পদ্মায় ইলেকট্রিক শকে মাছ নিধন! জনতার হাতে ধরা ৩
যুগান্তর প্রতিবেদন, মানিকগঞ্জ
প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৫৬ পিএম
ছবি: যুগান্তর
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
পদ্মা নদীতে মাছ শিকারের নামে চালানো হচ্ছিল ভয়ংকর পরিবেশবিধ্বংসী তাণ্ডব। ব্যাটারি ও ইনভার্টারের সাহায্যে হাইভোল্টেজ বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে ইলেকট্রিক শক দিয়ে নির্বিচারে নিধন করা হচ্ছিল নদীর সব প্রাণী। এমনই অভিনব ও ভয়াবহ অপরাধে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার আন্ধারমানিক পদ্মা নদীর তীরবর্তী মাছের আড়ত এলাকা থেকে শনিবার (২০ ডিসেম্বর) তিনজনকে আটক করেছেন স্থানীয় জনতা।
আটকের পর তাদের উপজেলা মৎস্য অফিসের কাছে হস্তান্তর করা হলে ভ্রাম্যমাণ আদালত দুজনকে ৭ দিন করে কারাদণ্ড দেন। অপর একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় মুচলেকা নিয়ে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়।
আটকরা হলেন— রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার রাখালগাছি গ্রামের ইব্রাহিম শেখ ও সাইফুল শেখ এবং পাবনা জেলার আমিনপুর থানার ডালারচর গ্রামের কাউছার সরদার।
মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, অভিযানে জব্দ করা হয়েছে একটি ইলেকট্রিক শক ছুবনী বা ছিপি, ১২ ভোল্টের তিনটি ব্যাটারি, প্রায় ২৬ লাখ ৮০ হাজার ওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি ইনভার্টার বা আইপিএস, দুটি ফগ লাইটসহ অন্যান্য সরঞ্জাম। ব্যবহৃত ইঞ্জিনচালিত ট্রলারটি ভাড়ায় চালিত হওয়ায় জব্দ তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। জব্দ মালামাল থানার জিম্মায় রাখা হয়েছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েক মাস ধরে অন্য জেলা থেকে আসা একটি চক্র নিয়মিত এই পদ্ধতিতে মাছ শিকার করে আসছিল। ইলেকট্রিক ছিপি পানিতে প্রবেশ করানো হলে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ মিটার এলাকার পানির নিচে থাকা সব প্রাণী মুহূর্তেই মারা যায়। পরে বড়, মাঝারি ও ছোট মাছ ভেসে উঠলে সেগুলো তুলে এনে উপজেলার বিভিন্ন মাছের আড়ত ও বাজারে বিক্রি করা হতো।
শনিবার সকালে আন্ধারমানিক মাছের আড়তে ইলেকট্রিক শকে মারা মাছ বিক্রির সময় সন্দেহ হলে স্থানীয়রা চারজনকে ধাওয়া করেন। একজন পালিয়ে গেলেও তিনজনকে ধরে ফেলেন তারা।
হরিরামপুর উপজেলা মৎস্য অফিসের ইলিশ প্রকল্পের ক্ষেত্র সহকারী মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ইলেকট্রিক শক দিয়ে মাছ ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সকালে স্থানীয়রা তিনজনকে আটক করে আমাদের কাছে সোপর্দ করেছেন। আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ধরনের অবৈধ মৎস্য শিকার বন্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। তিনি অবৈধ শিকারিদের বিষয়ে তথ্য দিয়ে সহযোগিতার জন্য সাধারণ মানুষের প্রতি আহ্বান জানান।
হরিরামপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফাইজা বিসরাত হোসেন বলেন, প্রতিবেদন পাওয়ার পর মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। মৎস্য সুরক্ষা ও সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় দুইজনকে ৭ দিন করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় মুচলেকা নিয়ে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
