Logo
Logo
×

সারাদেশ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২

বিএনপির দুর্গে কে পাচ্ছেন ধানের শীষের টিকিট?

জামায়াতের একক প্রার্থী

Icon

জোহরুল ইসলাম জোহির, নাচোল (চাঁপাইনবাবগঞ্জ)

প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:২৬ পিএম

বিএনপির দুর্গে কে পাচ্ছেন ধানের শীষের টিকিট?

দরজায় কড়া নাড়ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বরেন্দ্রভূমি নাচোল, প্রাচীন জনপদ গোমস্তাপুর ও ভোলাহাট উপজেলাতে বইছে ভোটের হাওয়া। এ তিনটি উপজেলা নিয়ে গঠিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসন। আসনটিতে চলছে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ। ব্যানার ফেস্টুনের পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারে ব্যস্ত সম্ভাব্য প্রার্থীরা।

ইতোমধ্যে বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে গত ২৭ অক্টোবর দলীয়ভাবে ডাক পান বিএনপির সাবেক এমপি আমিনুল ইসলাম, মহিলা দলের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাসউদা আফরোজ হক শুচি, নাচোল উপজেলা বিএনপির সভাপতি এম মজিদুল হক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম তুহিন, গোমস্তাপুর উপজেলা বিএনপি সাবেক সাধারণ সম্পাদক তারিক আহমদ।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের একত্রে কাজ করার কঠোর নির্দেশসহ নানান বার্তা দেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনটিতে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে মাঠে গণসংযোগ করছেন- জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সৈয়দা আশিফা আশরাফি পাপিয়া, গোমস্তাপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফ আলী (আলিম), গোমস্তাপুর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সেন্টু, বুয়েটের আহসান উল্লাহ হলের সাবেক ভিপি মু. ইমদাদুল হক মাসুদ, সাবেক শিল্প ও বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত সৈয়দ মঞ্জুর হোসেনের ভাতিজা সৈয়দ আতাউর হোসেন মিলন ও বিএনপি নেতা এনায়েত করিম তোকি, বিএনপি নেতা আসাদুল্লাহ হক এবং বিশিষ্ট আইনজীবী ও সমাজ সেবক ড. এস এ অপু।

চায়ের স্টলে, বাজারে এখন জোরেশোরে একটাই আলোচনা চলছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে কে পাচ্ছেন ধানের শীষের টিকিট।

জানা যায়, ১৯৯১ সাল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সব নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থীকে বিজয়ী করে জাতীয় সংসদে পাঠিয়েছেন এ আসনের ভোটাররা। এ আসনটিতে ভোটের মাঠে আধিপত্য কেবল বিএনপিরই।

পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত এ আসনে পরপর তিনবার সংসদ সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হন বিএনপি নেতা সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন। প্রয়াত মঞ্জুর হোসেন শিল্প ও বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। ২০০৮ সালের ভোট ও ২০১৪ সালে বিনা ভোটে আওয়ামী লীগ এ আসনে বিজয়ী হয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আবার বিএনপির দখলে যায় এই আসনটি। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীন চ্যালেঞ্জিং নির্বাচনেও আসনটিতে এমপি হন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মো. আমিনুল ইসলাম।

এ আসনের নির্বাচনি মাঠের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে থেকেও বিএনপি নজিরবিহীন সংকটে পড়েছে। দলটির বড় সমস্যা দলের নেতাদের মধ্যে অনৈক্য। দলের মনোনয়ন ঘিরে তৈরি হয়েছে তীব্র কোন্দল, যা তৃণমূলকে বিভক্ত ও হতাশ করছে।

বিএনপির এমন নির্বাচনকেন্দ্রিক অন্তর্কোন্দল সুসংগঠিত দল জামায়াতে ইসলামীর জন্য একটি বড় সুযোগ হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে বিএনপির অগোছালো পরিস্থিতির সম্পূর্ণ বিপরীতে জামায়াতে ইসলামী অত্যন্ত গোছানোভাবে প্রচার চালাচ্ছে। অনেক আগেই এ আসনে জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি ড. মু. মিজানুর রহমানকে প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করেছে দলটি। জামায়াতের নেতাকর্মীরা দলীয় ও সামাজিক কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিটি এলাকায় নিজেদের সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করছে। বিএনপির কোন্দলকে কাজে লাগিয়ে তারা ভোটারদের নিজেদের দিকে টানতে পারে বলে ধারণা করছেন দলটির সমর্থকরা।

সাবেক এমপি আমিনুল ইসলাম বলেন, কেন্দ্র আমাদের ২৭ অক্টোবর ডেকেছিল। সবাইকে একযোগে কাজ করতে বলেছে। তিনি মনোনয়নের ব্যাপারে আশাবাদী।

মাসউদা আফরোজ হক সুচি বলেন, তিন উপজেলায় দলের নির্যাতিত, মামলা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের পাশে থেকে ফ্যাসিস্ট সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিলাম। স্থানীয় তৃণমূল বিএনপি ও কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি। এ কারণে দল অবশ্যই আমাকে বিবেচনা করবে। আমি মনোনয়ন পেলে বিপুল ভোটে বিজয় লাভ করব।

বিএনপির আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী আশরাফ আলী (আলিম) বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলে বিএনপিকে সুসংগঠিত করে রেখেছি। নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের ৩১ দফা নিয়ে মাঠে কাজ করছি। বিএনপির মনোনয়ন পেলে আসনটিতে বিজয় উপহার দিতে পারবেন তিনি।

এ বিষয়ে নাচোল উপজেলা বিএনপির সভাপতি এম মজিদুল হক বলেন, ২৭ অক্টোবর বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসন থেকে মোট পাঁচজনকে দলীয়ভাবে ডাকা হয়েছিল। আমিও সেখানে উপস্থিত ছিলাম। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন- দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষে সব নেতাকর্মীদের কাজ করতে হবে। যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে শুধু তাকেই সবুজ সংকেত বার্তা পাঠানো হবে।

এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম জাকারিয়া বলেন, এখন পর্যন্ত কাউকে নমিনেশন দেওয়া হয়নি। দলের নিয়ম অনুযায়ী মনোনয়ন পাবে। কেউ যাতে সবুজ সংকেতের কথা বলে জল ঘোলা না করে সেদিকে নজর রাখছে দল।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম