Logo
Logo
×

সারাদেশ

তাঁত শিল্পে দুর্দিন, লোকসানে এক একে বন্ধ হচ্ছে কারখানা

Icon

এমএ আলিম রিপন, সুজানগর (পাবনা)

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৫, ০৪:০৫ পিএম

তাঁত শিল্পে দুর্দিন, লোকসানে এক একে বন্ধ হচ্ছে কারখানা

ছবি : যুগান্তর

ভোরের আলো ফুটতেই শোনা যেত তাঁতের খট খট শব্দ। তবে দিনকে দিন এ শব্দ কমে যাচ্ছে। দফায় দফায় তাঁত কাপড়ের কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদন খরচ তুলতে পারছে না প্রান্তিক তাঁতিরা। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ব্যাংকের উচ্চ সুদহার। এর জেরে বাধ্য হয়ে বন্ধ বা বিক্রি করে দিতে হচ্ছে ছোট ছোট কারখানাগুলো। ঘটনাটি পাবনার সুজানগর উপজেলার।

উপজেলার কুড়িপাড়া দুলাই, সাগরকান্দি, গোয়ারিয়া, কাঁচুরী, আহম্মদপুর, ভাটপাড়া, নিশ্চিন্তপুর, চলনা, গোপালপুর, ঘোড়াদহ, মানিকদীর, রাধানগরসহ বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে তাঁতপল্লি।

সারাদিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেও প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে অব্যাহত লোকসানে দুর্দিন নেমে এসেছে তাঁতিদের। টিকতে না পেরে অনেকে ছেড়েছেন এ পেশা। আবার বাপ-দাদার পেশা বলে অনেকেই এটি আগলে ধরে আছেন।

সুতা-রংসহ আনুষাঙ্গিক পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ও আধুনিক পোশাক কারখানার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকাই চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁতিদের। তাঁতের সঙ্গে সম্পৃক্ত পরিবারগুলো বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

সুজানগর উপজেলা পাওয়ারলুম মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রোকন জানান, দেশের অন্যতম বৃহত্তম তাঁত সমৃদ্ধ এলাকা এ সুজানগর। এক সময় উপজেলায় এক হাজার ৬০০ এর মতো কারখানা ছিল, যেগুলোতে মেশিন ছিল ৭ হাজার ২০০। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে বাকিগুলোও যে কোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

তিনি বলেন, উপজেলার তাঁতসমৃদ্ধ এলাকা কুড়িপাড়ায় তিন হাজার মধ্যে এখন মাত্র দেড় থেকে দুই হাজারের মতো তাঁত চলছে। অধিকাংশ প্রান্তিক তাঁতি ইতোমধ্যে তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। বড় ব্যবসায়ীরা অর্ধেকের বেশি তাঁত বন্ধ রেখে কোনোরকম তাদের কারখানা চালু রেখেছেন।

উপজেলার মেসার্স মোল্লা কটেজ ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক মো.ফজলুল হক মোল্লা বলেন, ‘সুতা, রঙ, কেমিক্যালসহ তাঁতবস্ত্র উৎপাদনের সব উপকরণের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। উৎপাদন ব্যয় যেভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে সে অনুযায়ী উৎপাদিত কাপড়ের মূল্য বৃদ্ধি পায়নি। সেই সঙ্গে বেড়েছে ব্যাংক লোনের সুদ হার।’

কথা হয় কুড়িপাড়া গ্রামের আবু হানিফ সরকারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এটা আমার বাপ-দাদার পেশা। ছাড়তে না পারলেও লোকসান ঠিকই গুনতে হচ্ছে। আমাদের দিকে সরকারের সুদৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।’ 

আহম্মদপুরের নারী তাঁত শ্রমিক আলেয়া খাতুন বলেন, ‘আমাদের মজুরি কম, কোনো বোনাসও নেই। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তাঁতের কাজ করি। তবে, তাঁত পণ্যের এখন দাম কম হওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে আমরা ভালো নেই।’

কারখানার মালিক আফজাল হোসেন সরকার জানান, কারখানা চালিয়ে তাকে তিন দফায় লোকসানের সম্মুখীন হতে হয়েছে। চড়া দামে সুতা ও রং কিনে কাপড় তৈরি করে লোকসান দিয়ে বাজারে বিক্রি করতে হয়েছে। একইসঙ্গে লোনের কিস্তি পরিশোধ করতে হয়। সে কারণে কারখানা বিক্রি করে লোন পরিশোধের পাশাপাশি নতুন ব্যবসার চেষ্টা করতে করছি।

মানিকদীর গ্রামের হাবিবুল্লাহ জানান, বর্তমানে প্রতি পাউন্ড ৮০ কাউন্ট সুতা বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা। অথচ কয়েক মাস আগে এই সুতার দাম ছিল মাত্র ১৭০ থেকে ১৯০ টাকা। সুতার দামের পাশাপাশি রংয়ের দাম বেড়েছে প্রায় দিগুণ। দুই টাকার ইন্ডিয়ান রং এখন ৫ হাজারে কিনতে হচ্ছে। ৬০০ টাকার মাকু এখন দুই হাজার টাকা এবং ৭০০ টাকার সানা দেড় হাজার টাকা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর রাশেদুজ্জামান রাশেদ বলেন, তাঁত শিল্প আমাদের একটা অন্যতম ঐতিহ্য। উপজেলার অনেক তাঁত শিল্পী রয়েছে যারা খুব সুন্দর পণ্য তৈরি করছে। এ তাঁত শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের সমস্যাসমূহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হবে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম