হাত-পা বেঁধে নারীকে তুলে নেওয়ার ভিডিও ভাইরাল, যা বলল পুলিশ
যুগান্তর প্রতিবেদন, রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী)
প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৫, ০৫:০০ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রাতের আঁধারে এক নারীকে হাত-পা বেঁধে তুলে নেওয়ার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, এক নারীকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ সময় কেঁদে কেঁদে ওই নারী চিৎকার করে বলছেন, ‘আমারে বাঁচা, বাঁচা আমারে, আমারে একটু বাঁচা।’
শনিবার মধ্যরাতে ঘটনাটি ঘটেছে পটুয়াখালীর
রাঙ্গাবালী উপজেলার মৌডুবি ইউনিয়নের মাঝের দেওর গ্রামের। তবে পুলিশ বলছে, এটি পারিবারিক
ঘটনা।
শনিবার রাত দেড়টার দিকে ভিডিওটি সামাজিক
যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ করেন মাঝের দেওর গ্রামের মৃত কাসেম গাজীর ছেলে কামাল
গাজী, যা মুহূর্তেই দেশজুড়ে ভাইরাল হয়। ভাইরাল ওই ভিডিওর ক্যাপশনে তিনি দাবি করেন,
ভিডিওতে যাকে তুলে নেওয়া হচ্ছে, তিনি তার স্ত্রী।
ক্যাপশনে তিনি লেখেন, ‘আমার বাড়িতে গিয়ে
আমার কলিজা বউকে এভাবে মারতে মারতে হাত-পা বেঁধে নিয়ে গেছে একটু আগে। দেশবাসীর কাছে
সহযোগিতা কামনা করছি। আমার কলিজাটাকে বাঁচান।’
এর আগে এ ঘটনায় বিএনপির লোকজনকে দায়ী করে
আরেকটি পোস্ট করেছিলেন কামাল গাজী। যে কারণে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয় ও ঘটনাটি রাজনৈতিক
ইস্যুতে মোড় নিচ্ছিল। পরে এটি যে পারিবারিক ইস্যু তা জানাজানি হলে সেই পোস্ট মুছে ফেলেন
কামাল। কিন্তু ভিডিওসহ তার দেওয়া পরবর্তী পোস্টটি মূল আলোচনায় এসেছে। রোববার দুপুর
১টা পর্যন্ত ওই ভিডিওটি ৮ মিলিয়ন ভিউ হয়েছে।
জানা গেছে, ঘটনার সময় কামাল গাজী নিজ বাড়িতে
ছিলেন না।
পুলিশ বলছে, ভিডিওতে দেখা যাওয়া নারীর
নাম উম্মে সুলতানা তন্বী। তিনি একই ইউনিয়নের বাইলাবুনিয়া গ্রামের শাখাওয়াত হাওলাদারের
মেয়ে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কামাল গাজী
এবং ওই মেয়ের পরিবার ভিন্ন রাজনীতি করে। তন্বীর পরিবার স্থানীয় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত, আর কামাল গাজী নিষিদ্ধ
সংগঠন ছাত্রলীগের রাঙ্গাবালী উপজেলা শাখার সহসভাপতি।
রাঙ্গাবালী থানার ওসি এমারৎ হোসেন বলেন,
তদন্তে জানা গেছে, কামাল গাজীর সঙ্গে ওই মেয়ের গোপনে বিয়ে হয়েছে। তবে বিয়ের কোনো ডকুমেন্টস
পাওয়া যাচ্ছে না। সপ্তাহখানেক আগে তন্বী স্বেচ্ছায় কামালের বাড়িতে আসেন। এরপর থেকে
ওই বাড়িতে অবস্থান করছিলেন তিনি।
ওসি আরও বলেন, শনিবার রাতে তন্বীকে তার
বাবাসহ পরিবারের কয়েকজন সদস্য জোরপূর্বক নিয়ে যান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তন্বীর বাবা
শাখাওয়াত, চাচা ছাত্তার হাওলাদার, মামা জাহিদসহ আরও কয়েকজন। এদের মধ্যে স্থানীয় বিএনপির
রাজনীতিতে জড়িত লিটু গাজী, মোহসীন হাওলাদার, এরশাদ এবং স্থানীয় ইউপি সদস্য ইলিয়াস গাজী
ছিলেন। তবে এটি কোনো রাজনৈতিক ইস্যু নয়, পারিবারিক ঘটনা।’
এদিকে, রোববার সকালে ফেসবুকে আরেকটি পোস্ট
দিয়ে কামাল গাজী। সেই পোস্টে তিনি লেখেন, এখন পর্যন্ত কোনো সহযোগিতা পায়নি। রাতে আমার
মা-বোনকে মারধর করে স্ত্রীকে নিয়ে গেছে।’ কারা তার স্ত্রীকে তুলে নিয়ে গেছে তা জানিয়ে
তিনি বলেন, ‘শাখাওয়াত, ছত্তার ও এশশাদ।’
অভিযোগ অস্বীকার করে তন্বীর বাবা শাখাওয়াত
হাওলাদার বলেন, ‘আমার পদ-পদবি নেই। কিন্তু আমি বিএনপির রাজনীতি করি৷ রাত ১২টার দিকে
স্থানীয় ইউপি সদস্য ইলিয়াস গাজীর উপস্থিতিতে ছেলের পরিবার আমাদের হাতে মেয়েকে তুলে
দিয়েছে। তাদের বিয়ের কোনো কাগজপত্র নেই। আমি পটুয়াখালী নোটারী পাবলিকের সব উকিলের কাছে
গিয়ে খোঁজাখুঁজি করেছি। ছেলে ৫ আগস্টের পর থেকে এলাকায় নেই। এভাবে মেয়ে গিয়ে আরেকজনের
বাড়িতে উঠে থাকায় আমাদের সম্মানহানি হচ্ছিল। তাই আমরা গিয়ে নিয়ে আসছি। আমি বলেছি, ছেলে
যদি এসে কাগজপত্র দেখাতে পারে তখন আমরা মেয়েকে দিয়ে দিবো।’
