Logo
Logo
×

সারাদেশ

মব তৈরি করে বিয়ে, ইউপি সদস্য ও কাজির বিরুদ্ধে মামলা

Icon

কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:০৮ পিএম

মব তৈরি করে বিয়ে, ইউপি সদস্য ও কাজির বিরুদ্ধে মামলা

প্রতীকী ছবি

লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে এক তরুণীর সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিবাহের চুক্তিতে কাবিন রেজিস্ট্রি করেছিলেন মাইনউদ্দিন নামের এক যুবক; কিন্তু কাবিনের কয়েক মাস পর যখন তিনি স্ত্রীকে ঘরে তোলার বিষয়ে কথা বলতে তরুণীর বাড়িতে যান, তখনই ঘটে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।

অভিযোগ রয়েছে- স্থানীয় হাবিবুর রহমান, আবদুল মান্নান, ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলাম ও বাবুল দেওয়ানের নেতৃত্বে একদল যুবক সেখানে মব তৈরি করে মাইনউদ্দিনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। পরে অনৈতিক সম্পর্কের মিথ্যা অভিযোগ তুলে গভীর রাতে কাজি ডেকে ফের কাবিন ও বিয়েতে বাধ্য করা হয়। পুরো ঘটনার ভিডিও ধারণ করে তা ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়, যাতে বলা হয়- অনৈতিক কাজে ধরা পড়ে বিয়ে করেছেন যুবকটি।

এতে দুই পরিবারের সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়। পরে ভুক্তভোগী মাইনউদ্দিন গত রোববার (৯ নভেম্বর) আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি লক্ষ্মীপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত।

বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সকালে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন টিটু।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী মাইনউদ্দিন উপজেলার হাজিরহাট বাজারে ইবনে সিনা পপুলার ডেন্টাল চিকিৎসালয়ের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছেন। অভিযুক্ত হাবিব ও আবদুল মান্নান ওই চিকিৎসালয়ে প্রবেশ করে প্রথমে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। ভুক্তভোগীর শোর-চিৎকারে অভিযুক্তরা তখন পালিয়ে যায়। এতে ভুক্তভোগী মাইনউদ্দিনের ওপর ক্ষিপ্ত হয় তারা।

পরবর্তীতে এ ঘটনার ২ মাস পর মাইনউদ্দিন বিয়ের দিনক্ষণ ধার্য করার জন্য পূর্বের কাবিন রেজিস্ট্রি করা হবু স্ত্রীর পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে তাদের বসতঘরে যান। এ সুযোগে অভিযুক্তরা গুজব রটিয়ে স্থানীয়দের জড়ো করে মব সৃষ্টি করে। পরে মাইনউদ্দিনকে মারধর করে হুজুর ও কাজি ডেকে পুনরায় কাবিন ও বিবাহে বাধ্য করে এবং অনৈতিক কাজে তারা ধরা পড়ে বিবাহ করেছেন বলে ভিডিও করে তা ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়।

তারা অসৎ উদ্দেশ্যে সামাজিকভাবে মান-সম্মান ক্ষুণ্ন করায় ভুক্তভোগী মাইনউদ্দিন ইউপি সদস্য ও কাজিসহ ৮ জনকে আসামি করে আদালতে মামলা করেন। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) তদন্তের নির্দেশ দেন।

ভুক্তভোগী তরুণীর মা নাজমা বেগম বলেন, মাইনউদ্দিনের সঙ্গে আমার মেয়ের বিবাহের কাবিন রেজিস্ট্রি কয়েক মাস আগেই করা হয়েছিল। ঘটনার দিন মাইনউদ্দিনকে বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করার জন্য আমি খবর দিয়ে আনি। এরপর স্থানীয় ইউপি সদস্য বাবুল, সিরাজ ও হাবিবের নেতৃত্বে এলাকায় গুজব ছড়িয়ে শত-শত মানুষ জড়ো করে। পরে মাইনউদ্দিনকে মারধর করে আমাদের জিম্মি করে ফেলে। একপর্যায়ে কাজি ডেকে পুনরায় কাবিন ও বিবাহ রেজিস্ট্রি করে।

চর ফলকন ইউনিয়নের কাজি (নিকাহ ও তালাক রেজিস্ট্রার) মো. শফি উল্লাহ বলেন, স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. সিরাজ আমাকে ফোন করে ঘটনাস্থলে নেন। সেখানে গিয়ে দেখি এক-দেড়শ মানুষ উপস্থিত। পরে সবার সম্মতিতে আমি কাবিন রেজিস্ট্রি করি।

অভিযুক্ত স্থানীয় চর ফলকন ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য ফারুক হোসেন বাবুল দেওয়ান ও একই ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার সিরাজুল ইসলামের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।

লক্ষ্মীপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি মো. শাহাদাত হোসেন টিটু বলেন, মামলাটি হাতে এসেছে। তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম