Logo
Logo
×

সারাদেশ

ঘুস দাবি করা সুপার অনুপস্থিত

মাদ্রাসায় তালা ভেঙে পরীক্ষা নিলেন ম্যাজিস্ট্রেট

Icon

উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৪২ পিএম

মাদ্রাসায় তালা ভেঙে পরীক্ষা নিলেন ম্যাজিস্ট্রেট

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় সহকারী শিক্ষকের কাছে দুই লাখ টাকা ঘুস দাবির অভিযোগের সত্যতা মেলার কথা শুনে দুই দিন ধরে প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত মাদ্রাসা সুপার আব্দুস সালাম। বৃহস্পতিবার অফিস শেষে কাউকে কিছু না বলে তার কক্ষে থাকা বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্রসহ সব আলমারি তালা দিয়ে বের হন সুপার। এরপর তিনি আর মাদ্রাসায় ফিরে আসেননি।

রোববার সুপার প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকায় প্রশ্নের অভাবে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানালে তিনি সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শারমিন আক্তার রিমাকে প্রতিষ্ঠানে পাঠান। তিনি সোমবার মাদ্রাসার প্রশ্নপত্রের আলমারির তালা ভেঙে বার্ষিক পরীক্ষা গ্রহণ করেন।  

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুল কাদের বিশ্বাস জানান, এই মাদ্রাসায় এনটিআরসিএর মাধ্যমে ২০২৩ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক মোমেনা খাতুনকে প্রতিষ্ঠানে যোগদানের সময় সুপার আব্দুস সামাদ তার কাছ থেকে ২ লাখ টাকা ঘুস দাবি করেন। তিনি এ দাবি না মেটানোর কারণে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানে সুপার কর্তৃক নির্যাতিত হয়ে আসছিলেন। বিষয়টি নিয়ে গত ১০ নভেম্বর মোমেনা খাতুন উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করেন।

এ অভিযোগ করায় মোমেনা খাতুনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেন সুপার আব্দুস সামাদ। মোমেনা খাতুনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাহী কর্মকর্তা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্তের নির্দেশনা দেন। পরে আব্দুল কাদের বিশ্বাস প্রতিষ্ঠানে গিয়ে তদন্ত করে মোমেনা খাতুনের অভিযোগসহ বেশ কিছু অনিয়মের সত্যতা পান।

তদন্ত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে জানান মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। এরপর মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে ১৭ নভেম্বর পূর্বের পরিচালনা কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি গঠন করে দেন।

নতুন কমিটিতে পূর্বের সভাপতি কথিত সুপারের স্ত্রী নাছিমা আক্তারকে বাদ দিয়ে উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সভাপতির দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। নতুন কমিটিতে পূর্বের সভাপতি ছাড়া অপর সদস্যদের বহাল রাখা হয়।

এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে তদন্তের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর সুপার আব্দুস সামাদ গত ২০ নভেম্বর তার কক্ষের প্রশ্নপত্রের আলমারিতে তালা দিয়ে তিনি কোনো ছুটি না নিয়ে প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করেন। গত রোববার (২৩ নভেম্বর) প্রশ্নপত্র বের করতে না পারায় শিক্ষার্থীরা বিনায়েকপুর মাদ্রাসায় বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি।

সোমবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে আব্দুর কাদের বিশ্বাস ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) শারমিন আক্তার রিমা মাদ্রাসায় গিয়ে উপস্থিত শিক্ষক ও স্থানীয় সুধীজনদের ডেকে তাদের সামনে কথিত প্রশ্নপত্রের আলমারির তালা ভেঙে সব প্রশ্নপত্র বের করেন এবং পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু করেন। বর্তমানে মাদ্রাসার সহকারী সুপার আলমগীর কবিরকে পরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। 

কাদের বিশ্বাস আরও জানান, ওই মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলেন তার স্ত্রী নাছিমা আক্তার। এছাড়া স্কুলের নাইট গার্ড ও আরও কয়েকজন শিক্ষক সুপারের স্বজন হওয়ায় সামাদ নিজের খেয়াল খুশিমতো মাদ্রাসা পরিচালনা করে আসছিলেন। এ ব্যাপারে ওই সুপারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

উল্লাপাড়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) শারমিন আক্তার রিমা জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে সোমবার সকালে বিনায়েকপুর মাদ্রাসায় গিয়ে অফিস কক্ষে রক্ষিত বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের আলমারির তালা ভেঙে মাদ্রাসায় বন্ধ থাকা বার্ষিক পরীক্ষা শুরু করেন। 

এ বিষয়ে উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মাদ্রাসার সভাপতি আবু সালেহ মোহাম্মদ হাসনাত জানান, তিনি দ্রুত পরিচালনা কমিটির সভা ডেকে বিধিমোতাবেক ওই মাদ্রাসা সুপারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন। 

এ ব্যাপারে বিনায়েকপুর দাখিল মাদ্রাসার সুপার আব্দুস সামাদকে বারবার ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেননি।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম