শহীদ আবু সাঈদ হত্যার বছরপূর্তি: ছেলের কাপড় নিয়ে কাঁদেন বাবা-মা
পীরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২৫, ০৯:৪৮ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
স্ফুলিঙ্গে আরও জ্বলে উঠে। জীবন বাজি রেখে রাস্তায় নেমে আসেন লাখো-কোটি মানুষ। ফলে মাত্র ২০ দিনের মাথায় ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। ৫ আগস্ট দুপুরে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।
আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন বলেন, আমার ছেলের আত্মদানের মাধ্যমে বাংলাদেশ জালিম মুক্ত হয়েছে। দেশের মানুষ রেহাই পেয়েছে।
তিনি আন্দোলনে তার ছেলের আত্মত্যাগের কথা বলেন, ছেলেরা পড়াশোনা করে চাকরি না পাওয়ায় তারা আন্দোলন করেছে। এটা ন্যায্য দাবি ছিল।
আবু সাঈদের হত্যাকারীদের ব্যাপারে তিনি বলেন, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) দুই সদস্য এএসআই আমির হোসেন এবং কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় আমার ছেলের বুকে গুলি চালিয়েছে। আমরা সব পলাতক আসামিদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
আমার ছেলে রমজান আলী হত্যা মামলার বাদী হয়েছে। তিনি বলেন, আমার জন্য বাড়ির সামনে কবরের জায়গা রেখেছিলাম। বাবাই (সাঈদ) আগে মারা গেলে। তাকে আমার কবরের জায়গাটায় শুইয়ে দিয়েছি। আমার এ বয়সে ছেলের লাশ দেখতে হয়েছে। কতটা কষ্ট হয়, বলা যায় না।
তিনি বলেন, ছেলের লাশ দ্রুত দাফনের জন্য সেই সময়ের সরকারের খুব চাপ ছিল। মানুষকে তারা আমার ছেলের লাশও দেখতে দিবে না। এটাও জুলুম ছিল।
মা মনোয়ারা বেগম আবু সাঈদের ব্যবহৃত কাপড়-চোপড় দেখিয়ে বলেন, আমাদের অভাবের সংসার। আমার ছোট ছেলে আবু সাঈদ বুদ্ধিমান আর মেধাবী হওয়ায় খুব কষ্ট করে তার পড়াশোনা চালানো হয়েছিল। বাবা (সাঈদ) আমার নিজেও টাকা আয় করত। আশা ছিল, সে পড়ে চাকরি করবে, আমাদের অভাব দূর করবে। সে মরে যাওয়ায় সেই কষ্ট আর অভাব আরও বাড়ছে।
তিনি বলেন, বাড়িতে শুধু দুইটা মাটির ঘর আছিল। আবু সাঈদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাড়িতে আসলে এক ঘরে ওরা ৩-৪ ভাই-বোন গাদাগাদি করে থাকত। আবার কখনও মানুষের বাড়িতেও রাতে ঘুমাতে যেত।
সে বলছিল- একটা ইটের ঘর করলে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের নিয়ে আসবে। ধার-কর্জ করে ওর বাবা একটা ৩ রুমের ইটের ঘরের ভিত্তি দেয়। এখন অনেকগুলো ঘর আছে, আবু সাঈদ নাই।
তিনি বলেন, আমার সন্তানের কারণে বাংলাদেশটা নতুন করে স্বাধীন হয়েছে। আমার ছেলের মতো যেন আর কোনো মায়ের বুক খালি না হয়। এটা সবার কাছে দাবি করছি।
