Logo
Logo
×

সারাদেশ

পিআইওর কক্ষে বিএনপি নেতার হাতে দুই কর্মকর্তা লাঞ্ছিত

Icon

রাজশাহী ব্যুরো

প্রকাশ: ১৮ আগস্ট ২০২৫, ১০:৩৫ পিএম

পিআইওর কক্ষে বিএনপি নেতার হাতে দুই কর্মকর্তা লাঞ্ছিত

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার নিয়োগকে কেন্দ্র করে পিআইওর কক্ষে ঢুকে দুই খাদ্য কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে। এ ঘটনার ভিডিও করতে গিয়ে এক সাংবাদিকের মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়।

সোমবার দুপুরে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা পরিষদে এ ঘটনা ঘটে।

বিএনপি নেতার নাম ডিএম শাফিকুল ইসলাম ওরফে শাফি। তিনি বাগমারার আউচপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি। একই সঙ্গে শাফি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডিএম জিয়াউর রহমান জিয়ার ছোট ভাই।

এই শাফির বিরুদ্ধে এলাকায় ভয়াবহ ত্রাস সৃষ্টি ও সন্ত্রাসী গ্রুপ লালন পালনের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার দুপুর ১টার দিকে আউচপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা ডিএম শাফির নেতৃত্বে ১৫-২০ জন বিএনপি নেতাকর্মী বাগমারা উপজেলা পরিষদে শোডাউন দিতে দিতে আসেন। এ সময় চেয়ারম্যান শাফি উপজেলা পরিষদের দোতলায় একটি কক্ষে অবস্থান করছিলেন।

পরে শাফির অনুসারীরা উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের চারতলায় উঠে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নবী নওয়াজেস আমিনের কক্ষে ঢুকে পড়েন। হুমকি-ধমকি ও গালাগালির একপর্যায়ে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক পরিস্থিতি বেগতিক দেখে একই তলার অবস্থিত উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) তরিকুল ইসলামের কক্ষে গিয়ে আশ্রয় নেন।

বিএনপি নেতার শাফির লোকজন তার পেছন পেছন ছুটে গিয়ে প্রকল্প কর্মকর্তার কক্ষে ঢুকে খাদ্য কর্মকর্তাকে ধরে ফেলেন। তারা আউচপাড়া ইউনিয়নে শাফির দেওয়া তালিকা অনুযায়ী খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার নিয়োগের দাবি জানান।

একই সঙ্গে পূর্বে নিয়োগ পাওয়া দুই ডিলারের বিরুদ্ধে ট্রেড লাইসেন্স জালিয়াতির অভিযোগ আনেন ও তাদের ডিলারশিপ বাতিলের দাবি করেন। কিন্তু উপজেলা নিয়ন্ত্রক তাদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। একই সঙ্গে খাদ্য কর্মকর্তা শাফির ক্যাডারদের বুঝানোর চেষ্টা করেন যে, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার নিয়োগ নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা রয়েছে। এই মুহূর্তে তিনি কাউকেও নিয়োগ দিতে পারবেন না; আবার কারো ডিলারশিপ বাতিলও করতে পারবেন না।

প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, বিএনপি নেতা শাফির ক্যাডাররা এ সময় উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে মারধর করে। তাকে রক্ষা করতে গিয়ে খাদ্য পরিদর্শক আমিরুল ইসলামও মারধরের শিকার হন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, বিএনপি নেতা শাফির ক্যাডাররা আমিরুল ইসলামের গলাটিপে ধরেন। এ সময় প্রথম আলোর বাগমারা প্রতিনিধি মামুনুর রশিদ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে হামলার ভিডিও ধারণ করতে গেলে তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। এর কিছুক্ষণ পর বিএনপি নেতা শাফি ঘটনাস্থলে পৌঁছে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের ওপর চড়াও হন এবং তাকে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করেন। পরে শাফি তার ক্যাডারদের নিয়ে ভবনের নিচে চলে যান। সাংবাদিক মামুনের মোবাইল ফোনটি ফেরত দিয়ে দেন।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নবী নওয়াজেস আমিন বলেন, সম্প্রতি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় বাগমারায় ডিলার নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়। তবে আগের ডিলাররা উচ্চ আদালতে মামলা করলে কার্যক্রমটি স্থগিত হয়ে যায়। এ বিষয়টি বিএনপি নেতা শাফি ও তার সমর্থকদের বোঝানোর চেষ্টা করা হয়। তবে তারা আগের ডিলারদের বাদ দিয়ে নিজেদের লোকদের নিয়োগের দাবি করেন। অফিস কক্ষে ঢুকে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটান। এ রকম ঘটনা ঘটবে আগে বুঝে উঠতে পারিনি।

আউচপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা ডিএম শাফিকুল ইসলাম শাফি অনুসারীদের নিয়ে উপজেলা পরিষদে যাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ঘটনার সময় আমি নিচে বসে ছিলাম, ঘটনার খবর পেয়ে নেতাকর্মীদের সরিয়ে এনেছি।

বাগমারা প্রেস ক্লাবের সভাপতি রাশেদুল হক ফিরোজ জানান, পরিচয় দেওয়ার পরেও সাংবাদিকের মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়, পরে ফেরত দেওয়া হয়েছে।

বাগামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুবুল ইসলাম জানান, বাগমারা প্রেস ক্লাবের সাংবাদিকদের ডেকে উভয়পক্ষের মধ্যে সমঝোতা করে দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে এ রকম ঘটনা আর ঘটবে না বলে চেয়ারম্যান ও তার লোকজন জানিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, এর আগে বিভিন্ন দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির কারণে চেয়ারম্যান ডিএম শাফিকুল ইসলাম শাফিকে বরখাস্ত করা হয়। উচ্চ আদালতে মামলা করে কয়েক মাস আগে চেয়ারম্যান পদ ফেরত পান। গত বছরের ৫ আগস্টের পর বড়ভাই উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডিএম জিয়ার প্রভাবে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন ছোট ভাই ডিএম শাফি। শাফির বিরুদ্ধে এলাকায় হামলা, ভাঙচুর, দখল ও মারামারির অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে বলে বাগমারা থানার পুলিশ নিশ্চিত করেছে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম