Logo
Logo
×

সারাদেশ

উন্নয়ন প্রকল্পগুলো ‘মরণফাঁদ’, লোপাট ২ হাজার কোটি টাকা

Icon

মো. শফিকুল ইসলাম মিলন, ভান্ডারিয়া (পিরোজপুর)

প্রকাশ: ২২ জুলাই ২০২৫, ০২:০১ পিএম

উন্নয়ন প্রকল্পগুলো ‘মরণফাঁদ’, লোপাট ২ হাজার কোটি টাকা

জনগণের স্বার্থে নেওয়া হয় উন্নয়ন প্রকল্পগুলো। দেওয়া হয় বিপুল পরিমাণের বাজেট। কিন্তু, সেসব প্রকল্পে হয়েছে নয় ছয়। ঠিকমতো কাজ করেনি ঠিকাদাররা। এর দরুণ প্রকল্পগুলো এখন মরণ ফাঁদে রূপ নিয়েছে। ঘটনাটি পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ার।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে ভান্ডারিয়া উপজেলায় ১৭ প্রকল্পের প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে। এলজিইডির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও জেলা হিসাব রক্ষণ অফিসের যোগসাজশে সবগুলো প্রকল্পের টাকা আগাম তুলে নেয় ঠিকাদাররা। এসব ঘটনায় গত ১৭ এপ্রিল পিরোজপুর দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম এ ঘটনায় জড়িত ২৭ জনকে অভিযুক্ত করে পৃথক ৮টি মামলা করেছে।  ইতোমধ্যে এসব মামলায় পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

পিরোজপুর দুর্নীতি দমন কমিশন সূত্র বলছে, ভান্ডারিয়া উপজেলায় এলজিইডি প্রকল্প থেকে সবচেয়ে বেশি অর্থ লোপাট হয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যথাযথ কাজ না হওয়ায় সড়কগুলো যেন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে।

সূত্রে জানা গেছে, বিগত সরকারের আমলে বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভান্ডারিয়ার ধাওয়া, ইকড়ি, নদমুলা, ভিটাবাড়ীয়া, গৌরিপুর ও তেলিখালী ইউনিয়নের সব রাস্তার পাকা, আধপাকা, আধাকাচা এবং এসব রাস্তার কালভার্ট নির্মাণ না করে খানা-খন্দ তৈরি করে রাখে। এলজিইডির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও জেলা হিসাব রক্ষণ অফিসের যোগসাজশে সবগুলো প্রকল্পের টাকা আগাম তুলে নেওয়া হয়েছে। ফলে সড়ক উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন হয়নি। ইউনিয়নবাসীরা জেলা ও উপজেলা শহরে আসতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। প্রকল্পের এসব বেহাল সড়ক দিয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল এবং কলেজগামী শিক্ষার্থীরা মাইলের পর মাইল হেঁটে বর্ষাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হাজির হয়। বেহাল দশার কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল কাজে বিঘ্ন ঘটে।

দুর্নীতিগ্রস্ত প্রকল্পের মধ্যে উল্লেখ্য প্রকল্প হচ্ছে, ঘূর্ণিঝড় আস্ফান প্রকল্প, অনূর্ধ্ব ১০০ মিটার ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্প, দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের আয়রন ব্রিজ, পুনর্বাসন প্রকল্প, গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, পিরোজপুর জেলার পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, উপজেলা শহর (নন-মিউনিসিপিলিটি) উন্নয়ন প্রকল্প, বরিশাল বিভাগের উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্প উল্লেখযোগ্য।

এদিকে, গত ১৭ এপ্রিল পিরোজপুরে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম ২৭ জনকে অভিযুক্ত করে পৃথক ৮টি মামলা দায়ের করেন। দুর্নীতিতে অভিযুক্ত পাঁচজনকে সম্প্রতি গ্রেফতার করা হয়েছে।

জেলা দুদক কার্যালয়ে উপ-পরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম জানান, যাচাই-বাছাই করে দেখা গেছে ১৭টি প্রকল্পে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। এর মধ্যে ৮ প্রকল্পের ৪০০ স্কিমের পিরোজপুর এলজিইডির সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুস ছত্তার, উপসহকারী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম এবং হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক খান ইচ্ছেমতো বিভিন্ন প্রকল্প তৈরি করে ১৭৩ কোটি টাকা জেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে আত্মসাৎ করেছেন। এর সঙ্গে পিরোজপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন মহারাজ, তার ভাই ভান্ডারিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মিরাজুল ইসলামসহ তাদের অন্য ভাই ও স্ত্রীরাও জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। এরা সবাই বর্তমানে পলাতক।

দুদকের উপ-পরিচালক বলেন, বর্তমানে ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তদন্ত চলাকালে আরো কারও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাদেরকেও আসামি করা হবে। ৮টি মামলায়ই আসামি আছেন পিরোজপুর এলজিইডির সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুস ছত্তার, উপ-সহকারী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম এবং হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক খান। ভান্ডারিয়া উপজেলার চিংগুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা কৃষক শহিদুল ইসলাম জানান, আমাদের গ্রামের রাস্তাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা।

স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন জানান, আমরা শুনেছি এই রাস্তার পুরো বরাদ্দেকৃত টাকা উত্তোলন করে প্রভাবশালী ঠিকাদার লাপাত্তা। এখন রাস্তা বেহাল হয়ে পড়ে আছে। হঠাৎ কোনো স্থানে আগুন লাগলে অথবা কোনো মানুষ গুরুতর অসুস্থ হলে রাস্তার এই খারাপ অবস্থা থাকায় ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স যাতায়াত করা অসম্ভব। শিক্ষার্থীদের স্কুল কলেজ মাদ্রাসায় যাতায়াতে ব্যাপক দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। তাই আমরা প্রশাসনের কাছে অতি দ্রুত রাস্তা সংস্কারের দাবি জানাচ্ছি।

এ ব্যাপারে ভান্ডারিয়া উপজেলা প্রকৌশলী মো. ইমতিয়াজ হোসাইন রাসেল বলেন, এ প্রকল্পের ঠিকাদারের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। যা কিছু সিদ্ধান্ত প্রধান প্রকৌশলীর কাছ থেকে আসতে হবে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম