চাঁদাবাজির অভিযোগে পুলিশ সদস্যকে গাছে বেঁধে মারধর
বগুড়া ব্যুরো
প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৫, ১১:৫৩ এএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বগুড়ার শাহাজানপুরে চাঁদাবাজির অভিযোগে এক পুলিশ সদস্যকে আটকে রেখে মারধর করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শাহাজানপুর পৌরসভার ২১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুল বাকীর বাড়িতে গুলি রেখে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে ধরা খান ওই পুলিশ সদস্য। পরে বিক্ষুব্ধ জনতা তাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করে।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) দুপুরে শাহাজানপুর পৌরসভার নিশ্চিন্তপুর শাহ্পাড়া
গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ ও সেনা সদস্যরা গিয়ে ওই পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করেন। পুলিশ
প্রহরায় তাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মারধরের শিকার ওই পুলিশ সদস্যের নাম রুহুল আমিন। তিনি কনস্টেবল পদে পুলিশ
লাইন্সে কর্মরত রয়েছেন।
এ ঘটনায় ওই আওয়ামী লীগ নেতার মেয়ে অ্যাডভোকেট শাপলা খাতুন শাজাহানপুর
থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ওসি শফিকুল ইসলাম এর সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘অপরাধ
করলে পুলিশে দিতে পারতো। কিন্তু, মারপিট করা অন্যায়।’
অ্যাডভোকেট শাপলা খাতুন ও এলাকাবাসীরা জানান, পূর্বের একটি অপরাধে কনস্টেবল
রুহুল আমিন পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত। তিনি প্রায় এক সপ্তাহ আগে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে নিশ্চিন্তপুর
শাহ্ পাড়ার বাড়িতে এসে আওয়ামী নেতা আবদুল বাকীর
খোঁজ নেন। তিনি বাড়িতে না থাকায় এ সময় খরচ হিসেবে ৫০০ টাকা নিয়ে চলে যান।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে আবারও ওই বাড়িতে আসেন কনস্টেবল রুহুল আমিন।
এ সময় বাড়িতে কোনো পুরুষ সদস্য ছিলেন না। বেলা দেড়টার দিকে বাকীর ছেলে সাজ্জাদ হোসেন
সবুজ (৩২) বাড়িতে আসেন। এ সময় কনস্টেবল রুহুল আমিন বলেন, ৫ আগস্ট সদর থানা থেকে অনেক
অস্ত্র লুট হয়েছে। এ বাড়িতে কিছু অস্ত্র আছে বলে তিনি সবুজকে পাশের বাড়িতে ডেকে নিয়ে
যান। সেখানে টিনের মতো বাক্স খুলতে বলেন। সবুজ বাক্সটি খুললে ভেতরে শর্টগানের পাঁচ
রাউন্ড গুলি বের হয়। এরপর কনস্টেবল রুহুল আমিন আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে সবুজকে বাড়ির
ভেতরে নিয়ে এসে বসেন। একটি ব্যাগ বের করে তার ভেতরে ১৫ রাউন্ড গুলি বের করে বলেন, এসব
দিয়ে মামলা দেওয়া হবে।
কনস্টেবল রুহুল আমিনের কথায় সবুজ বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। তিনি বোন অ্যাডভোকেট
শাপলা খাতুনকে ফোন দেন। রুহুল আমিন ওই ফোন দিয়ে শাপলা খাতুনের সঙ্গে কথা বলেন। তখন
তিনি (শাপলা) জানান, তার ভাই সবুজ ব্রেন টিউমারের রোগী এবং তাকে ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেন।
আর না ছাড়লে থানায় নিয়ে যেতে বলেন।
এ সময় কনস্টেবল রুহুল আমিন অ্যাডভোকেট শাপলাকে বলেন, ধরে নিয়ে যাওয়ার
জন্য তো অপেক্ষা করছি না। এক লাখ ৩০ হাজার টাকা দিলে তাকে (সবুজ) ছেড়ে দেওয়া হবে। এত
টাকা দেওয়া সম্ভব নয় বললে রুহুল আমিন বলেন, আমরা প্রায় ৮ থেকে ৯ জন পুলিশ আছি। তিনি
ভেতরে একা ও বাকিরা বাহিরে আছেন। এক লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে সবুজকে ছাড়িয়ে নিতে বলেন।
এমতাবস্থায় অ্যাডভোকেট শাপলা খাতুন ও স্বামী শাহাদত আলম কোর্ট থেকে অটোরিকশায়
বাড়িতে আসেন। তিনি আসার পর আশপাশের লোকজন সমবেত হতে শুরু করেন। পুলিশ কনস্টেবল চাঁদাবাজি
করতে এসেছেন বুঝতে পেরে জনগণ তাকে আটক করে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করেন। এ সময় অ্যাডভোকেট
শাপলা খাতুন জাতীয় পরিসেবা ৯৯৯-এ ফোন দিলে পুলিশ ও সেনা সদস্যরা এসে কনস্টেবল রুহুল
আমিনকে নিয়ে যান। পরে এ আইনজীবী শাজাহানপুর থানায় কনস্টেবলের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ
দেন।
ওসি শফিকুল ইসলাম পলাশ বলেন, ‘কনস্টেবল রুহুল আমিনকে হাসপাতালে ভর্তি
করা হয়েছে। রুহুল আমিন রাতে ডিউটি করে অস্ত্র জমা দিয়েছেন। হয়তো সরকারি গুলিগুলো জমা
দেননি। আওয়ামী লীগ নেতার মেয়ে অ্যাডভোকেট শাপলা খাতুন থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আগের একটি অভিযোগের ভিত্তিতে কনস্টেবল রুহুল আমিনকে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত
করা হয় বলেও জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
