দেড় হাজার টাকায় মিলছে ‘এনআইডি কার্ড’
কমলনগর (লক্ষীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১১:০৩ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
কমলনগরে মাত্র দেড় হাজার টাকায় মিলছে নকল এনআইডি কার্ড (জাতীয় পরিচয়পত্র) ও জন্মনিবন্ধন সনদসহ সব ধরনের কাগজপত্র। এমন একটি চক্রের সন্ধান মিলছে উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের ফজুমিয়ারহাট বাজারে।
ওই চক্রের অন্যতম হোতা হিসাবে নাম উঠে এসেছে ওই বাজারের কম্পিউটার দোকানদার জহির উদ্দীনের। তার বিরুদ্ধে রয়েছে জন্ম নিবন্ধন জালিয়াতি, বয়স বাড়ানো-কমানো এবং নামে-বেনামে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করার অভিযোগ।
জহির চরকাদিরা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের আবুল খায়েরের ছেলে। এর আগে এ চক্রের অন্যতম সদস্য সিয়ামকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, জহির এসব কাগজ তৈরি করতে বেশি টাকা নেন না। মাত্র এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা পেলেই তৈরি করে দিচ্ছেন ভুয়া এনআইডি কার্ড ও জন্ম নিবন্ধন সনদসহ সব ধরনের কাগজপত্র। চক্রটি বছরের পর বছর ধরে তৈরি করে আসছে নকল এনআইডি। এনআইডি ব্যবস্থাপনায় নজরদারির অভাব, উপজেলা প্রশাসনের নীরব ভূমিকাসহ ফাঁক-ফোকর থাকায় নকল কার্ড তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে বলে উঠে এসেছে অনুসন্ধানে। আর সবকিছু জানার পরও স্থানীয় প্রশাসন, নির্বাচন কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন পরিষদ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে চক্রটি।
উপজেলা নির্বাচন অফিসের একজন কর্মকর্তা জানান, এগুলো মূলত ব্যবহার করা হয় ব্যাংক ঋণ, জমি জালিয়াতি, বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা ও বিদেশগামীদের মেডিকেলের কাজে। ভুয়া এনআইডি কার্ড প্রদান করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হলেও এ চক্র নাম ও ছবি ঠিক রেখে অন্যান্য তথ্য পরিবর্তন করে নকল কার্ড তৈরি করে থাকে। এসব অপরাধীর কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত। যাদের আসল এনআইডি আছে তাদের কাছেই এসব নকল কার্ড বিক্রি করা হয়। এসব কার্ডের বেশিরভাগই ব্যাংক ঋণ জালিয়াতির জন্য ব্যবহার করা হয়। এছাড়া জমি সংক্রান্ত জালিয়াতির জন্য ছবি পরিবর্তন করে নকল এনআইডি কার্ড তৈরি করে থাকে চক্রটি।
সরেজমিন গিয়ে কথা হয় নকল এনআইডি কার্ড নেওয়া মো. আব্দুল মান্নান নাসে এক ব্যক্তির সঙ্গে। তিনি বলেন, এক হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে জহিরের কম্পিউটার দোকান থেকে একটি এনআইডি কার্ড তৈরি করে নিয়েছেন তিনি। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে ইউএনও তাকে তার অফিসে ডেকে একটি মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেন। কিন্তু মূল অপরাধী জহির বেঁচে যান।
নকল এনআইডি কার্ড নেওয়া নয়ন আক্তার নামে অপর এক ব্যক্তি বলেন, তার এনআইডি কার্ড নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার চাপরাশিরহাট এলাকায়। এ কার্ড সংশোধন করতে তিনি জহিরের কম্পিউটার দোকানে গেলে সাড়ে ৩০০ টাকা নিয়ে ঠিকানা পরিবর্তন করে একটি আইডি কার্ড তৈরি করে দেন। কিন্তু নির্বাচন অফিসের সরকারি ওয়েবসাইটে সার্চ করলে বিষয়টি ধরা পড়ে।
অভিযুক্ত জহির উদ্দীন অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, ‘আমার কম্পিউটার দোকান থেকে এগুলা করা হয়েছে ঠিকই কিন্তু অন্য কেউ করেছে।’ এগুলোর সঙ্গে তিনি জড়িত নন বলে দাবি করেন তিনি।
চরকাদিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হারুন বলেন, তাকে সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু তিনি মানছেন না। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাহাত উজ জামান বলেন, এর আগেও এ ধরনের একটি অভিযোগ তিনি পেয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
