Logo
Logo
×

সারাদেশ

যুগান্তরে সংবাদ প্রকাশ: সেই গয়নাথ ফিরলেন শিক্ষকতায়

Icon

চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৮ আগস্ট ২০২৫, ১০:৩৬ পিএম

যুগান্তরে সংবাদ প্রকাশ: সেই গয়নাথ ফিরলেন শিক্ষকতায়

ফুল দিয়ে বরণ করা হচ্ছে শিক্ষক গয়নাথ সরকারকে। ছবি: যুগান্তর

দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় খবর প্রকাশের পর শিক্ষকতা পেশা হারিয়ে রাজমিস্ত্রির জোগালির কাজ করা গয়নাথ সরকার আবারও ফিরলেন শিক্ষকতায়।

সোমবার (১৮ আগস্ট) সকাল ১০টায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুসা নাসের চৌধুরী পৌর শহরের বিদ্যাপীঠ স্কুলে গয়নাথ সরকারকে সঙ্গে করে নিয়ে যান। এ সময় গয়নাথ সরকারের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ। এ সময় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা প্রবীণ এই শিক্ষককে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন।

পরে ইউএনও ও গয়নাথ সরকারকে বিভিন্ন শ্রেণিকক্ষ ঘুরে দেখান স্কুল কর্তৃপক্ষ। শুধু তাই নয়, যোগদানের দিনেই ৬ষ্ঠ শ্রেণির অঙ্কের ক্লাশ নেন গয়নাথ সরকার।

গত ১০ আগস্ট যুগান্তরের নগর মহানগর পাতায় ‘এখন রাজমিস্ত্রির জোগালি চাটমোহরের প্রবীণ শিক্ষক!’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়। সংবাদটি দেখে ‘চাটমোহর বিদ্যাপীঠ স্কুল’ কর্তৃপক্ষ গয়নাথ সরকারকে তাদের স্কুলে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

এছাড়া সংবাদ প্রকাশের পর ইউএনও মুসা নাসের চৌধুরী দরিদ্র শিক্ষক গয়নাথ সরকারের বাড়িতে যান। সেখানে শিক্ষকের পরিবারের অবস্থা দেখে তার বড় ছেলের পড়াশোনার জন্য এককালীন আর্থিক অনুদান দেন এবং পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

এদিকে গয়নাথ সরকারের আরও দুই ছেলে ও মেয়ের জন্য ‘চাটমোহর ফাউন্ডেশন’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে রাইজিং কোচিং সেন্টারে ভর্তি করে দেওয়া হয়। এছাড়াও বেশকিছু ব্যক্তি গয়নাথ সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

সংবাদ প্রকাশের কয়েক দিনের মাথায় গয়নাথের জীবনের এমন পরিবর্তনে এলাকার মানুষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন যুগান্তর সংশ্লিষ্টদের প্রতি।

কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে শিক্ষক গয়নাথ সরকার বলেন, যখন রাজমিস্ত্রির জোগালির কাজ করতে গেছি তখন মুখ লুকিয়ে পরিচিতজনদের এড়িয়ে চলেছি। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। প্রায় এক বছরে যে পরিমাণ কষ্ট করেছি তা বলে বোঝানো যাবে না। যুগান্তরে সংবাদ প্রকাশের পর যেভাবে সাড়া পেয়েছি তাতে আমি বহুদিন পর শান্তিতে ঘুমিয়েছি। জীবনে আমার আর চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। এবার আমি আমার সবটুকু দিয়ে শিক্ষার্থীদের গড়ে তুলতে চাই।

বিদ্যাপীঠ স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাহমুদুল হাসান বলেন, শিক্ষক হিসেবে গয়নাথ স্যার খুব জনপ্রিয় ছিলেন। শিক্ষাক্ষেত্রে তার অবদান অনেক। তার হাতে গড়া অনেক শিক্ষার্থী এখন সমাজের অনেক উঁচু জায়গায় অবস্থান করছেন। আর সেই শিক্ষকই কিনা রাজমিস্ত্রির জোগালির কাজ করছিলেন! তার এমন অবস্থা দেখব আমরা ভাবতে পারিনি। আজকে স্যারকে তার ক্লাশ ফিরিয়ে দিতে পেরে খুব আনন্দ লাগছে।

স্কুলের পরিচালক পার্থ দাস বলেন, একজন প্রবীণ শিক্ষক এখন রাজমিস্ত্রির জোগালির কাজ করছেন- যুগান্তরে এমন সংবাদ দেখার পর বিষয়টা আমাদের খুবই ব্যথিত করেছে। পরে আমরা পরিচালকরা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেই গয়নাথ স্যারকে আমরা নিয়োগের মাধ্যমে শিক্ষকের সম্মান ফিরিয়ে দেব। সেই জায়গা থেকেই আমাদের এ উদ্যোাগ। আজ নিজেকে খুব হালকা লাগছে

যুগান্তর ও স্কুল কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে ইউএনও মুসা নাসের চৌধুরী বলেন, একজন শিক্ষকের মর্যাদা দেওয়ার সাক্ষী হতে পেরে আনন্দ বোধ করছি। একজন শিক্ষক তার ক্লাশরুম ফিরে পেলেন। আশা করছি, এই এলাকার শিক্ষার্থীরা প্রবীণ এই শিক্ষকের কাছে অনেক কিছুই পাবেন।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম