১৭ বছর পর বাড়ি ফিরলেন বিডিআর সদস্য নজরুল, হারিয়েছেন ছেলে
বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর ২০২৫, ১০:২১ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
১৭ বছর কারাবরণ শেষে মুক্তি পেয়ে বাড়ি ফিরেছেন বিডিআর সদস্য নজরুল ইসলাম। সোমবার (২৪ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টায় নাটোরের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে রাত ৯টায় নিজ বাড়ি বাঘা উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের দিঘা গ্রামে পৌঁছান তিনি।
বাড়ি ফেরার পর তার কান্না থামছিল না, কারণ তিন বছর আগে মারা গেছেন তার বড় সন্তান নাহিদ ইসলাম। সেই সন্তানের মুখ আর দেখার সুযোগ পাননি তিনি। স্ত্রী ও প্রতিবেশী সবাই আবেগে চোখের পানি ফেলছেন। তবে ছেলের অনুপস্থিতি যেন সেই আনন্দকে বিষাদে পরিণত করেছে।
এ বিষয়ে নজরুল ইসলাম বলেন, ১২ বছর চাকরি করে কী এমন অপরাধ করেছিলাম, যার জন্য বিনা অপরাধে ১৭ বছর জেল খাটতে হলো। যদি সঠিক বিচার হতো, তাহলে এত কষ্ট পেতাম না। পরিবারের কাছে ফিরেছি ঠিকই, তবে দেখা হলো না স্নেহের সন্তানের মুখ।
তিনি বলেন, অনেক নিরপরাধ মানুষ এখনো কারাগারে দিন কাটাচ্ছেন, যাদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। তিনি সরকারের কাছে অনুরোধ জানান, সেই নিরপরাধ মানুষগুলোকে মুক্তি দেওয়ার।
২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পিলখানায় ঘটে যাওয়া বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় কারাবরণ করেন তিনি। তখন রেখে গিয়েছিলেন দুই স্নেহের সন্তান শাপলা খাতুন ও নাহিদ হোসেনকে।
নজরুল ইসলামের দুই সন্তানই উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে বাবার স্বপ্ন পূরণ করার চেষ্টা করেছিলেন। পুত্রসন্তান নাহিদ ইসলাম অকালে চলে গেছেন। মেয়ে শাপলা খাতুন বিয়ে হয়ে অন্যের ঘরে চলে গেছেন।
নজরুল ইসলাম আরও বলেন, সন্তান নাহিদ ইসলামকে উচ্চশিক্ষিত করেছিলাম। সে একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করছিল। কর্মক্ষেত্রেই হঠাৎ হার্টঅ্যাটাকে মৃত্যু হয়। কারাগারের ভেতরে থেকে সন্তানের মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার যন্ত্রণা তা প্রকাশ করার মতো নয়।
মুক্তি পাওয়ার পর নজরুল ইসলাম যখন গ্রামে প্রবেশ করেন, তখন শত শত মানুষ ছুটে আসেন তার বাড়িতে, চোখে জল নিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে দেখা যায়। কান্নাতে গ্রামের বাতাস ভরে ওঠে; কিন্তু চোখের গভীরে লুকিয়ে আছে হারানো সময়ের বেদনা। প্রিয় সন্তান নাহিদের চলে যাওয়ার ক্ষত, আর অসমাপ্ত জীবনের দীর্ঘশ্বাস।
