অগ্নিদগ্ধ সন্তানকে বাঁচাতে মায়ের আকুতি
নিয়ামতপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৬ মে ২০২৫, ০৮:৫৯ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
‘চিকিৎসার অভাবে দিন দিন মৃত্যুর দিকে চলে যাচ্ছে আমার দুই বছর বয়সি শিশু বনি ইসরাইল। মা হয়ে কেমন করে এ যন্ত্রণা সহ্য করি; কিন্তু অর্থাভাবে করার কিছুই নাই। কেউ কি আছেন একটু সাহায্যের হাত বাড়াতে। আপনার দেওয়া একটু সাহায্য সহযোগিতায় ছেলে আমার ফিরে পেতে পারে মায়ের কোল।’
কান্নায় ভেঙে পড়ে কোলের সন্তানকে বাঁচাতে এমন আকুতির কথাই বলছিলেন নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের ইকরাপাড়া গ্রামের ফায়েমা বেগম নামে এক শিশু সন্তানের মা।
ফায়েমা ওই গ্রামের আবু সাঈদের স্ত্রী ও গোল মোহাম্মদের মেয়ে।
সরেজমিন দেখা যায়, ছোট চালাঘরের নিচে শিশু বনি ইসরাইলকে কোলে নিয়ে বসে আছেন মা ফায়েমা বেগম। শিশুটি তার পোড়া শরীরের ক্ষতের যন্ত্রণায় কাঁদছে অনবরত। তার হাত-পা থেকে খসে পড়েছে চামড়া ও মাংস। চামড়ার নিচের রগ বেরিয়ে এসেছে ভিতর থেকে। হাত-পা বাঁকা হয়ে গেছে। ক্ষতের জ্বালা যন্ত্রণায় ঠিকমতো খেতে না পারায় ক্ষীণ হয়ে গেছে শরীর। এমন পরিস্থিতিতে শিশুটিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে চরম উৎকণ্ঠা পরিবারের সদস্যদের।
আলাপচারিতায় জানা যায়, সাঈদ-ফায়েমা দম্পতির দুই ছেলে। বড় ছেলে ইমাম প্রাক-প্রাথমিকে পড়ে। আর ছোট ছেলে বনি ইসরাইল দুই বছর পেরিয়েছে। প্রায় দুই মাস আগে দুর্ঘটনার দিন বাড়ির উঠানে বড় ভাই ইমামের সঙ্গে খেলা করছিল বনি ইসরাইল। খেলার মধ্যে পাশে থাকা একটি ধান সিদ্ধ করার চুলায় পড়ে যায় সে। তার চিৎকারে পরিবারের লোকজন ছুটে এসে তাকে চুলার ভিতর থেকে উদ্ধার করে; কিন্তু এ সময়ের মধ্যেই তার চার হাত-পা পুড়ে ঝলসে যায়।
সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। সেখানে ৩০ দিন চিকিৎসার মধ্যে একটি অপারেশন হয়। পর্যায়ক্রমে ৪-৫টি অপারেশনের জন্য আরও ৯০ দিন থাকার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
কিন্তু চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র মোতাবেক ওষুধ কেনার টাকা ও আরও দীর্ঘ সময় (তিন মাস) রোগীকে নিয়ে থাকার সামর্থ্য না থাকায় অগ্নিদগ্ধ শিশুটিকে নিয়ে মনোকষ্টে গ্রামের বাড়ি ফিরে আসেন বাবা-মা। বর্তমানে বিনা চিকিৎসায় শিশুটির অবস্থা ভয়ংকর অবনতির দিকে।
কথা হয় শিশুটির মা ফায়েমা বেগমের সঙ্গে। তিনি জানান, স্বামী দিনমজুর। কৃষিকাজ করে কোনোরকমে সংসার চালান। শিশু সন্তানের এমন দুর্ঘটনায় চিকিৎসা বাবদ সর্বস্ব বিক্রি করে তিন লাখ টাকা খরচ করেছেন। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আরও তিন মাস হাসপাতালে থাকতে হবে এবং ব্যয় হবে প্রায় ৫ লাখ টাকা। তবেই তার শিশুসন্তান স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে পারে। শিশুটির মুখে হাসি ফোটাতে তিনি সমাজের হৃদয়বান বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করছেন।
