‘মোর ছোলট্যাক ওরা এংক্যা করি মারল’
মিঠাপুকুর (রংপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:২৭ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
‘মোর ছোলট্যাক ওরা ধরি নিয়্যা গেল। দুদিন ধরি ডাঙ্গাল। শেষে ছোলট্যা মোর মারা গেল। মোর ছোলট্যাক ওরা এংক্যা করি মারল’।
বিলাপ করতে করতে বলছিলেন বড়বালা ইউনিয়নের পূর্ব বড়বালা ভোলারপাতা গ্রামের চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যাকাণ্ডের শিকার সোহেল মিয়ার (২৭) মা শাহাজাদী বেগম।
নিহত সোহেল মিয়া দুই সন্তানের জনক। পেশায় ট্রাকচালক। তার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এ ঘটনায় সোহেলের বাবা আজাদুল হক ক্যাতা মিয়া ৩ জনকে আসামি করে মিঠাপুকুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার সকালে বড়বালা ইউনিয়ন পরিষদে চৌকিদার মনারুল ইসলাম বাড়িতে গিয়ে কৌশলে সোহেল মিয়াকে মোটরসাইকেলে করে বালুয়া বন্দরে নিয়ে আসেন। সেখানে একটি দোকানে চা খাওয়া অবস্থায় মিলনপুর ইউপি সদস্য আশরাফুল ইসলাম মোটরসাইকেল চোর সন্দেহে সোহেল মিয়াকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যান।
এ সময় চৌকিদার মনারুল ইসলাম ও আশরাফুল ইসলাম তাকে গোপন স্থানে নিয়ে বেধড়ক মারপিট করেন। দুই দিন আটকে রেখে তার পরিবারের কাছে চুরি হওয়া মোটরসাইকেলের ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। একপর্যায়ে সোহেল মিয়া গুরুতর আহত হলে স্থানীয় হাবিবুর রহমানের সহায়তায় তারা সোহেল মিয়ার মা-বাবাকে ১৫ হাজার টাকা নিয়ে ডাকেন।
বুধবার রাতে তারা গিয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় সোহেল মিয়াকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। এর ঘণ্টাখানেক পরে সোহেল মিয়া মৃত্যুবরণ করেন। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে নানা টালবাহানা করেন প্রভাবশালীরা। পরে বৃহস্পতিবার বিকালে খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মিঠাপুকুর থানায় নিয়ে আসে।
নিহত সোহেল মিয়ার প্রতিবেশী ও বড়বালা ইউপি সদস্য মজমুল হক বলেন, সোহেলকে কৌশলে বাড়ি থেকে নিয়ে যান চৌকিদার মনারুল ইসলাম। মিলনপুর ইউনিয়নের আশরাফুল ইসলামের ভাতিজি জামাইয়ের মোটরসাইকেল চুরির দায়ে দুই দিন আটকে তাকে বেধড়ক মারপিট করা হয়। বাড়িতে নিয়ে আসার পর সে মারা যায়।
নিহত সোহেল মিয়ার বাবা আজাদুল হক ক্যাতা মিয়া বলেন, চোরের অপবাদ দিয়ে আমার ছেলেকে দুই দিন ধরে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।
নিহতের স্ত্রী শাহনাজ বেগম বলেন, আমার স্বামীকে যারা হত্যা করেছে তাদের কঠোর শাস্তি চাই। আমার দুই সন্তান তাদের নিয়ে কিভাবে চলব?
এলাকাবাসী জানান, ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে প্রভাবশালীরা নানা টালবাহানা শুরু করেছিল। মামলা করতেও বাধা দিয়েছিল তারা। পরে নিহত সোহেল মিয়ার বাবা আজাদুল হক ক্যাতা মিয়া চৌকিদার মনারুল ইসলাম, আশরাফুল মেম্বার ও হাবিবুর রহমানকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
মিঠাপুকুর থানার ওসি নুরে আলম সিদ্দিকী বলেন, এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। আসামি গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
