Logo
Logo
×

সারাদেশ

রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

‘গুপ্ত টেন্ডারে’ কোটি টাকার আম ইজারা মাত্র ১ লাখ ৮০ হাজারে

Icon

রাজশাহী ব্যুরো

প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:১৩ পিএম

‘গুপ্ত টেন্ডারে’ কোটি টাকার আম ইজারা মাত্র ১ লাখ ৮০ হাজারে

ফাইল ছবি

রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (রামেবি) হাজার হাজার গাছ লুটের পর এবার আম ইজারায় টেন্ডার কারসাজির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। বিশ্ববিদ্যালয়টির নতুন ক্যাম্পাসের জন্য অধিগ্রহণকৃত ২০৫ বিঘা জমিতে পাঁচ হাজারের বেশি ফলবান আম গাছ ছিল। গত বছর ডিসেম্বরে রাজশাহী জেলা প্রশাসন এসব জমি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে। এরপর থেকে জমিগুলো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মালিকানায় আসে।

এদিকে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে বিপুল সংখ্যক এসব আম গাছে মুকুল আসে। কিন্তু এক মৌসুমের জন্য এই বিপুল সংখ্যক গাছের আম মাত্র ১ লাখ ৮০ হাজার টাকায় ইজারা দেওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন-ঘনিষ্ঠ একটি সিন্ডিকেটকে। 

অভিযোগ উঠেছে, ‘গুপ্ত টেন্ডারের’ মাধ্যমে এসব আম ফল নিজেদের লোকদের ইজারা পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। ‘গুপ্ত টেন্ডারের’ কারণে প্রকৃত বাগান ব্যবসায়ীরা কেউই বিষয়টি জানতে পারেননি, ফলে টেন্ডারে অংশ নেওয়ার সুযোগও পাননি। এই প্রক্রিয়ায় এক ছাত্র সংগঠনের মহানগর শাখার সাবেক সভাপতি খাইরুল ইসলাম কোটি টাকার আম ফল মাত্র ১ লাখ ৮০ হাজার টাকায় ইজারা পান।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ২৮ মার্চ ২০৫ বিঘা জমির আম ফল ইজারার নোটিশ গোপনে জারি করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রার ডা. হাসিবুল হোসেন। একদিন পর স্থানীয় দুটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় বলে রেজিস্ট্রার দপ্তরের ফাইলে উল্লেখ আছে। তবে ওই দুটি পত্রিকার মধ্যে একটির ২৮ মার্চের কোনো কপি রাজশাহীর সরকারি-বেসরকারি দপ্তরে মেলেনি, এমনকি পত্রিকা অফিসের সংরক্ষিত ফাইলেও পাওয়া যায়নি। অপর পত্রিকার ওই দিনের ই-পেপারের চার পৃষ্ঠায়ও বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশিত হয়নি। দুটি পত্রিকার সংশ্লিষ্ট বিভাগ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

রামেবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, রেজিস্ট্রার হাসিবুল হোসেন ও উপাচার্যের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা নাজমুল হোসেন এ কারসাজির মূল নেপথ্য ব্যক্তি। পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ইজারা নোটিশটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট বা নোটিশ বোর্ডে প্রকাশ করা হয়নি; কেবল রেজিস্ট্রারের ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়েছে।

কর্মকর্তারা আরও বলেন, কোটি টাকার আম পানির দরে ইজারা দেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রাজস্ব হারিয়েছে কোটি টাকা। অন্যদিকে ঘনিষ্ঠ সিন্ডিকেটকে কম মূল্যে ইজারা দিয়ে রেজিস্ট্রারসহ সংশ্লিষ্টরা আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন। উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ তদন্ত করলে কারসাজির রহস্য উদঘাটিত হবে।

রামেবির অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক সিরাজুম মুনীর জানিয়েছেন, ২০৫ বিঘা জমিতে পাঁচ হাজারের বেশি আম গাছ রয়েছে। কিন্তু ইজারা নোটিশে মাত্র ৬০০ গাছ দেখানো হয়। বাস্তবে ইজারাদার সিন্ডিকেটকে সব গাছই দেওয়া হয়েছে। কর্মকর্তাদের অভিযোগ, এখানে বড় ধরনের জালিয়াতি হয়েছে।

গত মৌসুমেও একই সিন্ডিকেট আম ইজারা নেয়। বিপুল আম বিক্রি করে তারা প্রায় কোটি টাকা মুনাফা করে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে ভোজের আয়োজন করা হয়, যেখানে কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও অংশ নেন। যদিও ইজারাদার খাইরুল ইসলাম টাকা দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন।

গুপ্ত টেন্ডার প্রসঙ্গে রামেবির রেজিস্ট্রার হাসিবুল হোসেন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, এ বিষয়ে কোনো তথ্য তিনি দেবেন না; প্রয়োজনে জনসংযোগ দপ্তরে যোগাযোগ করতে হবে। 

তবে জনসংযোগ কর্মকর্তা জানান, তাদের কাছে রেজিস্ট্রার দপ্তর কোনো তথ্য সরবরাহ করেনি।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি রামেবি ক্যাম্পাসে হাজার হাজার গাছ কেটে নেওয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন-ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরাই কোটি টাকার এসব গাছ সাবাড় করেছে। যদিও তদন্ত কমিটি করা হয়েছে, তবে থানায় কোনো অভিযোগ দেওয়া হয়নি। ফলে অভিযুক্তরা এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। 

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম