Logo
Logo
×

সারাদেশ

বিয়েতে ফিরল হারানো ঐতিহ্য

Icon

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৫, ০৪:১০ পিএম

বিয়েতে ফিরল হারানো ঐতিহ্য

পালকিতে বসে আছেন নববধূ। মুখে লাজুক হাসি। বারে ঘোড়ার পিঠে অপেক্ষা করছেন বর।  গরু-মহিষের গাড়ির বহরে এসেছে বরযাত্রী। মনে হচ্ছে যেন কোনো নাটক-সিনেমা বা গল্পের দৃশ্য। তবে এটা কোনো নাটকের সেট নয়, বাস্তব এক বিয়ের আয়োজন।

ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার খাকড়তলা গ্রামের ব্যবসায়ী আনিসুজ্জামান শুভ বিয়ে করতে যান ঘোড়া গাড়ি করে। আর বরযাত্রীরা যান মহিষ ও গরুর গাড়িতে করে, যা এখন গোটা এলাকায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।

আনিসুজ্জামান শুভর বাবা শফিকুর রহমান চেয়েছিলেন ছেলের বিয়ে হোক গ্রামবাংলার পুরোনো ঐতিহ্য মেনে- পালকি, ঘোড়ার গাড়ি ও গরুর গাড়িতে। বাবা আর নেই। কিন্তু ছেলের মনে গেঁথে আছে তার সেই ইচ্ছা। বাবার স্বপ্ন পূরণেই এমন আয়োজন করলেন শুভ।

শুক্রবার দুপুরের দিকে খাকড়তলা গ্রামের মেঠোপথ ধরে এগোচ্ছে ঘোড়ার গাড়ি, পেছনে গরু-মহিষের গাড়ির লম্বা বহর। বরযাত্রীদের কেউ পাঞ্জাবি পরে, কারও মাথায় গামছা জড়ানো। আশপাশের গ্রামের মানুষ দলে দলে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে দেখছে—স্মার্টফোনে ছবি তুলছে, ভিডিও করছে।

যাদুরানী গ্রামের শাহাবুদ্দিনের বাড়িতে কনে রিপা অপেক্ষা করছিলেন পালকির জন্য। শুভ এসে পৌঁছাতেই পালকি সাজিয়ে তোলা হলো। সেই পালকিতে বসে কনে রওনা দিলেন শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশ্যে।

৭২ বছর বয়সি স্থানীয় বাসিন্দা রহিমউদ্দিন বললেন, ‘আমার ছেলেবেলায় এমন করেই বিয়ে হতো। আবার যেন সেই দিনটা ফিরে এলো।’

বিয়ের পরদিন বৌভাতের আয়োজন। ডেকোরেশন ছিল, খাওয়ার ব্যবস্থা ছিল, লোকজনও এসেছিলেন প্রচুর। শুধু ছিল না কোনো উপহারের খাম। ছিল না কোনো প্রত্যাশা।

বর শুভ বললেন, ‘বিয়ে মানেই তো আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়া। সেটাই করেছি। কাউকে কিছু নিয়ে আসতে হয়নি। সবাই খুশি মনেই এসেছেন।’

ঘোড়ার গাড়ির চালক রতন চন্দ্র রায় বললেন, ‘এখন তো আর কেউ আমাদের ডাকেই না। এ বিয়েতে আসতে পেরে অনেক ভালো লাগছে।’ একই কথা পালকি বাহকদেরও। তারা বলেন, ‘আগে যা ছিল পেশা, এখন তা শুধুই স্মৃতি। আজ মনে হলো, আমরা এখনো প্রয়োজনীয়।’

নববধূ রিপা বলেন, ‘ছোটবেলায় গল্প শুনতাম পালকিতে করে কনে যেত। ভাবিনি, আমার জীবনে এমনটা হবে।’

আমগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হবিবর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘এখনকার যুগে এমন বিয়ে দেখাই যায় না। নতুন প্রজন্মের জন্য এটা শেখার মতো।’

এ বিয়ের মাধ্যমে যেন কেবল দুজন মানুষের জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হয়নি, শুরু হয়েছে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যের প্রতি ভালোবাসাও। বিশিষ্ট শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিদ অধ্যাপক মনতোষ কুমার দে বলেন, ‘আবহমান বাংলার ঐতিহ্য ধারণ করেছে যে পরিবার, আমি তাদের সাধুবাদ জানায়।’

হরিপুর থানা ওসি মোহাম্মদ জাকারিয়া মন্ডল বলেন, ‘বিয়েটা এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। এটি যেন আমাদের শিকড়ের টান।’

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম