ভাঙ্গুড়ায় ডাকাতি: ৫ সোনার দোকান ও ৩ বাড়ি লুট
ভাঙ্গুড় (পাবনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:৩৩ পিএম
ভাঙ্গুড়ায় পাঁচটি সোনার দোকান এবং কয়েকটি ব্যবসায়ীর বাড়ি লুট হয়েছে। ছবি: যুগান্তর
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
পাবনায় একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের ভয়ঙ্কর অভিযানে পাঁচটি সোনার দোকান এবং কয়েকটি ব্যবসায়ীর বাড়ি লুট হয়েছে। বুধবার (৩ ডিসেম্বর) গভীর রাতে ভাঙ্গুড়া উপজেলার অষ্টমণিষা বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
এই ঘটনায় প্রায় ২ কোটি টাকার স্বর্ণালংকার এবং নগদ অর্থ ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা।
ডাকাতির সময় স্থানীয়দের ফোন করে সাহায্য চাওয়া হলেও কেউ এগিয়ে আসেনি, যা এলাকায় চরম আতঙ্ক ও হতাশা সৃষ্টি করেছে।
পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে এবং দোষীদের দ্রুত গ্রেফতারের আশ্বাস দিয়েছে।
সিসিটিভি ফুটেজ এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুসারে, ১০ থেকে ২৫ জনের একটি সশস্ত্র ডাকাত দল স্পিডবোটে করে গুমানী নদী দিয়ে বাজারে প্রবেশ করে। তারা প্রথমে বাজারের দুই নৈশপ্রহরীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বেঁধে রাখে। এরপর দোকানের তালা ভেঙে সোনার দোকানগুলোতে লুটপাট শুরু করে এবং সংলগ্ন বাড়িঘরে প্রবেশ করে পরিবারের সদস্যদের মারধর করে অর্থ-সম্পদ ছিনিয়ে নেয়। লুটপাটের পর ডাকাতরা ভোর সাড়ে চারটার দিকে স্পিডবোটে করে নদীর ভাটির দিকে পালিয়ে যায়।
ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন-ডাকাতদের হাতে বন্দুক, ধারালো অস্ত্র এবং অন্যান্য সরঞ্জাম ছিল, যা তাদের প্রতিরোধ করা অসম্ভব করে তুলেছিল।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীদের ভাষ্যমতে, লুট হয়েছে অন্তত ৪০ ভরি স্বর্ণালংকার এবং প্রায় ২ কোটি টাকার নগদ অর্থ। আফতাব জুয়েলার্সের নগদ ৪০ লাখ টাকা এবং প্রচুর স্বর্ণালংকার, তপন জুয়েলার্সের নগদ ৪২ লাখ টাকা এবং স্বর্ণালংকার, রতন জুয়েলার্সের নগদ অর্থসহ ৪৫ লাখ টাকার স্বর্ণালংকার লুট হয়েছে। এছাড়া পরিবারের সদস্যদের মারধর করা হয়েছে।
অন্যান্য দোকান-উত্তম জুয়েলার্স, মধু জুয়েলার্স, মা জুয়েলার্স এবং আখি জুয়েলার্স থেকেও স্বর্ণালংকার ও নগদ লুট হয়েছে, যা মোট লুটের পরিমাণকে বাড়িয়ে তুলেছে।
রতনের ছেলে রঞ্জন কর্মকার জানান, দুর্বৃত্তরা দোকানের তালা ভেঙে স্বর্ণ লুট করে, তারপর বাড়িতে ঢুকে আমার মা ও আমাকে মারপিট করে দশ ভরি স্বর্ণ এবং নগদ ১৫ লক্ষ টাকা ছিনিয়ে নেয়।
রতন কর্মকার বলেন, ডাকাতেরা বাড়িতে ঢুকলে আমি তিন তলায় গিয়ে প্রতিবেশীদের ফোন করার চেষ্টা করি, কিন্তু কেউ সাহায্য করতে আসেনি। পরে দীপকে ফোন করি, কিন্তু সে বের হতে পারেনি কারণ তার ঘরের সামনে দুই অস্ত্রধারী দাঁড়িয়ে ছিল।
অন্যান্য ভুক্তভোগীরাও একইভাবে স্থানীয়দের সাহায্য না পাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। পুলিশকে ফোন করার পরও তারা ১৫ মিনিট পরে পৌঁছায়, কিন্তু ততক্ষণে ডাকাতরা পালিয়ে যায়।
ভাঙ্গুড়া থানার ওসি শফিকুল ইসলাম বলেন, এলাকাবাসী চাইলে এ ঘটনা প্রতিহত করতে পারতো। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি।
খবর পেয়ে অতিঃ পুলিশ সুপার আবু বকর সিদ্দিক, পাবনা ডিবি পুলিশের ওসি রাশিদুল ইসলাম ও ভাঙ্গুড়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
পাবনা ডিবি পুলিশের ওসি রাশিদুল ইসলাম বলেন, খুব দ্রুততম সময়ে এই ডাকাতর রহস্য উদঘাটন করা হবে।
অতিঃ পুলিশ সুপার আবু বকর সিদ্দিক বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে আছি। আইনগত প্রক্রিয় চলমান। তদন্তে বিস্তারিত জানা যাবে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করা হচ্ছে এবং এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
অষ্টমণিষা বাজার চলনবিলের 'রাজধানী' হিসেবে পরিচিত, যেখানে স্বর্ণ ও ধান ব্যবসা প্রধান। এই অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা উপজেলার অন্যান্য এলাকার চেয়ে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে, কিন্তু নদীপথের কারণে নিরাপত্তা ঝুঁকি বেশি। এই ডাকাতি ঘটনা স্থানীয় ব্যবসায়ীরা নিরাপত্তা ব্যবস্থার জোরদারের দাবি তুলেছেন এবং ভবিষ্যতে অনুরূপ ঘটনা প্রতিরোধে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ভুক্তভোগীরা দ্রুত ন্যায়বিচার এবং ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন।

-69315262853df.jpg)