জুলাই শহীদ দিবস উপলক্ষে রাজশাহী জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

বুধবার (১৬ জুলাই) সকাল ১০টার দিকে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই গণহত্যায় নিহত শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার মো. খন্দকার আজিম আহমেদ। 

এ সময় প্রধান অতিথি শহীদ পরিবার ও আহতদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও সমবেদনা জানান। বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার আবু সুফিয়ান ও জেলা পুলিশ সুপার ফারজানা ইসলাম।

স্মরণসভায় শহীদ পরিবারের সদস্যরা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। বক্তব্য রাখতে গিয়ে তারা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, তাদের স্বজনদের হত্যাকারীদের বিচার না হওয়ায় তারা কষ্ট বুকে নিয়ে বেঁচে আছেন। 

জুলাই আন্দোলনের আহত যোদ্ধা অপূর্ব বলেন, গুলিটা আমার গায়ে লেগেছে। এটা আমার ভাগ্যে ছিল। 

শহীদ মিনারুল ইসলামের স্ত্রী নূরেজান খাতুন বলেন, আমার মন বলে আমার স্বামী এখনো বেঁচে আছেন। তিনি শহীদের মর্যাদা পেয়েছেন। আমার সন্তান এখন ছোট। বড়ো হলে তার বাবার শহীদ হওয়ার গল্প শোনাব।

 শহীদ আলী রায়হানের বাবা মসলে উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিকালে খবর পাই ছেলের মাথায় গুলি লেগেছে। অপারেশনের পর মারা গেছে। যারা এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

অশ্রুসিক্ত কন্ঠে শহীদ শাকিব আনজুমের বাবা মাইনুল হক বলেন, জুলাই আন্দোলনে আমার তিন ছেলে মিছিলে গিয়েছিল। ছোট ছেলে খুব সাহসী ছিল, মিছিলের সামনে থাকত। দেড়টার সময় গুলিবিদ্ধ হয়। মনে হয়েছিল আমিও বুকে গুলি খেয়েছি। এই স্বাধীন দেশে আর যেন অন্যায় হত্যাকাণ্ড না হয়।

গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, শহীদ পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা আমার জানা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে সেদিনের আন্দোলন বেগবান হয়েছিল। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ঘটনা আর কোনো দেশে ঘটেনি।

 রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার আবু সুফিয়ান বলেন, জুলাই আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন, তারা দেশের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। আমরা তাদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। 

রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার বলেন, জুলাই আন্দোলনের শহীদদের আত্মত্যাগ ইতিহাসের এক গৌরবময় অধ্যায়। তাদের স্মরণে আমরা নতুন প্রজন্মকে সত্যিকার অর্থে দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়ে তুলব।

বক্তারা জুলাই আন্দোলনকে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করেন। পরে দোয়া মাহফিলে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করা হয়।