Logo
Logo
×

সারাদেশ

ঠাকুরগাঁও সীমান্তে পুশইন করা ২৩ জনকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর

Icon

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২৫, ০৬:২৩ পিএম

ঠাকুরগাঁও সীমান্তে পুশইন করা ২৩ জনকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর

ঠাকুরগাঁও সীমান্ত দিয়ে পুশইন করা ২৩ বাংলাদেশির পরিচয় শনাক্ত করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাদের মধ্যে রয়েছেন ৫ জন পুরুষ, ১২ জন নারী ও ৬ জন শিশু।  

রোববার দুপুরের মধ্যে তাদের নিজ নিজ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

বিজিবি দিনাজপুর ব্যাটালিয়নের (৪২ বিজিবি) পক্ষ থেকে জানানো হয়, শনিবার রাত ১টা ৩০ মিনিটে ভারতের চাপসার সীমান্ত পিলার ৩৪৭/১-এস পয়েন্ট দিয়ে ২৩ বাংলাদেশিকে পুশইন করে বিএসএফ। বিজিবির টহল দল তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদের আটক করে হরিপুর থানায় হস্তান্তর করে।

জিজ্ঞাসাবাদে আটক ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, তারা ৫-৩০ বছর আগে জীবিকার খোঁজে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে পাড়ি জমান। অনেকেই কাজ করতেন মুম্বাইয়ের নির্মাণ খাত, গৃহকর্ম বা কারখানায়। সম্প্রতি স্থানীয় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর বিএসএফ তাদের সীমান্তে এনে বাংলাদেশে ফেরত পাঠায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী ভুক্তভোগী বললেন, বিএসএফ আমাদের বলেছিল, পেছনে তাকালে গুলি করবে। আমরা কাপড়চোপড় তো দূরের কথা, একটা সুতোও নিতে পারিনি। এক কাপড়ে ফিরেছি। সন্তানকে বুকে জড়িয়ে শুধু দৌড়েছি, চোখের পানি আর থামেনি।

২০ বছর ধরে মুম্বাইয়ে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করা আরেক যুবক কান্না জড়ানো গলায় বললেন, আমার বৃদ্ধ মা ছাড়া দেশে কেউ নেই। হাতে একটা টাকাও নেই। কিভাবে বাঁচব জানি না; কিন্তু দেশে ফিরেছি- এটুকুই শান্তি।

একজন কিশোরী বললেন- আমি তো বাংলাদেশ কেমন সেটা জানিই না। জন্ম ভারতের এক শহরতলিতে, স্কুলে যেতাম। এখন এই স্কুলঘরে বন্দি। এটা কি আমার বাড়ি?

বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, আটক ব্যক্তিদের বেশিরভাগই সাতক্ষীরা, খুলনা, যশোর ও নড়াইল জেলার বাসিন্দা। তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মসনদ এবং পারিবারিক তথ্য যাচাই করে পরিচয় নিশ্চিত করা হয়েছে।

হরিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকারিয়া মণ্ডল বলেন, তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর পরিবারগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। পরে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা বলেন, আটকদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে করা হয়েছে। কেউ নতুন পোশাক বা ওষুধ চাইলে সেটিও দেওয়া হবে। আমরা চাই, তারা যেন সম্মানজনকভাবে নিজেদের ঘরে ফিরতে পারেন।

মানবাধিকার সংগঠন ‘মানবপথ’-এর ঠাকুরগাঁও শাখার সমন্বয়ক রুবিনা ইয়াসমিন বলেন, এটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর মানবিক ঘটনা। পুশইন প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের পরিপন্থি। অনেকেই ভারতে জীবিকা নির্বাহ করছিলেন, হঠাৎ করে এভাবে তাদের ফেরত পাঠানো তাদের জন্য সামাজিক, অর্থনৈতিক ও মানসিক চাপ তৈরি করছে। আমরা চাই, সরকার তাদের পুনর্বাসনে বিশেষ উদ্যোগ নিক।

তিনি আরও বলেন, এই পরিবারগুলোর প্রতি সামাজিক এবং রাষ্ট্রের সহানুভূতি জরুরি। অনেক সময় এমন ফেরত আসা মানুষজনকে অবিশ্বাসের চোখে দেখা হয়, যা তাদের আত্মমর্যাদাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম