Logo
Logo
×

সারাদেশ

প্রতি মণে লোকসান ১ হাজার টাকা, নাটোরের রসুন চাষিদের মাথায় হাত

Icon

শহীদুল হক সরকার, নাটোর ও অহিদুল হক, বড়াইগ্রাম

প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:২৯ পিএম

প্রতি মণে লোকসান ১ হাজার টাকা, নাটোরের রসুন চাষিদের মাথায় হাত

বড়াইগ্রামের লক্ষ্মীকোল ও রয়না ভরট হাটে রসুন বিক্রি

দেশের সর্বাধিক রসুন উৎপাদনকারী জেলা হিসেবে পরিচিত নাটোরে এবার রসুনের বাম্পার ফলন হলেও ভালো নেই রসুন চাষিরা। প্রতি মণে এক হাজার টাকার বেশি লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের। এতে মাথায় হাত পড়েছে নাটোরের রসুন চাষিদের।

বিগত বছরগুলোতে চাষিরা নিজেদের উদ্ভাবিত বিনা হালে রসুন চাষ পদ্ধতিতে ব্যাপক সফলতা পাওয়ায় এবং উৎপাদিত রসুনের ভালো দাম পাওয়ায় এ মৌসুমেও তারা ব্যাপকহারে রসুন চাষ করেন। রসুনের ফলনও হয়েছে ভালো। কিন্তু উৎপাদিত রসুনের দাম না থাকায় এবার মণপ্রতি কমপক্ষে এক হাজার টাকা লোকসান গুনছেন তারা। ফলে লাভের পরিবর্তে সর্বস্বান্ত হতে চলেছেন নাটোরের রসুন চাষিরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত রবি মৌসুমে নাটোরে সর্বমোট ২২ হাজার ৮৫৫ হেক্টর জমিতে রসুনের আবাদ হয়। তার মধ্যে বড়াইগ্রামে ৮ হাজার ৯৯৩ হেক্টর, গুরুদাসপুরে ৭ হাজার ৩৭৫ হেক্টর, নাটোর সদরে দুই হাজার ৮৮০ হেক্টর, নলডাঙ্গায় ৪২৬ হেক্টর, লালপুরে ১১শ হেক্টর, বাগাতিপাড়ায় এক হাজার ৭৩ হেক্টর ও সিংড়ায় এক হাজার পাঁচ হেক্টর জমিতে রসুনের আবাদ করা হয়। জেলায় এবার কমপক্ষে এক লাখ ৩৭ হাজার ১৩০ মেট্রিক টন রসুন উৎপাদন হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

বড়াইগ্রামের লক্ষ্মীকোল ও রয়না ভরট হাটে রসুন বিক্রি করতে আসা কৃষক হাফেজ আব্দুল ওয়াহাব ও আব্দুস সোবহান বলেন, গত মৌসুমে বছরের পুরো সময় বাজারে রসুনের ভালো দাম ছিল। শেষপর্যন্ত প্রতি মণ রসুন ১০-১১ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। ভালো দাম পাওয়ায় অধিক লাভের আশায় এবারও রসুন চাষ করেছিলাম; কিন্তু বর্তমানে প্রতি মণ রসুন মাত্র ১ হাজার ২০০ থেকে সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে আমাদের উৎপাদন খরচই উঠছে না। প্রতি মণ রসুনে তাদের কমপক্ষে ৯শ টাকা লোকসান যাচ্ছে। ফলে এবার নাটোরের কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত এক লাখ ৩৭ হাজার ১৩০ মেট্রিক টন রসুন বিক্রি করে লাভের পরিবর্তে উল্টো কমপক্ষে ৩৪২ কোটি ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকা লোকসান গুনছেন। রসুনের এ অস্বাভাবিক দরপতনে হতাশ হয়ে পড়েছেন কৃষকেরা।

বড়াইগ্রামের বাজিতপুর গ্রামের রসুন চাষি এমদাদুল হক ও রয়না গ্রামের আব্দুল আউয়াল মণ্ডল  জানান, প্রতি বিঘা জমিতে রসুন চাষ, নিড়ানি, রসুন তোলা ও কেটে বাছাই করতে প্রায় ৩৫ জন শ্রমিক লাগে। তাদের শ্রমমূল্য ও খাবার খরচ বাবদ খরচ হয় প্রায় ২০ হাজার টাকা। গত বছর রসুনের দাম বেশি থাকায় বীজ বাবদ কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকা খরচ পড়েছে। এছাড়া সার ও কীটনাশক বাবদ বিঘা প্রতি ছয় হাজার এবং সেচ দিতে আরও আড়াই হাজার টাকা খরচ পড়েছে। প্রতি বিঘা জমিতে সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২৫ মণ রসুন উৎপাদিত হয়েছে। এখন বিক্রির সময়ে সেটাও শুকিয়ে ওজনে কিছুটা কমেছে। বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী প্রতি বিঘা জমি থেকে উৎপাদিত রসুন সর্বাধিক ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করা যাচ্ছে। ফলে মণপ্রতি কৃষকের কমপক্ষে ৯০০-১০০০ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। আর যারা জমি লিজ নিয়ে রসুন চাষ করেছেন তাদের লোকসানের পরিমাণ আরও বেশি বলে একাধিক কৃষক জানিয়েছেন।

গুরুদাসপুরের শিধুলী গ্রামের রসুন চাষি আশিকুজ্জামান জানান, এ বছর আমি মোট ৫ বিঘা জমিতে রসুন চাষ করে প্রায় একশ মণ রসুন পেয়েছি। উৎপাদিত রসুন বিক্রি করে আর্থিকভাবে বেশ লাভবান হবো বলে আশা করেছিলাম। কিন্তু অস্বাভাবিক হারে দাম কমে যাওয়ায় লাভের পরিবর্তে আমার কমপক্ষে এক লাখ টাকা লোকসান যাচ্ছে।

বড়াইগ্রামের লক্ষীকোল হাটে রসুন কিনতে আসা নারায়ণগঞ্জের ব্যাপারী আব্দুল আলিম ও বড়াইগ্রামের স্থানীয় ব্যাপারী আব্দুল কাদের জানান, সরকার প্রচুর পরিমাণে চায়না রসুন আমদানি করছে। আমদানিকৃত এসব রসুনের আকার বড় হওয়ায় ক্রেতারা সেগুলো কিনতেই বেশি আগ্রহ বোধ করেন। দেশি রসুনের চাহিদা না থাকায় দাম কমে যাচ্ছে।

নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক হাবিবুল ইসলাম খান বলেন, এভাবে রসুনের দাম কমতে থাকলে নাটোরের কৃষকরা রসুন চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন।

নাটোর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আমিনুল হক বলেন, দেশে উৎপাদিত ফসলের বাজার মজুদ পর্যালোচনা করে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। সরকারের উচিত কৃষকদের স্বার্থ বিবেচনা করা।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম