ঢাবির সাবেক শিক্ষার্থীর লাশ মিলল লেকে, পরিবারের দাবি হত্যা
বগুড়া ব্যুরো
প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৫, ০৬:৫০ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বগুড়ার শাজাহানপুরের মাঝিরা বি-ব্লক এলাকায় বোট ক্লাবের লেক থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী হাসিন রাইহান সৌমিকের (২৭) মরদেহ উদ্ধার নিয়ে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
সিসিটিভির ফুটেজ দেখে পুলিশ বলছে, তিনি লেকে নেমে আত্মহত্যা করেছেন।
আবার তার বাবা, চাচা ও পরিবারের সদস্যরা দাবি করছেন, পূর্ব বিরোধে সৌমিককে শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্বজনরা জানান, হাসিন রাইহান সৌমিক বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার বোচারপুকুর গ্রামের তৌফিকুর রহমান হেলালের ছেলে। তারা দীর্ঘদিন ধরে বগুড়া শহরের জলেশ্বরীতলার নূর মসজিদ এলাকায় ‘কোহিনুর গার্ডেনের’ ৫ম তলার ফ্ল্যাটে বসবাস করেন। সৌমিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে মাস্টার্স শেষ করেন। বৃত্তি নিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস ডালাসে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
সৌমিক গত ২৬ জুন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে হাঁটার জন্য বগুড়া শহরের জলেশ্বরীতলার বাসা থেকে বের হন। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ ও তার মোবাইল ফোন বন্ধ ছিল। পরদিন তার বাবা তৌফিকুর রহমান বগুড়া সদর থানায় ছেলে নিখোঁজের ব্যাপারে সাধারণ ডায়েরি করেন। তারপর থেকে পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীরা দিনরাত তাকে খোঁজাখুঁজি করেন।
এদিকে রোববার বেলা ১০টার দিকে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার মাঝিরা বি-ব্লক এলাকায় বোট ক্লাবের লেকে তার মরদেহ ভাসতে দেখা যায়। পরে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে। পরিবারের সদস্যরা এসে সৌমিকের মরদেহ শনাক্ত করেন। তার প্যান্টের পকেটে পলিথিনে মোড়ানো মানিব্যাগ ও ব্লুটুথ পাওয়া গেছে।
শাজাহানপুর থানার ওসি শফিকুল ইসলাম পলাশ ও ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মাসুদ করিম জানান, সুরতহালে তার শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, রাতে সৌমিক নিজেই লেকে নামেন। এরপর তার মৃত্যু হয়। মরদেহ বগুড়া শজিমেক হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে; ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে এটি হত্যা না আত্মহত্যা সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
লেক থেকে মরদেহ উদ্ধারের সময় উপস্থিত শাজাহানপুর উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের সদস্য তাজুল ইসলাম জানান, লেকে যে পরিমাণ পানি ছিল তাতে একজন যুবকের পড়ে ডুবে যাওয়া সম্ভব নয়। লাশ পানিতে উপুড় হয়ে ভাসছিল। নাক দিয়ে রক্ত ঝরছিল।
বাবা তৌফিকুর রহমান হেলাল ও চাচা সোনাতলা উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আহসান হাবিব রতন জানান, ঢাবি থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে মাস্টার্স মেধাবী সৌমিক বৃত্তি নিয়ে আমেরিকায় উচ্চতর ডিগ্রি নিতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তার কোনো হতাশা ছিল না। এছাড়া বাড়ি থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে আত্মহত্যার কোনো কারণ নেই।
তারা দাবি করেন, ফ্ল্যাটের এসির পানি পড়া নিয়ে ঈদের আগে নিচতলার এক ভাড়াটিয়ার সঙ্গে সৌমিকের ঝগড়া হয়েছিল। তাদের ধারণা, ওই ঘটনার জেরে সৌমিককে পরিকল্পিতভাবে শাজাহানপুরে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
সৌমিকের বাবা ও চাচা আরও বলেন, হত্যাকাণ্ডে জড়িত চক্র সৌমিকের নামে ঢাকায় যাওয়ার বাসের টিকিট সংগ্রহ করেছে। এছাড়া তার মোবাইল ফোনে বরিশাল ও ঢাকার মতিঝিল থেকে আসা ফোনের রেকর্ড রয়েছে। ওই চক্র এ হত্যাকাণ্ডকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ঢাকার টিকিট সংগ্রহ দেখায়। শিগগিরই তারা এ ব্যাপারে হত্যা মামলা করবেন। বাবা তৌফিকুর রহমান হেলাল ছেলের হত্যাকারীদের ফাঁসি দাবি করেন।
এদিকে বগুড়া শজিমেক হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে বিকালে সৌমিকের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তার মরদেহ দাফনের জন্য গ্রামের বাড়ি সোনাতলার বোচারপুকুর গ্রামে নেওয়া হয়েছে। সৌমিকের মৃত্যুতে শুধু তার পরিবারে নয়; পুরো গ্রামবাসী ও বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
