ধর্মীয় সভার নামে ২২ কোটি টাকার চাল লোপাট
সাবেক দুই এমপিসহ আ.লীগের ১০ নেতার নামে দুদকের চার্জশিট
সিদ্দিক আলম দয়াল, গাইবান্ধা
প্রকাশ: ০৩ আগস্ট ২০২৫, ১০:২১ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ধর্মীয় সভার নামে গোবিন্দগঞ্জে ঘটনার পাঁচ বছর পর ২২ কোটি টাকার চাল আত্মসাতে দুদকের দায়ের করা মামলায় সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ, পলাশবাড়ির সাবেক এমপি ও আ.লীগ নেতাসহ ১০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।
অন্যদিকে এজাহার নামীয় ১০ আসামিকে বাদ দেওয়া নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে গোবিন্দগঞ্জে দুই হাজার ২৫৩টি ধর্মীয় সভার নামে পাঁচ হাজার ৮২৩ টন চাল বরাদ্দ দেয় তৎকালীন আ.লীগ সরকার। কিন্তু তৎকালীন সংসদ-সদস্য অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও পৌর কাউন্সিলর মিলে বিপুল পরিমাণ এ চাল গায়েব করে গোপনে বিক্রি করে দেন। বিপুল পরিমাণ চাল আত্মসাতের ঘটনা ফাঁস হলে ২০২১ সালের ২৬ আগস্ট ১৬ জন ইউপি চেয়ারম্যানসহ ১৯ জনের নামে দুদক রংপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হোসাইন শরীফ বাদী হয়ে মামলা করেন।
মামলায় অভিযুক্তরা হলেন-উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) জহিরুল ইসলাম, তৎকালীন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আকতারা বেগম রূপা, কামদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোশাহেদ হোসেন চৌধুরী, কাটাবাড়ির চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রফিক, শাখাহারের চেয়ারম্যান তাহাজুল ইসলাম ভুট্টু, রাজাহারের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ সরকার, সাপমারার চেয়ারম্যান শাকিল আলম বুলবুল, দরবস্তের চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম জর্জ, তালুককানুপুরের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান আতিক, নাকাইয়ের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের প্রধান, রাখালবুরুজের চেয়ারম্যান শাহাদত হোসেন, ফুলবাড়ীর চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান মোল্লা, গুমানীগঞ্জের চেয়ারম্যান শরীফ মোস্তফা জগলুল রশিদ রিপন, কামারদহের চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রতন, কোচাশহরের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন, শিবপুরের চেয়ারম্যান সেকেন্দার আলী মণ্ডল, শালমারার চেয়ারম্যান আমির হোসেন শামিম, মহিমাগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ প্রধান এবং গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার তৎকালীন কাউন্সিলর গোলাপী বেগম।
প্রকল্প কর্মকর্তা ছাড়া অন্য সবাই উচ্চ আদালতে আগাম জামিন নিলেও নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করেননি। সেইসঙ্গে তাদের কাউকে গ্রেফতারও করা হয়নি। এর কারণ জানতে অ্যাডভোকেট এএসএম হরমুজ আহম্মেদের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হারুন অর রশীদ দুদক চেয়ারম্যানসহ আটজনের কাছে আইনি নোটিশ পাঠান।
নোটিশ প্রদানের পর আ.লীগ নেতা সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ এবং সবেক এমপি ও আ.লীগ নেতা উম্মে কুলসুম স্মৃতিকে মামলায় জড়িয়ে চাজশিট দেওয়া হয়।
অন্যদিকে অভিযুক্ত আ.লীগ নেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফসহ চাল আত্মসাতের সঙ্গে সরাসরি জড়িত উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম, কামদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোশাহেদ হোসেন চৌধুরী, কাটাবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রফিক, শাখাহারের চেয়ারম্যান তাহাজুল ইসলাম ভুট্টু, রাজাহারের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ সরকার, রাখালবুরুজের চেয়ারম্যান শাহাদত হোসেন, কোচাশহরের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন, শালমারার চেয়ারম্যান আমির হোসেন শামিম, মহিমাগঞ্জের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ প্রধান ও গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার তৎকালীন কাউন্সিলর গোলাপী বেগমসহ ১০ জনকে অভিযোগ থেকে বাদ দেওয়া হয়। মামলার চার্জশিট থেকে ঘটনায় মূল নায়ক পিআইওসহ অভিযুক্ত ১০ জনের নাম বাদ দেওয়ায় গোবিন্দগঞ্জে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
মামলার বাদী দুর্নীতি দমন কমিশন রংপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সাবেক সহকারী পরিচালক বর্তমান প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. হোসাইন শরিফ বলেন, যাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে তারা ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন মর্মে কমিশনে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। এরপর মামলাটি পুনঃতদন্ত করা হয়েছে। সেখানে তাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। পরে কমিশন তাদের নাম বাদ দিয়েছে।
