একই পরিবারের ৪ জনের লাশ উদ্ধার
‘মিনারুল কারো সঙ্গে খুব বেশি মিশত না, খুব ভদ্র ছিল’
রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ: ১৬ আগস্ট ২০২৫, ০২:৩১ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রাজশাহীর পবা উপজেলার বামনশিকড় গ্রামে ঋণ ও খাদ্যের অভাবে স্ত্রী এবং দুই শিশু সন্তানকে হত্যার পর আত্মহত্যা করেন মিনারুল ইসলাম। হৃদয়বিদারক এ ঘটনাটি ঘটার পর থেকেই মিনারুলকে নিয়েই চলছে সর্বত্র আলোচনা। তার আচার-ব্যবহার, মানুষের সঙ্গে কথাবার্তা আর চলাফেরা নিয়ে কথা বলছেন প্রতিবেশীরা। শনিবার (১৬ আগস্ট) সকালে মিনারুলের গ্রামে গিয়ে এমনটিই দেখা গেছে।
বামনশিকড় মধ্যপাড়া গ্রামের কৃষক হাসান আলী বলেন, ‘মিনারুল খুব ভালো ছেলে ছিলো। কারও সঙ্গে খুব বেশি মিশত না, খুব ভদ্র ছিল। মাথা নিচু করে চলত। অমায়িক ছেলে ছিল। এনজিওর চাপে স্ত্রী ও সন্তানদেরকে নিয়ে মিনারুল এমনটি করেছেন। মিনারুল পরিশ্রমী ছিল। বসে থাকত না। কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত ছিলো। প্রচুর কাজ করত। তিন বেলায় কাজের মধ্যে থাকত।’
তিনি আরও বলেন, ‘টাকা না দিলে এনজিওর লোকেরা মিনাররুলের বাড়িতে এসে বসে থাকতেন। যতক্ষণ পর্যন্ত টাকা না দিত ততক্ষণ উঠতেন না। রাত ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্তও তারা বসে থাকতো। বিষয়টি নিয়ে মিনারুল খুব বিব্রত হতো। তারও মান-ইজ্জত ছিল। এটি নিয়ে মিনারুল লজ্জা পেত। কিস্তি দিতে গিয়ে অভাব লেগে থাকতো। এ কারণেই হয়ত মিনারুল পরিবারের সবাইকে নিয়ে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন।’
এর আগে শুক্রবার দুপুরে জেলার পবার বামনশিকড় গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে মিনারুল,
তার স্ত্রী ও দুই সন্তানের লাশ উদ্ধার করা হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, একটি ঘরের বিছানায় ছিল মনিরা ও শিশুকন্যা মিথিলার
লাশ। পাশের ঘরের বিছানায় ছিল মাহিমের লাশ। এ ঘরেই ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছিল মিনারুলের লাশ।
এ ঘর থেকে দুটি চিরকুট উদ্ধার করা হয়েছে। সেগুলো মিনারুল লিখেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
হাতের লেখাটি মিনারুলেরই বলে পুলিশকে জানিয়েছেন স্বজনেরা।
চিরকুটে লেখা আছে, ‘আমি মিনারুল নিচের যেসব লেখা লিখব, সব আমার নিজের
কথা। লিখে যাচ্ছি এ কারণে আমরা চারজন আজ রাতে মারা যাব। এই মরার জন্য কারো কোনো দোষ
নেই। কারণ, লিখে না গেলে বাংলার পুলিশ কাকে না কাকে ফাঁসিয়ে টাকা খাবে। আমি মিনারুল
প্রথমে আমার বউকে মেরেছি। তারপর আমার মাহিনকে মেরেছি। তারপর আমার মিথিলাকে মেরেছি।
তারপর আমি নিজে গলায় ফাঁস দিয়ে মরেছি।’
আরেকটি চিরকুটে লেখা, ‘আমি নিজ হাতে সবাইকে মারলাম। এ কারণে যে, আমি
একা যদি মরে যাই, তাহলে আমার বউ, ছেলে, মেয়ে কার আশায় বেঁচে থাকবে? কষ্ট আর দুঃখ ছাড়া
কিছুই পাবে না। আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে। এত কষ্ট আর মেনে নিতে পারছি
না। তাই বেঁচে থাকার চেয়ে মরে গেলাম, সেই ভালো হলো।’

