ধান কাটার মজুরি না পেয়ে থানায় অভিযোগ শ্রমিকের
শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০ মে ২০২৫, ০৮:৪৪ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
কাজ করেই চলে দিনমজুরদের সংসার। কাকডাকা ভোরে বের হতে হয় স্ত্রীসহ ছেলেমেয়েদের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার জন্য অর্থের সন্ধানে। তাইতো প্রতিদিনের মতো হাতে কাস্তে ও কাঁধে বাইন (বাঁশের তৈরি জড়বস্তু, যেটির দুপাশে ভারি পণ্যসামগ্রী বেঁধে রেখে বহন করা হয়) নিয়ে শ্রম বিক্রি করতে নিজে হাজির হন শ্রমিক বাজারে।
দিন শেষে মজুরি বিক্রির টাকা দিয়ে করা হয় বাজার। আর টাকা না পেলে উপোস করে কাটাতে হয় ওই পরিবারকে।
এমনই একজন ৫৭ বছরের শ্রমিক আব্দুল হান্নান। তিনি শেরপুর উপজেলার কুসুম্বী ইউনিয়নের বাগড়া গ্রামের মৃত মোজাম্মেল হকের ছেলে। আব্দুল হান্নান গত সোমবার দিনভর শ্রম বিক্রি হিসেবে ধান কাটার কাজ শেষ করেও মালিকের কাছ থেকে মজুরি না পেয়ে দিশেহারা হয়ে থানায় অভিযোগ করেন।
শুধু তিনিই নন; তার সঙ্গে দিনমজুরির টাকা না পাওয়ার অভিযোগ একমত পোষণ করেন আরও চারজন শ্রমিক।
জানা গেছে, সোমবার বগুড়ার শেরপুর উপজেলার মির্জাপুর সরকারপাড়া গ্রামের রাজেক আলীর ছেলে আব্দুল কুদ্দুস আলীর জমির ধান কাটায় নিয়োজিত ছিলেন আব্দুল হান্নানসহ কয়েকজন। শ্রমিকদের কাজের বিনিময়ে অর্থ না দেওয়া, বাগবিতণ্ডা ও হুমকি ধমকির অভিযোগ তোলেন শ্রমিকরা।
এ ঘটনায় ওই ভুক্তভোগী ৫ শ্রমিকের পক্ষে সোমবার রাতে আব্দুল হান্নান বাদী হয়ে শেরপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এ সময় দিনমজুর শেরপুর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর নামাপাড়া গ্রামের মৃত মনসুর মণ্ডলের ছেলে হাফিজুর রহমান, মৃত সাহেব আলী প্রামাণিকের ছেলে আশরাফ আলী, মোহাম্মদ বেলাল হোসেনের ছেলে রিপন ও আবির হোসেন আকন্দের ছেলে হুমায়ুন কবির তার সঙ্গে ছিলেন।
তারা তাদের দিনমজুরির ৩ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধারসহ ধান কাটাতে নেওয়া জমির মালিকের বিরুদ্ধে শাস্তি দাবি করেন।
শ্রমিক হাফিজুর, আশরাফ, রিপন ও হুমায়ুন বলেন, তারা প্রতিদিনের মতো তাদের শ্রম বিক্রি করতে শেরপুরের ঘাটপাড় (করতোয়া নদীর ব্রিজ) সংলগ্ন ‘শ্রমিকের হাট’ নামক স্থানে উপস্থিত হয়ে থাকে। আর সেখান থেকেই তাদের শ্রম কিনে নিতে অধিকাংশ জমির মালিকরা দামদর করে দিনমজুর ভাড়া নিয়ে থাকেন। এ বাজার থেকেই তাদের প্রতিদিনের কাজ ও আয়-রোজগারের সন্ধান মেলে। যেদিন শ্রম বিক্রি করতে না পারেন, সেদিন পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেকটাই অর্ধাহারে-অনাহারে দিনাতিপাত করতে হয়।
সারা দিন হাড়ভাঙা খাটুনির পর যদি মজুরি থেকে বঞ্চিত হতে হয় তাহলে কিভাবে চলবে তাদের সংসার। এমন আক্ষেপ ও ক্ষোভ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন ভুক্তভোগী শ্রমিকরা। তখন তাদের চোখে মুখে যেমন ক্লান্তি ছিল, তেমনি ছিল হতাশা আর না পাওয়ার বেদনা।
এ বিষয়ে দিনমজুর আব্দুল হান্নান জানান, শেরপুরের শ্রমিক বাজার থেকে মির্জাপুর সরকারপাড়া গ্রামের ফিরোজ আলী ৭০০ টাকা জনপ্রতি দিনমজুরি দেবে মর্মে আমাদের পাঁচজনকে নিয়ে যায়। আমরা তাদের চাহিদা মতো দেড় বিঘা জমির ধান কেটে ও বহন করে জমির মালিকের আঙিনায় নিয়ে আসি। দিনশেষে মালিক ভালো কাজ হয়নি মর্মে অভিযোগ তুলে আমাদের মজুরির টাকা না দিয়ে গালিগালাজ করেন। একপর্যায়ে তার সঙ্গে বাগবিতণ্ডাকালে তিনি বিভিন্ন হুমকি-ধমকি দিয়ে আমাদের বিতাড়িত করে দেন। তাছাড়া ওই মালিক দিনমজুরির টাকা না দিলেও সকাল ও দুপুরে খাবার দিয়েছেন; কিন্তু মজুরির টাকা পেতে উপায়ন্তর না পেয়ে আমরা থানা পুলিশের আশ্রয় নিয়েছি।
অপরদিকে ওই সব দিনমজুর নেওয়া জমির মালিক আব্দুল কুদ্দুসের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া যায়নি।
শেরপুর থানার ওসি শফিকুল ইসলাম জানান, শ্রমিকদের অভিযোগ পেয়েছি। ওই ইউনিয়নের সংশ্লিষ্ট দারোগাকে বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
