Logo
Logo
×

সারাদেশ

সংঘর্ষে পুরুষের সঙ্গে নারীরাও মাঠে

Icon

মো. সোহরাব হোসেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:৩৫ পিএম

সংঘর্ষে পুরুষের সঙ্গে নারীরাও মাঠে

সংঘর্ষে পুরুষের সঙ্গে নারীরাও মাঠে

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের বিরামপুর গ্রামে শনিবার (২৫ অক্টোবর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে ভয়াবহ সংঘর্ষ। এ সংঘর্ষে নারীরাও সরাসরি অংশ নেন— কেউ ইটপাটকেল ছুড়েছেন, কেউ আহতদের পানি খাইয়েছেন, আবার কেউ পুরুষদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আক্রমণ চালিয়েছেন।

সংঘর্ষের এসব দৃশ্যের ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায়, যা এখন স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিরামপুর গ্রামের হারুন মিয়া ও সাচ্চু মিয়া পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ববিরোধ চলে আসছিল। সম্প্রতি জুয়া খেলার ২০০ টাকা নিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়, যা সামাজিকভাবে মীমাংসা করা হয়েছিল।

কিন্তু শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) রাতে প্রয়াত হাসিম মিয়ার শতবর্ষী স্ত্রী বিবি বেগম মারা গেলে মায়ের দাফনকে কেন্দ্র করে দুইপক্ষের মধ্যে আবারও উত্তেজনা দেখা দেয়।

শনিবার সকালে ওই বিরোধ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয়। দুইপক্ষের শতাধিক মানুষ দেশীয় অস্ত্র, লাঠিসোটা, দা, কাঁচি, ক্রিকেট প্যাড এমনকি হেলমেট পরে সংঘর্ষে অংশ নেয়। এ সময় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

জানা গেছে, সংঘর্ষের সময় গায়ে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেটসদৃশ পোশাক, মাথায় হেলমেট, পায়ে ক্রিকেট প্যাড পরে দা হাতে একদল যুবক এগিয়ে যায়। কেউ ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়, কেউ ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে, আবার কেউ ঘরবাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।

এ সময় কিছু নারীকে সংঘর্ষরত পুরুষদের পাশে থেকে পানি দিতে, আবার কাউকে নিজ হাতে ইটপাটকেল ছুড়তে দেখা যায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওগুলোতে এ ধরনের একাধিক দৃশ্য দেখা যায়। অনেকে মন্তব্য করেছেন—‘এ যেন সিনেমার দৃশ্য!’

এই সহিংসতায় সাচ্চু মিয়া পক্ষের নাসির উদ্দিন (৬৫) নামের এক বৃদ্ধ নিহত হন। আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন। সংঘর্ষের পর এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে বহু মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেন। কয়েকটি বাড়িঘরেও লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি নূরুল ইসলাম বলেন, আমরা এমন সংঘর্ষ জীবনে দেখিনি। নারী-পুরুষ সবাই একসাথে লড়ছে—এ যেন এক অমানবিক দৃশ্য।

এদিকে সচেতন মহল প্রশাসনের কাছে সংঘর্ষের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে। তারা বলেন, নিয়মিত টহল ও নজরদারি বাড়ানো হলে এমন সহিংসতা রোধ করা সম্ভব।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আজহারুল ইসলাম বলেন, পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নিহতের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে এবং কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম