বেনাপোল কাস্টমসের আকস্মিক সিদ্ধান্তে স্থবির আমদানি–রপ্তানি
বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:৪১ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বেনাপোল স্থলবন্দরে কাস্টমস কমিশনারের আকস্মিক সিদ্ধান্তের কারণে সন্ধ্যা ছয়টার পর সব ধরনের আমদানি–রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়ায় ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকরা চরম বিপাকে পড়েছেন। কোনো পূর্ব ঘোষণা বা প্রস্তুতি ছাড়াই গত সপ্তাহে এই নির্দেশ জারি হওয়ায় দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোলে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশের বেনাপোল ও ভারতের
পেট্রাপোল সীমান্তে পণ্যবাহী ট্রাকের দীর্ঘ সারি জমেছে। হঠাৎ এ সিদ্ধান্তের ফলে
দুই সীমান্তে আটকা পড়েছে দেড় হাজারেরও বেশি ট্রাক, যেগুলোর মধ্যে রয়েছে ফল,
সবজি, মাছ, রাসায়নিক কাঁচামাল ও কসমেটিকসসহ দ্রুত পচনশীল পণ্য। এসব পণ্যের অনেকই
নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
বেনাপোল বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, পূর্বে
এই বন্দরে প্রতিদিন গড়ে ৪শ থেকে ৪শ ৫০টি ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করতো। কিন্তু এখন
তা নেমে এসেছে ১শ ৮০ থেকে ২শটিতে। আমদানি–রপ্তানিকারক সমিতির হিসাব অনুযায়ী,
প্রতিদিন ১শ থেকে ১শ ৫০ কোটি টাকার পণ্য খালাস আটকে যাচ্ছে। ফলে ব্যবসায়ীরা বড়
আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন, আর সরকারেরও প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি
হচ্ছে।
বেনাপোল সি অ্যান্ড এফ অ্যাসোসিয়েশনের
সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক লতা বলেন, পূর্ব ঘোষণা ছাড়া সন্ধ্যার পর বন্দরের
কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ায় আমরা হতবাক। শত শত ট্রাক দুই পাশে আটকে আছে, ব্যবসায়ীরা
কোটি কোটি টাকার ক্ষতির মুখে। এভাবে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে ব্যবসায়ীরা
বাধ্য হয়ে বিকল্প হিসেবে হিলি বা সোনামসজিদ বন্দরে চলে যাবে। এতে সরকারের রাজস্ব
আদায়েও বড় ধরনের ধাক্কা পড়বে।
ভারতের পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট
স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, বাংলাদেশের
এই একতরফা সিদ্ধান্তে ভারতীয় ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। দুই দেশের বাণিজ্য
বিশ্বাসের সংকটে পড়েছে।
বেনাপোল বন্দর পরিচালক শামীম হোসেন
বলেন, আমরা বন্দর পরিচালনা করি; কাস্টমসের সিদ্ধান্ত ছাড়া কোনো পণ্য ক্লিয়ার করা
সম্ভব নয়। তবে এমন আকস্মিক পরিবর্তনের প্রভাব ব্যাপক, রাজস্ব ও ব্যবসা উভয়ই
ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
কাস্টমস কমিশনার খালিদ মো. আবু
হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে কাস্টমসের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক
সমন্বয়ের কারণে সাময়িকভাবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দ্রæত
সমাধান করা হবে।
তথ্য মতে, ২০১৭ সালের ১ আগস্ট
বাংলাদেশ ও ভারতের পক্ষ থেকে বেনাপোল–পেট্রাপোল ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট (আইসিপি) ২৪
ঘণ্টা খোলার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। এরপর ২০২৪ সালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)
দেশের সব কাস্টমস হাউসকে ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার নির্দেশ দেয়, যাতে সরবরাহ শৃঙ্খলা
স্বাভাবিক থাকে। তবে বেনাপোলে সেই নির্দেশনা কার্যকর হয়নি।
ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করছেন, বেনাপোল
বন্দর ও কাস্টমসের কার্যক্রম সমন্বয়ের অভাবে বারবার প্রশাসনিক জটিলতা তৈরি হচ্ছে।
প্রতিদিন গড়ে ২শ থেকে ২শ ৫০ কোটি টাকার পণ্য এই বন্দর দিয়ে আমদানি–রপ্তানি হয়।
কিন্তু আকস্মিক সময়সীমা কমানোর ফলে বড় ধরনের স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
ব্যবসায়ীরা দ্রুত সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে ২৪ ঘণ্টা কার্যক্রম চালুর দাবি
তুলেছেন। তারা আশা করছেন, দুই দেশের যৌথ আলোচনার মাধ্যমে বেনাপোল–পেট্রাপোল
সীমান্তে বাণিজ্য আবারও স্বাভাবিক হবে।
আমদানি ও রপ্তানি কারক সমিতির সভাপতি মতিউর
রহমান বলেন, সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত
ছিল। কিন্তু তা না করে একতরফাভাবে সময়সীমা কমানো হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন
ব্যবসায়ী, কর্মচারী, এমনকি সরকারও। আমরা কাস্টমস কমিশনারের সঙ্গে আলোচনা করে
সমাধানের চেষ্টা করছি। প্রতিদিন অন্তত চারশো থেকে পাঁচশো আমদানি মুখি ট্রাক প্রবেশ
করতে পারবে।
