একটি বুলেট পাল্টে গেছে জীবন
আর কোনো স্বৈরাচার দেখতে চান না জুলাই যোদ্ধা নাজিম
লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৬ আগস্ট ২০২৫, ১১:৩২ এএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
‘সেদিন মনে হয়েছিল এখানেই শেষ। আমি রাস্তায় পড়ে আছি, হাত ফেটে রক্ত ঝরছে। কেউ একজন চিৎকার করে বলল এ ছেলেটাকে আগে বাঁচাও। তারপর এক সাংবাদিক ছুটে এসে আমাকে কোলে তুলে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে নিয়ে গেলেন হাসপাতালে।’ এভাবেই ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের ভয়াল স্মৃতি তুলে ধরেন জুলাই যোদ্ধা নাজিম উদ্দিন (৩৬)।
পেশায় পোশাক কারখানার শ্রমিক নাজিম চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার আধুনগর
ইউনিয়নের উত্তর হরিণা মিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ফরিদ আহমেদের ছেলে।
নাজিম রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মিছিলে টানা
তিন দিন অংশ নেন। শেখ হসিনার পালানোর দিন অর্থাৎ, ৫ আগস্ট পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত
হন তিনি। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে একটি বুলেট তার ডান হাতের কনুই ভেদ করে বেরিয়ে যায়।
এতে তার হাতের হাড় ভেঙে চুরমার হয়ে যায়।
সাংবাদিকের সহায়তায় প্রথমে যাত্রাবাড়ির একটি হাসপাতালে নেওয়া হলেও রক্তক্ষরণ
বন্ধ না হওয়ায় আন্দোলনকারীরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেন। কিন্তু
অবস্থা গুরুতর দেখে তাকে মেডিকেলে ভর্তি নেওয়া হয়নি। পরে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় নারায়ণগঞ্জ
পপুলার হাসপাতালে, সেখানে টানা ১০ দিনের বেশি চিকিৎসা চলে।
পরবর্তীতে নাজিম জানতে পারেন, আহতদের সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া
হচ্ছে। পুপলারের একজন কর্মকর্তার সহায়তায় সেখানে ভর্তি হন তিনি এবং সফল অস্ত্রোপচার
করান। তবে এখনো তার হাতে কোনো জোর ফেরেনি। চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছেন, কিন্তু আর কেউ
কোনো খোঁজ নেয়নি।
নাজিম বলেন, ‘গার্মেন্টসে কাজ করতাম, হাতই ছিল সব। এখন সেই হাতটাই অচল।
ওজন কিছু তুলতে পারি না। আয়ের উৎস নেই। তিন সন্তানকে নিয়ে সংসার চালানো দুঃসহ হয়ে গেছে।
চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে ঋণের বোঝা এখনো মাথায়। জুলাই ফাউন্ডেশন ও সরকারের পক্ষ থেকে
দুই লাখ টাকা পেয়েছি। ’
এ জুলাই যোদ্ধার অভিযোগ, ‘আমি বি ক্যাটাগরির যোগ্য হলেও আমাকে সি ক্যাটাগরিতে
রাখা হয়েছে। এটা আমার জন্য অবিচার। সরকার সুযোগ দিলেও তা কাজে লাগাতে পারছি না। বহুবার
যোগাযোগ করেও সাড়া পাচ্ছি না।’
নাজিম বলেন, আল্লাহর রহমতে বেঁচে আছি। কিন্তু প্রতিদিন দেখি কারো পা
নেই, কারো চোখ নেই, কেউ পঙ্গু হয়ে গেছে। আমার ধারণা, হয়তো কাউকে সত্যটা বলার জন্যই
আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। আমি চাই, আর কোনো ৫ আগস্ট যেন বাংলাদেশ না দেখে। বাংলার
মাটিতে যেন আর কোনো স্বৈরাচার জন্ম না নেয়।
