Logo
Logo
×

সারাদেশ

এক চালেই ভাত-পোলাও-খিচুড়ি-বিরিয়ানি-তেহারি

Icon

তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৮ মে ২০২৫, ১২:৫৬ পিএম

এক চালেই ভাত-পোলাও-খিচুড়ি-বিরিয়ানি-তেহারি

স্বশিক্ষিত কৃষিবিজ্ঞানী নূর মোহাম্মদ। বাড়ি রাজশাহীর তানোর পৌরসভার গোল্লাপাড়া মহল্লায়। তার উদ্ভাবিত চিকন চালের রান্না করা ভাত অনেক সুস্বাদু। একই চাল দিয়ে রান্না করা যাচ্ছে পোলাও, বিরিয়ানি, তেহারি, খিচুড়ি ও পায়েস।

আমন ও বোরো, দুই মৌসুমে চাষ করা যায় এ ধান। নিজের নামানুসারে তিনি জাতটির নাম দিয়েছেন ‘নূর ধান-২’। তিন বছর আগে উদ্ভাবিত এ জাতের ধানের চাষ হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জায়গায়।

কৃষকপর্যায়ে গবেষণার মাধ্যমে নূর মোহাম্মদ কৃষির উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরেই। মূলত খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলে সেচের অভাবে ধানখেত নষ্ট হতে যাওয়া দেখেই গবেষণায় নামেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম ও একাগ্রতার সঙ্গে গবেষণা করে উদ্ভাবন করেছেন আউশ, আমন ও বোরো ধানের প্রায় ২০০ কৌলিক সারি।

নূর মোহাম্মদের দাবি, তার উদ্ভাবিত সারিগুলোর জীবনকাল অন্যান্য জাতের তুলনায় কম, উচ্চফলনশীল, সরু, সুগন্ধিযুক্ত ও খরাসহিষ্ণু।

কৃষিতে অবদানের জন্য নূর মোহাম্মদ ২০০৫ সালে রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন। গত বছর নভেম্বরে মালয়েশিয়ার পেনাং শহরে কৃষক-বিজ্ঞানী সম্মেলনে আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন তিনি।

গত ৭ মে নূর মোহাম্মদের জমি থেকে নূর ধান-২ কাটা হয়। ওই সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিয়াকত সালমান, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বাবুল হোসেন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ওয়াজেদ আলী, উপজেলা পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপক সোহেল রানা, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেন, সহকারী পরিসংখ্যান কর্মকর্তা আনারুল ইসলাম, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শাহাদাৎ হোসেনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

সেদিন নূর মোহাম্মদ কৃষি পরিষেবা ফার্মে গবেষণা প্লটের মধ্যে শুধু নূর ধান-২ কাঁটা করা হয়। মাড়াই শেষে বিঘা প্রতি ফলন পাওয়া যায় ২৬ মণ। চালের হিসেবে বিঘা প্রতি ফলন ১৬ দশমিক ৬ মণ। কর্তনের দিন পূর্ণবয়স্ক গাছের গড় উচ্চতা ছিল ১১৩ সেন্টিমিটার। কুশির সংখ্যা ছিল গড়ে ১১টি। ছড়ার গড় দৈর্ঘ্য ২৬ সেন্টিমিটার। এক হাজার পুষ্টদানার ওজন ১২ দশমিক ৭০ গ্রাম। গাছের জীবনকাল ছিল ১৪০ দিন। এ ধানের ভাত সরু ও চিকন।

নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘আমন ও বোরো মৌসুমেই এ ধান চাষ হয়। আমনে বিঘা প্রতি গড় ফলন পাওয়া গিয়েছিল ১৯ মণ। সেই তুলনায় বোরো মৌসুমে ফলন অনেক বেশি। এবার বোরো মৌসুমে রাজশাহীর বেশকিছু চাষি বীজ নিয়ে এ ধান চাষ করেছিলেন। এছাড়া নাটোর, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, মাগুরা, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, কক্সবাজার ও খুলনায় এ বীজে ধান চাষ হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, গতবছর অনেকে আমার কাছ থেকে বীজ নিয়ে ধান চাষ করেছিলেন। তাদের কাছ থেকে এবার কেউ কেউ বীজ নিয়ে চাষ করেন। এভাবে জাতটি ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে।’

নূর মোহাম্মদের দাবি, নতুন এ ধানের গাছ মজবুত। তাই সহজে হেলে পড়ে না। রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ অন্যান্য জাতের তুলনায় কম। স্বল্প জীবনকাল, উচ্চ ফলনশীল, সরু,  সুগন্ধিযুক্ত ও খরা সহিষ্ণু। ১৫ থেকে ২০ দিন পর্যন্ত সেচ বা বৃষ্টি না পেলেও খরা মোকাবিলা করে ভালো ফলন দিতে সক্ষম এ জাত। এক চালেই সব হওয়ায় বাজারে ভালো দামও পাওয়া যায়।’

তানোর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘ধান কাটার দিন আমি খেতে ছিলাম। ধানের সবকিছু ভালোই মনে হয়েছে। ধান কাটার পরে নূর মোহাম্মদ এক কেজি চাল অফিসে পাঠিয়েছিলেন। চালও খুব সরু। বাজারে যে জিরা ধানের চাল পাওয়া যায়, এটি তার চেয়েও সরু এবং মানের দিক থেকেও অনেক ভালো। ফলে এই চাল দিয়ে সবকিছুই খাওয়া যাবে।’

তানোর নূর ধান-২

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম