Logo
Logo
×

ডাক্তার আছেন

বিশ্ব রেডিওথেরাপি সচেতনতা দিবস: ক্যান্সার চিকিৎসায় নতুন আন্দোলন

ডা. আরমান রেজা চৌধুরি

ডা. আরমান রেজা চৌধুরি

প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২৫, ১১:২৭ এএম

বিশ্ব রেডিওথেরাপি সচেতনতা দিবস: ক্যান্সার চিকিৎসায় নতুন আন্দোলন

ছবি: সংগৃহীত

২০২৫ সালের ৭ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো বিশ্বজুড়ে পালিত হবে বিশ্ব রেডিওথেরাপি সচেতনতা দিবস (World Radiotherapy Awareness Day – WRAD)। এটি কেবল একটি দিবস নয়, বরং একটি বিশ্বব্যাপী আন্দোলন, যার লক্ষ্য হলো ক্যান্সার চিকিৎসায় রেডিওথেরাপির গুরুত্ব তুলে ধরা এবং এর ব্যাপক প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা।

ক্যান্সার চিকিৎসায় রেডিওথেরাপির গুরুত্ব

ক্যান্সার আজ মানবজাতির অন্যতম বড় স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ। প্রতিবছর লাখো মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়। আধুনিক চিকিৎসায় ক্যান্সার মোকাবিলার তিনটি প্রধান স্তম্ভ হলো—

১. সার্জারি,

২. কেমোথেরাপি,

৩. রেডিওথেরাপি।

এগুলোর মধ্যে রেডিওথেরাপি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। পরিসংখ্যান বলছে, ৫০ শতাংশেরও বেশি ক্যান্সার রোগীর চিকিৎসায় কোনো না কোনো পর্যায়ে রেডিওথেরাপি প্রয়োজন হয়। এটি অনেক সময় রোগ সারিয়ে তোলে, আবার অনেক ক্ষেত্রে ক্যান্সারের বিস্তার রোধ করে বা রোগীর ব্যথা ও কষ্ট লাঘব করে জীবনযাত্রার মান উন্নত করে।

বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে রেডিওথেরাপি অত্যন্ত নিখুঁত, নিরাপদ ও কার্যকর হয়েছে। উন্নত পদ্ধতিতে কেবলমাত্র টিউমারকে লক্ষ্য করে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়, ফলে সুস্থ টিস্যুর ক্ষতি কম হয় এবং রোগীর জীবনমান ভালো থাকে।

বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ

যদিও রেডিওথেরাপি ক্যান্সার চিকিৎসার অন্যতম প্রধান উপায়, তবুও দুঃখজনকভাবে পৃথিবীর অর্ধেকেরও বেশি মানুষের কাছে এই চিকিৎসা পৌঁছায় না। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে পর্যাপ্ত মেশিন, আধুনিক প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষিত জনবল নেই। ফলে বহু রোগী এই চিকিৎসার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হয়।

বাংলাদেশেও একই চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। বর্তমানে রাজধানী ও কিছু বড় শহরে রেডিওথেরাপি সেবা থাকলেও, গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কাছে এ সেবা পৌঁছানো কঠিন। এছাড়া প্রশিক্ষিত ডাক্তার, ফিজিসিস্ট ও টেকনোলজিস্টের ঘাটতি সমস্যাটিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

WRAD-এর উদ্দেশ্য

বিশ্ব রেডিওথেরাপি সচেতনতা দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্যগুলো হলো—

* ক্যান্সার চিকিৎসায় রেডিওথেরাপির অপরিহার্য ভূমিকা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি।

* উন্নত-অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কারণে যারা বঞ্চিত, তাদের জন্য রেডিওথেরাপির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা।

* রোগী, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও নীতি-নির্ধারকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি , যেন তারা রেডিওথেরাপির গুরুত্ব ভালোভাবে বুঝতে পারেন।

* রেডিওথেরাপি পেশার সঙ্গে জড়িত ডাক্তার, মেডিক্যাল ফিজিসিস্ট ও টেকনোলজিস্টদের সম্মাননা ও স্বীকৃতি প্রদান।

বাংলাদেশের জন্য বার্তা

বাংলাদেশের জন্য WRAD একটি সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ দুটোই বয়ে এনেছে। আমাদের সামনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ করণীয় রয়েছে:

১. জেলা পর্যায় পর্যন্ত রেডিওথেরাপি সুবিধা সম্প্রসারণ করা।

২. নতুন নতুন মেশিন স্থাপন ও আধুনিক প্রযুক্তি চালু করা।

৩. পর্যাপ্ত সংখ্যক প্রশিক্ষিত বিশেষজ্ঞ তৈরি ও তাদের ধরে রাখা।

৪. আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা।

৫. নীতি-নির্ধারকদের স্বাস্থ্য বাজেটে ক্যান্সার চিকিৎসাকে অগ্রাধিকার দিতে উদ্বুদ্ধ করা।

সবাইকে যুক্ত হওয়ার আহ্বান

বিশ্ব রেডিওথেরাপি সচেতনতা দিবস শুধু ডাক্তারদের জন্য নয়, এটি সবার জন্য। হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি সংস্থা, মিডিয়া ও সাধারণ জনগণ সবাই এ আন্দোলনের অংশ হতে পারেন। সেপ্টেম্বর মাস জুড়ে নানা আয়োজন করা যেতে পারে—

১. হাসপাতালগুলোতে রোগী-সচেতনতা সেমিনার,

২. গণমাধ্যমে তথ্য প্রচারণা,

৩. চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম, সেমিনার ইত্যাদি,

৪. রোগী ও পরিবারকে নিয়ে আলোচনাসভা।

উপসংহার

ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রেডিওথেরাপি একটি নির্ভরযোগ্য ও কার্যকর অস্ত্র। কিন্তু সবাই এ সেবা পাচ্ছে না—এটাই সবচেয়ে বড় দুঃখ। তাই WRAD আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ক্যান্সারের চিকিৎসায় সমান সুযোগ নিশ্চিত করা মানবতার দায়িত্ব।

বিশ্ব রেডিওথেরাপি সচেতনতা দিবস কেবল একটি তারিখ নয়, এটি একটি কর্মসূচি ও অঙ্গীকার। আসুন, আমরা সবাই একসাথে কাজ করি—যেন বাংলাদেশের প্রতিটি ক্যান্সার রোগী সময়মতো, সঠিক ও নিরাপদ রেডিওথেরাপি সেবা পায়।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম