স্বামীর বিদেশ যাওয়ার টাকার জন্য নির্যাতন, গৃহবধূর আত্মহত্যা
যুগান্তর প্রতিবেদন, নবাবগঞ্জ (ঢাকা)
প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:১৪ পিএম
১০ মাসের কন্যাসন্তান রেখে গৃহবধূর আত্মহত্যা। ছবি: যুগান্তর
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
স্বামী বিদেশে যেতে চান। এজন্য অনেক টাকা লাগবে। আর সেই টাকা জোগাড় করার জন্য স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন তিথি রায়কে নিয়মিত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন। একপর্যায়ে অত্যাচার সইতে না পেরে ১০ মাসের কন্যাসন্তান রেখে আত্মহত্যার পথ বেছেন নেন এই গৃহবধূ।
শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার নবাবগঞ্জের যন্ত্রাইল ইউনিয়নের হরিশকুল গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
তিথিকে উদ্ধার করে দ্রুত নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পরিবারের অভিযোগ, টাকার জন্য স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে নিয়মিত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন। ১০ মাসের কন্যাসন্তান রেখে মৃত্যুর পথ বেছে নেন তিথি।
এ ঘটনায় নিহতের বাবা অখিল রায় বাদী হয়ে মেয়ের স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়িসহ চারজনকে আসামি করে থানায় মামলা করেছেন। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে।
মামলার আসামিরা হলেন- নিহতের স্বামী সুশান্ত বাড়ৈ (৩০), শ্বশুর যাবদ বাড়ৈ (৬৫), শাশুড়ি ভালোবাসা বাড়ৈ (৫৫) এবং আগলা ইউনিয়নের টিকরপুর গ্রামের রবিন বিশ্বাসের স্ত্রী রজন্তি বিশ্বাস (২৮)।
মামলার এজাহার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দুই বছর আগে উপজেলার কৈলাইল ইউনিয়নের ভাঙ্গাবিটা গ্রামের অখিল রায়ের মেয়ে তিথি রায়ের সঙ্গে যন্ত্রাইল ইউনিয়নের হরিশকুল গ্রামের যাবদ বাড়ৈয়ের ছেলে সুশান্ত বাড়ৈয়ের (৩০) বিয়ে হয়। তাদের সংসারে সিজা বাড়ৈ নামে ১০ মাসের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে।
নিহতের বাবা অখিল রায় এজাহারে উল্লেখ করেন, বিয়ের পর আমার মেয়ের জামাই সুশান্ত দুবাই প্রবাসী ছিল। কিছুদিন আগে সে দেশে ফিরে আসে। এরপর থেকে সে পুনরায় বিদেশ যাওয়ার জন্য আমার (তিথির) পরিবারের কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করতে থাকে।
তিনি অভিযোগে আরও বলেন, আমরা আর্থিকভাবে সচ্ছল না হওয়ায় সেই টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করি। এরপর থেকেই সুশান্ত ও তার পরিবারের সদস্যরা আমার মেয়ে তিথির ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করেন। নির্যাতনের কারণে তিথি বেশ কয়েকবার আমাদের বাড়িতে চলেও এসেছিল। কিন্তু প্রতিবারই আমরা সংসারের কথা চিন্তা করে তাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে আবার স্বামীর বাড়িতে পাঠিয়ে দিতাম।
এজাহারে আরও বলা হয়, ঘটনার দিন গত ১৪ নভেম্বর সকালেও বিদেশ যাওয়ার টাকা নিয়ে তিথির সঙ্গে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের নতুন করে বিবাদ বাদে। একপর্যায়ে আসামিরা তিথিকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন এবং মানসিক চাপ সৃষ্টি করেন। এতে তিথি মানসিকভাবে সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েন। পরে ওইদিন দুপুর দেড়টার দিকে অখিল রায় খবর পান তার মেয়ে তিথি স্বামীর বাড়িতে গলায় ফাঁস দিয়েছেন।
এ বিষয়ে নবাবগঞ্জ থানার ওসি মমিনুল ইসলাম জানান, নিহতের বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে আত্মহত্যার প্ররোচনায় একটি মামলা হয়েছে। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

-69197b2df2ade.jpg)