Logo
Logo
×

সারাদেশ

বাসায় ১২টি মাথার খুলি, প্রতিটি কঙ্কাল বিক্রি হয় ২০-৮০ হাজার টাকায়

Icon

আতাউল করিম খোকন/অমিত রায়, ময়মনসিংহ ব্যুরো

প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২০, ০১:৫৩ পিএম

বাসায় ১২টি মাথার খুলি, প্রতিটি কঙ্কাল বিক্রি হয় ২০-৮০ হাজার টাকায়

ময়মনসিংহ জেলার গহীন অরণ্য ও পাহাড়ি জনপদ মানবদেহের কঙ্কাল প্রক্রিয়াকরণের নিরাপদ স্থানে পরিণত হয়েছে। যে কারণে প্রায়শ জেলার বিভিন্ন স্থানে কবর থেকে লাশ চুরির খবর পাওয়া যায়। দীর্ঘদিন ধরে এ অঞ্চলে গড়ে উঠেছে কঙ্কাল পাচারকারীর সিন্ডিকেট।

শনিবার রাতে নগরীর আর কে মিশন রোডের একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে ১২টি মাথার খুলি ও দুই বস্তা মানবদেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ উদ্ধার করেছে কোতোয়ালি পুলিশ। এ সময় দুই কন্টেইনার তরল কেমিক্যাল ও তিন প্যাকেট গুড়া কেমিক্যালসহ বাপ্পি (২৫) নামে এক যুবককে আটক করে।

আটককৃত বাপ্পির নিকট থেকে চাঞ্চল্যকর ও লোমহর্ষক নানা তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি ফিরোজ তালুকদার।

প্রতিটি পূর্ণাঙ্গ কঙ্কাল সর্বনিম্ন ২০ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৮০ হাজার টাকা মূল্যে পার্শ্ববর্তী হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচারের উদ্দেশ্যে সংগ্রহ করা হয়েছিল বলে জানান তিনি।

আটককৃত বাপ্পি নগরীর কালীবাড়ি কবরস্থান এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে।

কঙ্কাল চুরি চক্রের সঙ্গে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের কতিপয় নেশাখোর ও মাদকাসক্তদের পাশাপাশি বিভিন্ন গোরস্থানের গোরখোর বা কবর খুঁড়াখুঁড়ির সাথে সংশ্লিষ্টরা জড়িত বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে তথ্য পেয়েছে। এছাড়া ময়মনসিংহে গহীন অরণ্য, পাহাড়ি জনপদ ও নির্জন স্থান বেশি থাকায় এই পেশার সাথে সংশ্লিষ্টরা কঙ্কাল প্রক্রিয়াকরণের নিরাপদ স্থান মনে করে অমানবিক কাজগুলো করে থাকে।

চক্রের সদস্যরা সামান্য টাকায় কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে সেই নির্জন স্থানে নিয়ে কেমিক্যাল মিশিয়ে বা দ্রুত পচনশীল পদার্থ ব্যবহারের মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত সম্পন্ন করে কঙ্কাল পাচারকারীদের হাতে তুলে দেয়।

কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি ফিরোজ তালুকদার জানান, কঙ্কাল চুরি চক্রের সদস্যরা কবর থেকে লাশ উত্তোলনের মাধ্যমে এ কঙ্কাল সংগ্রহ করে চরা মূল্যে নির্ধারিত ক্রেতাদের নিকট বিক্রি করে আসছিল। এমন সংবাদের ভিত্তিতে শনিবার রাতে নগরীর আরকে মিশন রোড এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে বাপ্পিকে আটক করে। এ সময় ১২টি মাথার খুলি ও দুই বস্তা হাড়গোড় জব্দ করে। বাসাটি ভাড়া নিয়ে কঙ্কাল সরবরাহ করতো। সেখান থেকে পাচার করা হতো বিভিন্নস্থানে।

ওসি জানান, কঙ্কাল চুরি চক্রের সদস্যরা জেলা-উপজেলার বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে রয়েছে। গোরস্থানের গোরখোর বা কবর খুঁড়াখুঁড়ির সঙ্গে জড়িতদের মাধ্যমে মৃত ব্যক্তির খবর চলে যায় এই পেশার সঙ্গে জড়িতদের কাছে। তারা প্রথমে কবর থেকে লাশ তুলে নির্জনস্থান, গভীর অরণ্য বা পাহাড়ি জনপদে নিয়ে কেমিক্যাল ব্যবহারের মাধ্যমে পচিয়ে গরম পানি দিয়ে ধুয়ে মানবদেহের পূর্ণাঙ্গ কঙ্কাল সংগ্রহ করে। পরে তুলে দেয়া হয় বিক্রির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের হাতে বা পাচারকারীর হাতে। তাদের মাধ্যমে এই কঙ্কাল চলে যায় মেডিকেল শিক্ষার্থী-শিক্ষক, চিকিৎসকসহ পার্শ্ববর্তী দেশ নেপাল ও ভারতে।

তিনি জানান, কালীবাড়ি গোরস্থানের কবর খুঁড়াখুঁড়ির কাজে সংশ্লিষ্ট চান মিয়াও এই চুরি চক্রের সঙ্গে জড়িত। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এছাড়াও সংশ্লিষ্ট সাতজনের নাম পাওয়া গেছে। তাদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আহমার উজ্জামান জানান, আটককৃত ব্যক্তির জবানবন্দি অনুযায়ী কঙ্কাল চুরির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া চলছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত স্পষ্ট করে কিছু বলা যাবে না। তবে কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে কঙ্কাল চুরি বন্ধে পুলিশ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক জানান, শুধু বাংলাদেশ নয়, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে এই কঙ্কালের মূল্য অনেক বেশি। কবর থেকে উত্তোলন করে একজন নেশাখোর ও মাদকাসক্ত কঙ্কাল সরবরাহকারী পায় মাত্র দুই থেকে ৫ হাজার টাকা। যা বিক্রি হয় ২০ থেকে ৮০ হাজার টাকায়। মানবদেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলোও পৃথক পৃথক মূল্যে বিক্রি হয়ে থাকে।

সূত্র জানায়, গোরস্থানের গোরখোর অনেকেই কঙ্কাল চুরি চক্রের সঙ্গে জড়িত। বিশেষ করে হালুয়াঘাট, ফুলবাড়িয়া, মুক্তাগাছা ও ভালুকা অঞ্চলে কঙ্কাল চুরির ঘটনা বেশি হয়। সেখানকার গহীন অরণ্য, পাহাড়ি জনপদ ও নির্জন স্থান বেশি থাকায় এই পেশার সাথে সংশ্লিষ্টরা ওই এলাকাগুলো নিরাপদ মনে করে কঙ্কাল চুরির মতো অমানবিক কাজগুলো করে থাকে।

এরআগে জেলার মুক্তাগাছা ও ভালুকা থেকে বিপুল পরিমাণ পূর্ণাঙ্গ কঙ্কাল ও কঙ্কালের অংশবিশেষ উদ্ধার করে পুলিশ।

ময়মনসিংহ

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম