অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে ভোলায় সুপারির বাম্পার ফলন
নীল রতন, বোরহানউদ্দিন থেকে
প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৩০ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে এবার ভোলায় সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে। গ্রামীণ অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে সুপারি। নদী-সাগরবেষ্টিত ভোলায় এক দিকে যেমন রুপালি ইলিশ দ্বীপবাসীর অর্থনীতির একটা বড় সহায়ক, এবার সুপারির বাম্পার ফলনেও নতুন করে শক্ত মজবুত ও টেকসই অর্থনীতির স্বপ্ন দেখছেন এলাকাবাসী।
বোরহানউদ্দিন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ গোবিন্দ মন্ডলের মতে- উপকূলীয় জেলাটিতে প্রায় সময়ই জোয়ার ভাটায় পানি লোকালয়সহ বাগানাগুলোতে প্রবেশ করার ফলে পলি জমে মাটির উর্বরতা কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ায় সুপারিসহ সকল ফসলই ভালো জন্মে ।
তাছাড়া ভোলার কৃষকরা নিয়মিত কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে ফসলের পরিচর্যা করার ফলে ফসলের রোগবালাই কাটিয়ে অধিক ফলন ঘরে তুলতে পারছে।
জেলার সাতটি উপজেলায় ধান, পান, তরমুজ, বাঙ্গি, শাকসবজির পাশাপাশি বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামে গ্রামে চোঁখে পড়ে বিশাল সুপারি বাগান । কোন কোন এলাকায় আবার রাস্তার দুই পাশে, বাড়ির আঙিনা, বাগানবাড়ি ও পতিত জমিতে সারি সারিভাবে লাগানো হয়েছে সুপারি গাছ ।
এলাকাবাসীর মতে- সুপারি গাছের চারা একবার রোপণ করলে দীর্ঘদিন ফলন পাওয়া যায়। তুলনামূলকভাবে কম পরিশ্রম ও কম খরচে অন্যান্য ফসলের তুলনায় বেশি লাভ হওয়ায় দিন দিন সুপারি চাষের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে উপকূলবাসীর। তবে এবার বাজারে সুপারি বেশি তোলায় কাঙ্ক্ষিত দাম পাচ্ছেনা বলে জানান একাধিক বাগান মালিক।
তারা জানান, যেখানে গত বছর (১বি) ১৬০ গন্ডা সুপারির দাম ছিল ৮শ থেকে ১ হাজার টাকা; এবার সেটা বিক্রি হচ্ছে ৪ থেকে ৫শ টাকায় । দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভোলার সুপারির চাহিদা অনেক বেশি। প্রতিদিন শত শত ট্রাকবোঝাই সুপারি যাচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, রংপুর ও কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। মৌসুমের শুরু থেকে জেলার ৭টি উপজেলার ছোট বড় বাজার গুলোর আরৎদারের মাধ্যমে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে সুপারি বেচা কেনা।
ভোলা সদরের ইলিশা হাট, জংশন বাজার, তুলাতুলি বাজার, পরীরহাট, কলপাড় বাজার, বোরহানউদ্দিন উপজেলার সিকদার হাট বাজার, বোরহানগঞ্জ বাজার, মনিরাম বাজার, কুঞ্জের হাট বাজার, লালমোহন উপজেলার গজারিয়া, কর্তারহাট, লর্ডহাডিঞ্জ, নাজিরপুর, মঙ্গলসিকদার, চতলা, রায়চাঁদ, ডাওরী, তজুমদ্দিন উপজেলার তজুমদ্দিন সদর, চাঁদপুর বাজার, সোনাপুর বাজার, খাসেরহাট, গুরিন্ধা বাজার, চরফ্যাশন উপজেলার দুলারহাট, চেয়ারম্যান বাজার, দক্ষিণ আইচা বাজার, নীলকমল বাজার, পাঁচকপাট বাজার, মাইনকা বাজার, ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
বোরহানউদ্দিন উপজেলার টবগী ইউনিয়নের বড় সুপারি চাষি বাবু নিখিল চন্দ্র জানান, এবার তার চার একর বাগানে লক্ষাধিক সুপারির ফলন হয়েছে। গাছে গাছে আগের তুলনায় দ্বিগুণ সুপারি ধরায় গত বছরের তুলনায় সুপারির সাইজ কিছুটা ছোট এবং আগের বছরের প্রায় অর্ধেক দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তারপরও ফলন বেশি হওয়ায় তারা খুশি।
বোরহানউদ্দিন পৌর বাজারের আড়তদার শিশির চন্দ্র পাল জানান, জেলায় প্রায় ৩০০টি সুপারির আড়ত রয়েছে। প্রতি বছর আশ্বিন, কার্তিক ও অগ্রহায়ণ এই তিন মাস মূলত সুপারি বেচাকেনা হয়। বাগান থেকে চাষিরা পাকা সুপারি বাজারে এনে বিক্রি করেন। আড়ৎদাররা সুপারি কেনার পর পাকা সুপারিকে চালান করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এ ছাড়াও সুপারি ভিজিয়ে এবং শুকিয়ে পরে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। বোরহানউদ্দিনেই দৈনিক অন্তত ৫০-৬০ লাখ টাকার মতো সুপারি বেচাকেনা হয়।
সুপারি চাষি মো. মহসিন সিকদার বলেন, এ বছর সুপারির ফলন বেশি হওয়ায় দাম গত বছরের চেয়ে কিছুটা কম। তবে ফলন বেশি হওয়ায় চাষিরা কাঙ্ক্ষিত লাভের মুখ দেখছেন। বর্তমানে আকারভেদে ১বি (৩২০ পিস) ৫০০ টাকা, মাঝারি ৪৫০ টাকা, ছোটোগুলো ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ভোলা জেলার উপ-পরিচালক মো. খায়রুল ইসলাম মল্লিক বলেন, এ বছর জেলায় বাগান আকারে সুপারি চাষ করা হয়েছে প্রায় ১২ হাজার হেক্টর জমিতে। তবে এর বাইরেও কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে সুপারির আবাদ হয়। এ বছর প্রচুর সুপারির ফলন হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর দুই থেকে তিনগুণ বেশি সুপারির উৎপাদন হয়েছে। এবার সুপারিতে পোকার আক্রমণও নেই। অনুকূল আবহাওয়া থাকায় এ অঞ্চলে সুপারির ফলন অত্যধিক ভালো হয়েছে। ভবিষ্যতে এ অঞ্চলের সুপারি গ্রামীণ অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখবে বলে তিনি মতপ্রকাশ করেন।
