অল্প বয়সে হৃদরোগের ঝুঁকি এড়াতে যা করবেন
ডা. মো. ফখরুল হাসান
প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:৪৫ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
গত কয়েকদিন ধরে খুব কাছের কিছু মানুষের মৃত্যু সংবাদ পাচ্ছি। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অল্প বয়সে অনেকেই মারা যাচ্ছেন ইদানীং। আপনারাও হয়তো অনেকের এরকম মৃত্যু সংবাদ পাচ্ছেন।
হৃদরোগের মৃত্যু মানে আগে আমরা যেটা ভাবতাম একটু বেশি বয়সে হবে, সেটি এখন কম বয়সী মানুষেরও হচ্ছে।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ২০ বছর বয়সী রোগীও আমরা মেসিভ হার্ট অ্যাটাক হয়ে আসতে দেখেছি। এখন প্রতিনিয়তই ২০-৩০-৪০ বছর বয়স্ক মানুষের হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে।
এ বিষয়ে আমাদের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং কেন হৃদরোগের সংখ্যা ও অন্যান্য নন কমিউনিকেবল ডিজিজ এর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে এ বিষয়ে আলোচনা করতে হবে।
এর পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। তবে আমাদের জীবনযাত্রার জন্য এই ঝুঁকি অনেক বাড়ছে।
১) পারিবারিক ও জন্মগতভাবে অনেকের হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে।
২) আমাদের লাইফস্টাইল- আমরা অনেক বেশি স্ট্রেসফুল জীবনযাপন করছি, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করছি।
৩) ধুমপান, এলকোহল,মাদকসহ সব ধরনের নেশা জাতীয় দ্রব্যের ব্যবহার ও প্রচলন বেড়েছে
৪) অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা: আমাদের আয়ের চেয়ে খরচ বেশি হওয়াতে এবং বিভিন্ন ধরনের দুশ্চিন্তা যুক্ত হওয়ায় আমরা হৃদরোগের ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাচ্ছি।
৫) অস্বাস্থ্যকর খাবার ও অনিয়ন্ত্রিত খাবার।
৬) পরিবেশ দূষণ: বর্তমান সময়ে পরিবেশ দূষণ আমাদের হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক পরিমাণ বাড়িয়ে দিচ্ছে।
৭) ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না রাখা। কখনো কখনো আমরা জানিও না আমাদের ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ আছে।
৮) অতিরিক্ত ওজন, যা শরীরে ক্ষতিকারক চর্বির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।
৯) শারীরিক পরিশ্রম ও ব্যায়াম, খেলাধুলা একদম কমিয়ে দেয়া।
১০) অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন তার মধ্যে কম ঘুমানো ও অতিরিক্ত মোবাইল, টিভি দেখা, স্ক্রিন টাইম বাড়ানো।
১১) নাক ডাকা,স্লিপ এপনিয়াসহ অন্যান্য রোগের কারণ
১২) কিডনি রোগসহ জটিল কিছু শারীরিক রোগ হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে
জেনে নিই কিভাবে হৃদরোগসহ অন্যান্য ক্রনিক ডিজিজের ঝুঁকি কমাবেন
১)স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: ফলমূল, শাকসবজি ও গোটা শস্য বেশি খান।
অতিরিক্ত চর্বি, লবণ (দিনে ৫ গ্রামের কম) ও চিনিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ মাছ খাদ্য তালিকায় রাখুন।
২) নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ:
ছোট রাস্তা কখনোই রিকশায় বা গাড়িতে চড়বেন না, চেষ্টা করবেন হেঁটে চলতে।
প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হালকা ব্যায়াম বা জোরে হাঁটুন।
সপ্তাহে ৫ দিন করে ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলুন।
৩) ওজন নিয়ন্ত্রণ: ওজন কমান, সুস্থ থাকুন।
সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন, বডি মাস ইনডেক্স (বিএমআই) স্বাভাবিক রাখুন।
৪)ধূমপান, এলকোহল সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ:
ধূমপান এবং তামাকজাত দ্রব্য ,এলকোহল সেবন চিরতরে বন্ধ করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
৫) মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ: পর্যাপ্ত ঘুম, মেডিটেশন বা নামাজ বা পছন্দের কাজ করে মানসিক চাপ কমান
আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য বিধান করতে হবে
৬) যদি উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিস থাকে, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন করে তা নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
৭) নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা (লিপিড প্রোফাইল) নিয়মিত পরীক্ষা করুন।
৮) ওষুধ সেবন: হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে বা আক্রান্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ (যেমন: অ্যাসপিরিন, স্ট্যাটিনস, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ ইত্যাদি) সেবন করতে ভুলবেন না
৯) চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
খুব অল্প টাকায় সরকারি ও আধা সরকারি হাসপাতাল ও স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালে হৃদরোগের চিকিৎসা হয়।
বাংলাদেশে এখন উন্নত মানের সকল হৃদরোগের চিকিৎসা হচ্ছে। হার্টের রিং পরানো থেকে শুরু করে সকল চিকিৎসা বাংলাদেশে হয়।
আপনার তীব্র বুকে ব্যথা উঠলে অবশ্যই নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করবেন, অন্যথায় মৃত্যু কখনো কখনো অনিবার্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
লেখক: হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল
