Logo
Logo
×

সারাদেশ

দীর্ঘ হচ্ছে কুয়াকাটায় নিখোঁজ জেলের তালিকা, অনিশ্চয়তায় পরিবার

Icon

কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২০২৫, ১০:১৪ পিএম

দীর্ঘ হচ্ছে কুয়াকাটায় নিখোঁজ জেলের তালিকা, অনিশ্চয়তায় পরিবার

কুয়াকাটা সংলগ্ন সমুদ্রে মাছ শিকারে গিয়ে নিখোঁজ জেলেদের তালিকা দিন দিন দীর্ঘ হচ্ছে। এখনো তাদের উদ্ধারে কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। সংশ্লিষ্ট দপ্তরেও নেই সঠিক পরিসংখ্যান। জীবিত না মৃত- এমন অনিশ্চয়তায় পরিবারগুলো পাচ্ছে না মৃত্যুসনদ কিংবা ওয়ারিশ সনদ। ফলে তারা বঞ্চিত হচ্ছে সরকারি সামাজিক সুরক্ষাসহ নানা সুবিধা থেকে।

চলতি বছরের ২৫ জুলাই বঙ্গোপসাগরে ট্রলার ডুবে কলাপাড়ার মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের ইদ্রিস হাওলাদার ও লালুয়ার নজরুল ইসলামসহ ১৫ জেলে নিখোঁজ হন। পরে ১ আগস্ট ইদ্রিস ও ৭ আগস্ট নজরুলের লাশ কুয়াকাটা সৈকতে ভেসে আসে। তবে সঙ্গী অনেক জেলের এখনো কোনো খোঁজ মেলেনি।

শুধু ইদ্রিস কিংবা নজরুল নয়, প্রতি বছর প্রায় ৮৩ হাজার জেলে জীবিকার তাগিদে গভীর সমুদ্রে যায়। বৈরি আবহাওয়া ও দুর্ঘটনায় অনেকেই নিহত বা নিখোঁজ হন। কারও মৃতদেহ তীরে ভেসে আসে, আবার কারও কোনো খোঁজ আর পাওয়া যায় না। তারা আসলেই মারা গেছেন নাকি অন্য দেশে বন্দী, এ বিষয়ে নিশ্চিতভাবে জানা যায় না।

জেলেরা অভিযোগ করেন, নিখোঁজদের উদ্ধারে সরকারি উদ্যোগ নেই। পরিবার বা ট্রলার মালিকরা নিজেরাই অনুসন্ধান চালান। কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর সহযোগিতা যথাযথভাবে পাওয়া যায় না বলেও দাবি তাদের।

২০১৯ সালের ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে মহিপুরের হানিফের ট্রলার ১৯ জেলেসহ নিখোঁজ হয়। ওই ট্রলারের জেলে ছিলেন লালুয়ার সোহেল শরীফ। তার পরিবার এখনো ছেলেকে খুঁজে ফিরছেন।

নিখোঁজ জেলে পরিবারের অভিযোগ, একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে মানবেতর জীবন কাটাতে হচ্ছে। দাদন ও এনজিও কিস্তির বোঝা টানতে গিয়ে কিশোররাও জেলে পেশায় নামছে।

লালুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত হাসন তপন বিশ্বাস বলেন, নিখোঁজ জেলে জীবিত না মৃত- এমন প্রমাণ না থাকায় তাদের পরিবারকে ওয়ারিশ সনদ দেওয়া যায় না। ফলে তারা সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আসতে পারে না।

জেলেরা জানান, নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি ট্রলারে ১৪ ধরনের জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম থাকার কথা। কিন্তু মালিকদের অবহেলা ও অর্থ সংকটে অধিকাংশ ট্রলারেই নেই লাইফ জ্যাকেট, বয়া কিংবা জিএসএম সিস্টেম।

আলীপুর-কুয়াকাটা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আনছার উদ্দিন মোল্লা বলেন, প্রতিটি ট্রলারে জিএসএম সিস্টেম থাকা জরুরি। তবে সরকারিভাবে এ উদ্যোগ নেওয়া হলেও সব ট্রলার এতে যুক্ত হয়নি। অন্য দেশে আটক জেলেদের ফেরাতে সরকারি কূটনৈতিক পদক্ষেপও জরুরি।

মহিপুর রাজা ফিশের মালিক রাজু আহমদ রাজা বলেন, গত ১২ বছরে অন্তত ৫০০ জেলে নিখোঁজ হয়েছে। নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডকে আধুনিক সরঞ্জাম দিয়ে আরও শক্তিশালী করার ব্যাপারে মতামত ব্যক্ত করেন।

কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, এ পর্যন্ত প্রায় ৪০০ ট্রলারে জিএসএম সিস্টেম দেওয়া হয়েছে। তবে জনবল ও সরঞ্জাম সংকটে মনিটরিং করা কঠিন হয়ে পড়ে।

মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আব্দুর রউফ বলেন, নিবন্ধিত জেলে সমুদ্রে নিহত হলে পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হচ্ছে। তবে নিখোঁজ জেলে পরিবার সেই সহায়তা থেকে বঞ্চিত।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম