মেয়র ও প্রকৌশলীর ঘুসে ভেস্তে গেছে ২ কোটি টাকার সৌরবাতি প্রকল্প
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০২৫, ০১:৫৩ পিএম
ঝিনাইদহের মহেশপুর পৌরসভায় সৌরবাতি স্থাপনে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ঝিনাইদহের মহেশপুর পৌরসভায় সৌরবাতি স্থাপনে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। প্রায় দুই কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাজ দুই দফা মেয়াদ বাড়ানো হলেও এখনো বাকি রয়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। একই সঙ্গে নকল লেবেল লাগানো নিম্নমানের মালামাল ব্যবহার, ইস্টিমেট অনুযায়ী সরঞ্জাম না দেওয়া, কোটি টাকার বিল উত্তোলনসহ নানা অভিযোগে প্রকল্পটি কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে।
জানা গেছে, গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় মহেশপুর পৌরসভায় ১৫০টি সৌরবাতি স্থাপনের জন্য এক কোটি ৯৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়। অদৃশ্যভাবে ‘অংগীরা ইলেকট্রনিক্স’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটির কাজ পায়। প্রথম দফায় ৮০টি সৌরবাতি স্থাপন করা হয় এবং সাবেক মেয়র আব্দুর রশিদ খান ও প্রকৌশলী সোহেল রানা ঠিকাদারকে ৮৩ লাখ ৭৭ হাজার ৭৫০ টাকার বিল পরিশোধ করেন। কিন্তু প্রকল্পের কাজ অতি নিম্নমানের হওয়ায় অল্প সময়ের মধ্যেই বহু সৌরবাতি নষ্ট হয়ে পড়ে।
অভিযোগ উঠেছে, সাবেক পৌর মেয়র ও প্রকৌশলী ঘুস গ্রহণের মাধ্যমে ইস্টিমেটের বাইরে অতি নিুমানের সৌরবাতি স্থাপনের সুযোগ করে দিয়েছেন ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। বাজার যাচাইয়ে দেখা যায়, প্রতিটি সৌরবাতির প্রকৃত মূল্য ৩০-৪৫ হাজার টাকার মতো হলেও ইস্টিমেটে (আনুমানিক হিসাব) ধরা হয় এক লাখ ৩২ হাজার ৫শ টাকা। এভাবেই নিম্নমানের মালামাল সরবরাহ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কোটি টাকার বিল উত্তোলন করেছে বলে অভিযোগ ওঠে।
গত বছরের ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর পৌর প্রশাসকের দায়িত্ব পান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ পেয়ে সরেজমিন তদন্ত করেন।
তদন্তে দেখা যায়-সৌরবাতির সরঞ্জামের ওপর নকল লেবেল লাগানো, সার্কিটে লেখা ও ইস্টিমেটের সঙ্গে অমিল, ব্যবহৃত প্যানেল ও ব্যাটারি নিম্নমানেরসহ নানা অসঙ্গতি। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে ওই বছরের ১৯ আগস্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয় এবং এরপর থেকেই সৌরবাতি স্থাপনের কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
পৌর কর্মচারী আব্দুল হান্নান জানান, প্রশাসকের নির্দেশে রাস্তা থেকে সৌরবাতি খুলে এনে পরীক্ষা করা হলে দেখা যায়, ইস্টিমেটে যেসব মালামাল থাকার কথা, তার অধিকাংশই দেওয়া হয়নি।
আরও একজন ইলেকট্রিক মিস্ত্রি বলেন, বাজার যাচাইয়ে দেখা গেছে, ব্যবহৃত সরঞ্জামগুলোর সর্বোচ্চ মূল্য ৩০-৩৫ হাজার টাকা।
অভিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী দাবি করেন, ২-১টি বাদে সব সৌরবাতিই জ্বলছে। ইস্টিমেট অনুযায়ী মালামাল সরবরাহ করা হয়েছে। কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাবও দেওয়া হয়েছে।
পৌরসভা প্রকৌশলী সোহেল রানা দাবি করেন, প্রকল্পের সভাপতি মেয়র নিজেই সব তদারকি করেছেন। ইস্টিমেট অনুযায়ী মালামাল দেওয়া আছে। তবে প্রশাসকের তদন্তে অসঙ্গতি পাওয়া গেছে-এ তথ্য তাকে স্মরণ করিয়ে দিলে তিনি বলেন, পৌরসভায় বিভিন্ন প্রকল্পের সৌরবাতি আছে-ম্যাজিস্ট্রেট হয়তো অন্য প্রকল্পের সৌরবাতি পরীক্ষা করেছিলেন।
এ বিষয়ে সাবেক মেয়র আব্দুর রশিদ খানের ব্যবহৃত ফোন নম্বরে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।
বর্তমান পৌর প্রশাসক খাদিক্তা আক্তার বলেন, বিষয়টি জানতে প্রকৌশলীকে চিঠি করা হয়েছে। তিনি লিখিতভাবে জানালেই পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দুর্নীতির কারণে প্রকল্পের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হয়েছে এবং সরকারি কোটি টাকা কার্যত পানিতে গেছে। তদন্তের ফলাফলের ওপর নির্ভর করছে ভবিষ্যতে এই প্রকল্প টিকবে নাকি আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

