এক বছর পরও শহীদ শুভর শোক কাটিয়ে উঠতে পারেনি বাবা-মা
বগুড়া ব্যুরো
প্রকাশ: ০৩ আগস্ট ২০২৫, ০৩:০১ এএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বগুড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে নিহত কিশোর সিয়াম শুভ (১৬) আন্দোলনের প্রথম ‘শহীদ’। ঘটনার এক বছর পেরিয়ে গেলেও তার পালক বাবা-মা আজও শোক কাটিয়ে উঠতে পারেননি। শুভর কথা মনে পড়লেই আজো তারা কেঁদে ওঠেন, বুকের ভেতর হাহাকার করে উঠে।
গত বছরের ১৯ জুলাই বিকালে শহরের সেউজগাড়ি আমতলা মোড়ে ছাত্র আন্দোলনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছোড়া শটগানের গুলিতে মারা যায় সিয়াম শুভ। তখন ভাঙারির দোকানে কুড়িয়ে আনা মালামাল দিতে গিয়েছিল শুভ। হঠাৎ সংঘর্ষের খবর শুনে ঘটনাস্থলে গেলে গুলির শিকার হয় সে।
শুভ ছিল বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার হাটকড়ই দরিয়াপুর গ্রামের মৃত বাবু মিয়া ও আয়েশা বেগমের সন্তান। সাত বছর বয়সে রেলস্টেশনে হারিয়ে গিয়ে বগুড়া শহরের কামারগাড়ি হাড্ডিপট্টি এলাকার বাসিন্দা বাসচালক আশিক উদ্দিন ও তার স্ত্রী শাপলা খাতুনের হাতে আশ্রয় পায়। তারা তাকে সন্তানস্নেহে বড় করেন। শুভ পরবর্তীতে তার পালক বাবার সঙ্গে বাসের হেলপার হিসেবে কাজ করতো।
আন্দোলনের সময় বাস চলাচল বন্ধ থাকায় সে হাড্ডিপট্টিতে একটি ভাঙারির দোকানে কাজ নেয়। ঘটনার দিন বিকাল ৫টার দিকে সংঘর্ষে ছররা গুলিতে তার মাথা, চোখসহ শরীরজুড়ে গুরুতর জখম হয়। তাকে বগুড়া নার্সিং হোমে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নার্সিং হোমের ব্যবস্থাপক ডা. মশিহুর রহমান বলেন, শুভর মাথা থেকে পা পর্যন্ত শতাধিক গুলির চিহ্ন ছিল। চোখে গুলি লাগার কারণেই তার মৃত্যু হয় বলে মত দেন তিনি।
ময়নাতদন্ত শেষে পরদিন মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয় এবং বগুড়া শহরের নামাজগড় আঞ্জুমান-ই-গোরস্থানে দাফন করা হয়।
এদিকে পুলিশ দাবি করে, শুভ ককটেল বিস্ফোরণে মারা গেছে। এ ঘটনায় সদর থানার এসআই জাকির আল আহসান বিস্ফোরক আইনে মামলা করেন, যাতে বিএনপি ও জামায়াতের ৩৭ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়।
পালক মা শাপলা খাতুন পরবর্তীতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করে হত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। তবে মামলার বিষয়ে আদালতের কোনো নির্দেশনা এখনও আসেনি।
শাপলা বলেন, শুভ আমাকে বলে গিয়েছিল, ‘মা থাকো, দেশটা স্বাধীন করে আসি।’ কিন্তু সে আর ফিরে আসেনি। ছোট ভাই শাওন বাড়ি ফিরলেও শুভর নিথর দেহ ফিরে আসে হাসপাতাল মর্গ থেকে।
শুভর পালক বাবা আশিক উদ্দিন বলেন, সরকারি গেজেটে ছেলের নাম ‘শহীদ’ হিসেবে আছে। সরকার ও বেসরকারিভাবে ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্রসহ প্রায় ২০ লাখ টাকার সহায়তা পেয়েছি। কিন্তু ছেলেটা তো আর ফিরে আসবে না। ওর অভাব কোনো কিছুর বিনিময়ে পূরণ হবার নয়।
