Logo
Logo
×

সারাদেশ

কুকরি-মুকরি চরে ছুটছেন পর্যটক, উপকূলের অর্থনীতিতে পরিবর্তন

Icon

শিপুফরাজী, চরফ্যাশন

প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:০৬ পিএম

কুকরি-মুকরি চরে ছুটছেন পর্যটক, উপকূলের অর্থনীতিতে পরিবর্তন

শীতের মৌসুম শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই বাংলাদেশের দক্ষিণে চরফ্যাশন উপজেলায় অবস্থিত চর কুকরি-মুকরি, তারুয়া সমুদ্রসৈকতে শীতের তীব্রতা উপেক্ষা করে পর্যটকের ভিড় বেড়েছে। পর্যটকরা এখানকার তারুয়া সমুদ্রসৈকতের লোনাপানিতে ধুয়ে ফেলতে চান কর্মব্যস্ত জীবনের সব ক্লান্তি। সঙ্গে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য খুঁজতে চান প্রশান্তি।

চর কুকরি-মুকরি, তারুয়া সমুদ্রসৈকত বিস্তীর্ণ শ্বাসমূলীয় বনাঞ্চল এবং প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য নিয়ে গড়ে উঠেছে এই সৈকত। বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর মোহনায় এই চরটি অবস্থিত।

শীত মৌসুমের শুরুতে শত শত পর্যটক ভিড করছেন নদী ও বনের সৌন্দর্য উপভোগে। আর তাই এখানে শীতে পর্যটকের সংখ্যা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় চরফ্যাশন কেন্দ্রিক উপকূলীয় এলাকার গ্রামীণ অর্থনীতিতে পরিবর্তন আসছে।

এক সময় মানসম্মত আবাসন সুবিধার অভাবে অনেক পর্যটক সকালে এসে বিকালেই ফিরে যেতে বাধ্য হতেন। তবে গত এক দশকে কুকরি-মুকরি, তারুয়া সমুদ্রসৈকতে পর্যটন ব্যবসায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। পর্যটক টানতে সরকারি-বেসরকারিভাবে চর কুকরি-মুকরিতে নানা সুযোগ-সুবিধা গড়ে উঠেছে। 

বিশ্রাম নেওয়ার জন্য এখানে তৈরি করা হয়েছে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের কোস্টাল ফরেস্ট ডেভেলপমেন্ট সেন্টার কাম-রেস্টহাউস। এছাড়া বেসরকারিভাবে বেশ কিছু প্রকল্পের আওতায় নারীর ক্ষমতায়নের অংশ হিসেবে কয়েকটি ‘হোম স্টে’ গড়ে তোলা হয়েছে। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চর কুকরি-মুকরিতে পর্যটকদের বিনোদনের জন্য বেসরকারিভাবে ওয়াকওয়ে, জিপ ট্র্যাকিং, স্পাইডার ট্র্যাকিং ও ঝুলন্ত ব্রিজেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া মূল ভূখণ্ড থেকে পুরো চর ঘুরে বেড়ানোর জন্য সরকারিভাবে বনের মধ্য দিয়ে দৃষ্টিনন্দন একটি সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।

শীতে ভ্রমণপিপাসুদের আগ্রহের মূল কেন্দ্রবিন্দু ভার্জিন বিচ তাড়ুয়া। এখানে যতদূর চোখ যায় দিগন্ত বিস্তৃত সমুদ্রসৈকত। বঙ্গোপসাগরের ঢেউগুলো আছড়ে পড়ে তাড়ুয়ার বুকে। পর্যটকেরা অনেকেই এখানে তাঁবু খাঁটিয়েও থাকতে পারবেন। নিরাপত্তা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই বলে জানান স্থানীয়রা। তীব্র শীত উপেক্ষা করে ট্রলার ভাড়া করে দলবেঁধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ভ্রমণপিপাসুরা।

বেসরকারিভাবে ‘অন্য দ্বীপ থেকে তাড়ুয়ায় আসার সুবিধার্থে চর কুকরি-মুকরিতে সুন্দর একটি বাঁশের জেটি নির্মাণ করা হয়েছে। তাড়ুয়া ছাড়াও চর কুকরি-মুকরিতে আসা পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় আরেকটি পর্যটক স্পট হচ্ছে নারকেলবাগান। চর কুকরি-মুকরি থেকে ছোট নৌকা, স্পিডবোট ও ট্রলারে করে ম্যানগ্রোভ বনের ভেতর দিয়ে ভ্রমণপিপাসুরা চলে যেতে পারবেন নারকেলবাগানে। এখানে আসা পর্যটকেরা সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বনের সৌন্দর্যও দেখতে পাবেন। বিকেল কিংবা সন্ধ্যার দিকে বনের ধারে হরিণের দলের দেখা মিলবে।’

উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা আশিস চন্দ্র দাস বলেন, তাড়ুয়ার মতোই সরকারি-বেসরকারিভাবে নারকেল বাগানেও পর্যটকদের বিনোদনের জন্য বেশ কিছু অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। বিশেষ করে নারকেলবাগানের দোলনায় বসে নদীর জোয়ার-ভাটা উপভোগ করার দৃশ্য আজীবন মনে রাখার মতো। এখানে আরও আছে ছনের তৈরি বিশ্রামকেন্দ্র। বন বিভাগের উদ্যোগে এই চরে একটি পাকা ঘাট তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া রয়েছে ওয়াচ টাওয়ার ও বসার স্থান। ভাটার সময় নারকেল বাগানে মাছ ও পোকামাকড় খেতে উড়ে আসে বক, সিগালসহ নানা ধরনের পাখি।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম