পদ্মার চরে গুলিতে নিহত নাজমুলের স্ত্রীর আহাজারি
‘আমার ছোট ছোট দুই মেয়ে নিয়ে এখন কোথায় যাব’
বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৫৪ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
‘আমার ছোট ছোট দুই মেয়ে। তাদের নিয়ে আমি এখন কোথায় যাব। তাদের কিভাবে বড় করব। তাদের কী খাওয়াব। ছোট দুই মেয়েকে নিয়ে আমি অথৈ সাগরে পড়ে গেলাম।’
এমনভাবে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন নিহত নাজমুলের স্ত্রী শারমিন বেগম। তিনি ঠিকমতো কথা বলতে পারছেন না। শুধু ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করছেন।
নিহত নাজমুলের দুই মেয়ে। একজনের নাম জান্নাতি (৩) ও জামেলা খাতুন (২)।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সকালে নিহত নাজমুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল স্ত্রী শারমিন বেগম সন্তানকে জড়িয়ে আহাজারি করছেন। পাশে স্বজনরাও কান্না করছেন।
নাজমুলের বাড়ির পাশের জুয়েলের মুদির দোকানের বাঁশের মাচায় বসে নিজেদের মধ্যে কথা বলাবলি করছেন স্থানীয়রা। তার একটু দূরে নিহত আমান মণ্ডলের বাড়ি। সেই বাড়ি থেকেও আসছে কান্নার শব্দ। জুয়েলের মুদির দোকানে কথা হয় জলিল সরদারের ছেলে মিঠু সরদারের সঙ্গে। তিনি সোমবার (২৭ অক্টোবর) চরে গোলাগুলির সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন।
গোলাগুলির মুহূর্ত বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন- ‘তখন ১১টা থেকে সোয়া ১১টা হবে। কাঁকন বাহিনী স্পিডবোটে করে আসে। স্পিডবোট থেকেই অতর্কিতভাবে গুলি করতে শুরু করে। ওরা গুলি করছে, আমরা গুলির ভয়ে শুয়ে আছি। তারা ৮ জন ছিলেন; কিছু না হলেও দুই ঘণ্টা গুলি করেছে। তারা দুইটি স্পিডবোটে এসেছিল। একটা নামিয়ে দিয়ে চলে যায়। পরে ফিরে আসে। আমাদের কাছে অস্ত্র নাই, মেশিন নাই, ঢাল নাই।’
তিনি আরও বলেন, যখন তারা গুলি চালাচ্ছিল তখন আমি শুয়ে পড়ি। তাদের ৮ জনের হাতে অস্ত্র ছিল। তিনজনকে আমি চিনেছি- চাকলাইয়ের ময়না, সাগর, ফিলিপনগরের বুরবক। ওদের কাছে বড় বড় অস্ত্র। মোবাইল বের করতে পারিনি। কী করে ফোন করব। জান বাঁচানি ফরজ কাজ। আমরা তো সাধারণ লোক। আমরা মাঠ দেখতে গিয়েছি। আমারে এই মাঠে দেড়শ বিঘা জমি আছে। জোর করি খড় কেটে নেয় কাঁকন বাহিনীর লোকজনেরা।
এ সময় স্থানীয়রা জানান, ১৭ বছর আগে হবির চরে চরের নীচ খানপুর এলাকায় ৩০ থেকে ৩৫ পরিবার বসবাস করত। নদী ভাঙনের কারণে তারা ভিটাছাড়া হয়ে যায়। এরপর তারা রাজশাহীর বাঘা উপজেলার গড়গড়ি ইউনিয়নের চর নীচ খানপুর এলাকায় বসবাস শুরু করেন। তাদের দাবি-তাদের ওই চরে প্রায় ৯০০ থেকে ১ হাজার বিঘা জমি রয়েছে। সেগুলোর দলিলও তাদের বাবা-দাদার নামে রয়েছে। তারা সেখানে বিভিন্ন চাষাবাদ করে আসছিল। বিগত কয়েক বছর ধরে কাঁকন বাহিনীর লোকজনের কারণে জমির ফসল নিয়ে আসতে পারে না। ঘটনাস্থলে পুলিশের বড় বড় কর্মকর্তারা যাবেন। তাই তারা সকাল ১০টার দিকে ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
জানা গেছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিহত আমান মণ্ডল ও নাজমুল হোসেনের মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। এ সময় আহাজারিতে ভেঙে পড়েন স্বজনরা। পরে তাদের স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়। এর আগে নিহত আমান ও নাজমুলের মরদেহ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। আর কুষ্টিয়ার দৌলতপুর পাওয়া লিটনের মরদেহ কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।
