Logo
Logo
×

সারাদেশ

ভাই-বোনের খুনশুটি মাকে আর থামাতে হবে না, পাশাপাশি চিরনিদ্রায়

Icon

অমিতাভ অপু, ভোলা

প্রকাশ: ২৩ জুলাই ২০২৫, ০৯:১৩ পিএম

ভাই-বোনের খুনশুটি মাকে আর থামাতে হবে না, পাশাপাশি চিরনিদ্রায়

ভাই-বোনের নিত্য খুনশুটি মাকে আর থামাতে হবে না। বলতে হবে না ঝগড়া বিবাদ রেখে এবার পড়তে বস। লাগালাগি অনেক হয়েছে। এবার যাও যে যার পড়ার টেবিলে।

মাইলস্টোন স্কুল ট্র্যাজেডির তৃতীয় দিনে বুধবার বোনের কবরের পাশে ভাইকে কবর দেওয়ার পর এমন স্মৃতিময় বিলাপ বকতে থাকেন মা তাহমিনা বেগমের পাশাপাশি ঘনিষ্ঠ স্বজনরা।

সোমবার ঢাকায় বিমান দুর্ঘটনায় আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী ভোলার মেয়ে তাহিয়া তাবাসসুম নাদিয়া। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টায় জাতীয় বার্ন হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে ছোট ভাই আরিয়ান আশরাফ  নাফি।

তারা দুইজন ভোলার দৌলতখান উপজেলার দক্ষিণ জয়নগর গ্রামের আশরাফুল ইসলাম নিরব ও তাহমিনা বেগমের একমাত্র ছেলে ও মেয়ে। দুই সন্তানকে হারিয়ে পাগলপ্রায় বাবা ও মা।

একই বাড়ির স্বজন হুমায়ুন হাওলাদার যুগান্তরকে জানান, দুই ভাই-বোনকে ঢাকায় নানার বাড়ির পাশে তুরাগ থানার পুকুরপাড় রাজবাড়ি দক্ষিণপাড়া জামে মসজিদের পাশে কবরস্থানে দাফন করা হয়। বুধবার বাদজোহর জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন করা হয়। এর আগের দিন একই স্থানে একই সময়ে বোনের জানাজা হয়েছে। ভাই-বোনের মধ্যে ছোটখাটো বিষয় নিয়ে বিবাদ খুনশুটি হলেও মিল ছিল অনেক বেশি। একজন অপরজনকে কিছু না দিয়ে খেত না। ভাই-বোনের মনের টান ও মিল ছিল। তবে খুনশুটি নিয়ে মা রাগ করতেন কখনও কখনও। সেই ভাই-বোনকে পাশাপাশি কবরে রাখা হলো। পরপারে ওরা ভালো থাকুক।

তিনি বলেন, কত স্বপ্ন ছিল ওদের নিয়ে। কেবল ওদের লেখাপড়ার জন্যই আশরাফুল ইসলাম নিরব সেনাবাহিনী থেকে অবসরে আসার পর ঢাকায় শ্বশুরবাড়িতে চলে আসেন। শুরু করেন টায়ার সাপ্লাই ব্যবসা। একই সঙ্গে সন্তানদের ভর্তি করান মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে।

ভোলায় শোক ও দোয়া অনুষ্ঠান

এদিকে বুধবার দুপুরে ভোলার সেরা বিদ্যাপীঠ বাংলাবাজার ফাতেমা খানম কলেজে শোক ও দোয়া অনুষ্ঠানে শোকসন্তুপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়।

অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদের সভাপতিত্বে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। দোয়া মোনাজাত পরিচালনা করেন আবুল বাশার মো. আব্দুস সাত্তার।

এ সময় নাদিয়া ও নাফির মৃত্যুতে গভীর শোক জানান শিক্ষকরা। এছাড়া মাইলস্টোন স্কুল ট্র্যাজেডিতে নিহত সবার রুহের মাগফিরাত ও আহতদের সুস্থতা কামনা করে বক্তব্য রাখেন- কলেজ অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদ, উপাধ্যক্ষ সুশান্ত কুমার হাওলাদার, সিনিয়র শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক আবুল বাশার, সহকারী অধ্যাপক এবিএম আব্দুস সাত্তার, প্রেস ক্লাবের সাবেক সম্পাদক কলেজ শিক্ষক অমিতাভ অপু, সহকারী অধ্যাপক বিল্লাল হোসেন জুয়েল।

শোক জানান নুরুমিয়ার হাট আজাহার আলী স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. আবু তাহের।

নিহতদের গ্রামের বাড়িতে ভাই-বোনের ছবি নিয়ে স্বজনদের আহাজারি ছিল বুধবারও। চাচা সাবেক শিক্ষক নেতা অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আলতাফ হোসেন ও তার পরিবারের সদস্যরা সবার কাছে দোয়া চাইছেন।

তারা জানান, একমাত্র ছেলেমেয়েকে ভালো স্কুলে লেখাপড়া করার জন্যই ভোলার গ্রামের বাড়ি ছেড়ে ঢাকায় শ্বশুরবাড়ি এলাকায় বসবাস করতেন আশরাফুল ইসলাম। তার সব শেষ হয়ে গেছে। ভেঙে গেছে সব স্বপ্ন।

ঘটনাপ্রবাহ: উত্তরায় বিমান বিধ্বস্ত


আরও পড়ুন

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম