একসঙ্গে আট ছানা হারিয়ে উপজেলা চত্বরে ঘোরাঘুরি মা কুকুরের
আখতারুজ্জামান আখতার, পাবনা
প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:০১ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
চরমতম নিষ্ঠুরতা দেখল পাবনাসহ দেশবাসী। একসঙ্গে আটটি কুকুর ছানাকে বস্তায় ভরে পুকুরে ডুবিয়ে মারলেন এক সরকারি কর্মকর্তার স্ত্রী। তিনি পাবনার ঈশ্বরদী ক্ষুদ্র কৃষক ফাউন্ডেশন কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়নের স্ত্রী নিশি রহমান।
এদিকে একসঙ্গে আট ছানাকে হারিয়ে উদ্ভ্রান্তের মতো ঘোরাঘুরি করছে মা কুকুরটি। থেকে থেকে আর্তনাদ করছে। স্থানীয়রা জানান- মা কুকুর সারা রাত ডাকাডাকি করেছে। মাঝে মাঝে কুকুরটি ইউএনওর অফিসের দরজার কাছে গিয়ে উচ্চস্বরে কান্না-বিলাপ করছে।
এদিকে বুধবারও সকাল থেকে ছানাগুলোর খোঁজে মা কুকুরকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়সহ উপজেলা চত্বর এলাকায় ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে।
সন্তানহারা কুকুরটির এ অবস্থা দেখতে প্রতিদিনই ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদ চত্বরে অসংখ্য নারী-পুরুষ ভিড় করছেন এবং তারা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদসহ অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছেন।
ঈশ্বরদীতে ৮ কুকুরের বাচ্চাকে পানিতে ডুবিয়ে হত্যার ঘটনায় দেশব্যাপী সব সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মর্মস্পর্শ করেছে। হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে পশুপ্রেমীদের। ৮টি দুধের বাচ্চাকে হারিয়ে মা কুকুরটি এখনো শোকে কাতর। মাঝে মাঝে কুকুরটি ইউএনওর অফিসের দরজার কাছে গিয়ে উচ্চস্বরে কান্না বিলাপ করছে।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরেই ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনের এক কোণায় থাকত টম নামের একটি কুকুর। এক সপ্তাহ আগে টম আটটি বাচ্চা প্রসব করে। সোমবার সকাল থেকে তার ছানাগুলো না পেয়ে পাগলপ্রায় অবস্থায় কান্না আর ছোটাছুটি করতে দেখা যায় মা কুকুর টমকে।
পরে উপজেলা পরিষদের কর্মচারীরা জানতে পারেন, ঈশ্বরদী উপজেলা পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়ন ও তার স্ত্রী জীবন্ত আটটি কুকুর ছানাকে বস্তার মধ্যে বেঁধে রোববার রাতের কোনো এক সময় ফেলে দেন উপজেলা পরিষদের পুকুরে। একদিন পর সোমবার সকালে পাওয়া যায় কুকুর ছানাগুলোর মরদেহ। দুপুরের পর মৃত কুকুর ছানাগুলোকে ইউএনওর বাসভবনের পাশে মাটিচাপা দেওয়া হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাড়ির কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সোমবার সকালে নয়ন স্যার মোটরসাইকেলে বাইরে যাচ্ছিলেন। আমি ছানাগুলোর কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি কিছু জানেন না বলেন। তখন তার ছেলে বলে- ‘আম্মু ছানাগুলোকে বস্তায় ভরে পুকুরে ফেলে দিয়েছে।’ এরপর আমরা পুকুরে গিয়ে একটি বস্তা ভাসতে দেখি। তুলে খোলার পর আটটি ছানাকেই মৃত অবস্থায় পাই। মৃত ছানাগুলো দেখে মা কুকুরটি প্রচণ্ড আর্তনাদ করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মীরা কুকুরটিকে চিকিৎসা দেন।
আটটি কুকুর ছানাকে বস্তাবন্দি করে পুকুরে ডুবিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলার পর অভিযুক্ত নারী নিশি রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নিশি রহমান ঈশ্বরদীর ক্ষুদ্র কৃষক ফাউন্ডেশন কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়নের স্ত্রী। মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঈশ্বরদী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আকলিমা খাতুন বাদী হয়ে ঈশ্বরদী থানায় এ মামলাটি করেন।
ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আ স ম আব্দুন নূর মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
