Logo
Logo
×

সারাদেশ

স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে নিখোঁজ কলেজশিক্ষিকা

কাঁদছে ১১ মাসের মেয়ে

Icon

ফরিদপুর ব্যুরো

প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:০১ পিএম

স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে নিখোঁজ কলেজশিক্ষিকা

মাকে কাছে না পেয়ে কাঁদছে ১১ মাসের অবুঝ মেয়ে শিশু। বাসায় স্বামীর কাছে ওই অবুঝ শিশুকে রেখে কলেজে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়েছিলেন ফরিদপুর সিটি কলেজের শিক্ষিকা সাবজান নাহার। তারপর থেকেই তিনি নিখোঁজ রয়েছেন।

এ ঘটনায় তার স্বামী কোতোয়ালি থানায় একটি জিডি করতে গিয়ে জানতে পারেন, নিখোঁজ হওয়ার আগে উলটো স্বামীর বিরুদ্ধেই স্ত্রী একটি লিখিত অভিযোগ দিয়ে গেছেন থানায়। 

গত ২১ অক্টোবর সকাল থেকে এই কলেজ শিক্ষিকার নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা নানা সন্দেহের সৃষ্টি করে। তার নিরুদ্দেশ যাত্রায় কোলের দুধের শিশুর কান্না থামছে না। বিভিন্ন স্থানে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে খোঁজখবর নিয়ে কোনো খোঁজ মেলেনি সাবজান নাহারের।

জানা গেছে, সাবজান নাহার নিখোঁজ হওয়ার দিনই কোতোয়ালি থানায় তার স্বামী রাজা মিয়ার বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করে যান। তার আগে তিনি কর্মস্থল থেকে এক মাসের ছুটিও নেন। এসব ঘটনায় তার নিখোঁজ হওয়া নিয়ে নানা সন্দেহের উদ্রেক হয়।

সাবজান তার অভিযোগে বলেন, চার বছর আগে রাজা মিয়ার সঙ্গে বিয়ের পর সংসারের সব দায়দায়িত্ব তিনি নিজেই বহন করছেন। দুই মাস আগে বিদেশে যাওয়ার জন্য তার স্বামী রাজা মিয়া এক লাখ টাকা নেন তার কাছ থেকে। এরপর বুলগেরিয়া যাওয়ার জন্য আরও ১৭ লাখ টাকা দাবি করেন। এক মাসের মধ্যে ওই টাকা না দিলে তাকে খুন করার হুমকিও দেন। রাজা মিয়া মাদক সেবন করেন, এজন্য তার কাছে টাকা দাবি করত। না দিলে গালিগালাজ ও গায়ে হাত তুলত। স্বামীর এ কর্মকাণ্ডের ভয়ে বৃদ্ধা মাকে তিনি ঢাকায় বোনের বাসায় পাঠিয়ে দেন। এখন প্রাণনাশের ভয়ে রয়েছেন।

এদিকে কোতোয়ালি থানায় দায়েরকৃত জিডিতে রাজা মিয়া বলেন, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাদের কাবিন হয়।

তিনি জানান, ২১ অক্টোবর বেলা ১১টার দিকে মেয়েকে বাসায় রেখে বের হন সাবজান নাহার। বিদেশে যাওয়ার জন্য তার জমানো ১০ লাখ টাকাও বাসা থেকে নিয়ে গেছেন। বিশ্বস্ত সূত্রের বরাতে তিনি জানতে পেরেছেন, তার স্ত্রী পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে অন্য কোনো ছেলের সঙ্গে দূরে কোথাও চলে গেছেন।

এ বিষয়ে জানতে ঢাকায় অবস্থানরত সাবজান নাহারের আপন বোন শিপনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তাদের সঙ্গেও দীর্ঘদিন বোন সাবজান নাহারের কোনো যোগাযোগ নেই।

এদিকে পুলিশ বলছে, সাবজান নাহারের দায়েরকৃত অভিযোগটি তদন্তের জন্য একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি একাধিকবার চেষ্টা করেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। সাবজান নাহারের ফোনটিও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। আত্মীয়স্বজন বা অন্য কোথাও তার অবস্থানের খবর মিলছে না। ফলে পুরো বিষয়টি এক রহস্যের জন্ম দিয়েছে।

জানা যায়, কলেজ শিক্ষিকা সাবজান নাহার ফরিদপুরের লক্ষ্মীপুর এলাকায় একটি ফ্ল্যাট বাসায় স্বামী ও দুগ্ধপোষ্য শিশুটিকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন। রাজা মিয়া তার তৃতীয় স্বামী। এর আগের তালাক হয়ে যাওয়া দুই স্বামীর ঘরে তার আরও দুটি মেয়ে রয়েছে। দুই-আড়াই বছর বয়স থাকা অবস্থায় ওই মেয়েদের স্বামীর ঘরে রেখেই তিনি তালাক নেন। এরপর আর ওই মেয়েদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখেননি। এর মধ্যে দ্বিতীয় স্বামীর ঘরে জন্ম নেওয়া মেয়েটি মা-বাবা থাকা সত্ত্বেও এখন একটি এতিমখানায় প্রতিপালিত হচ্ছে।

এদিকে ১১ মাসের শিশুর খবর জানতে পেরে একটি স্বেচ্ছাসেবী টিম ওই বাচ্চাটির খবর নেওয়ার চেষ্টা করে। ওই টিম মেম্বার আবরার নাদিম ইতু মাতৃদুগ্ধবঞ্চিত শিশুটির জন্য উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্বে বাচ্চাটি বঞ্চনার শিকার। মায়ের স্নেহ-মায়া পাওয়ার অধিকার রয়েছে তার।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজমীর হোসেন বলেন, সাবজান নাহারের লিখিত অভিযোগের তদন্তের জন্য একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে ন্যস্ত করা হয়। তবে ওই তদন্তকারী কর্মকর্তা তার মোবাইল নম্বরে ফোন দিয়ে ফোনটি বন্ধ পাচ্ছেন। অন্যদিকে তার স্বামী একটি জিডি করেছেন। পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম