Logo
Logo
×

অর্থনীতি

দুর্বল ব্যাংক সচল রাখতে টাকার জোগান বন্ধ করতে হবে

হামিদ বিশ্বাস

হামিদ বিশ্বাস

প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১০:১০ পিএম

দুর্বল ব্যাংক সচল রাখতে টাকার জোগান বন্ধ করতে হবে

ফাইল ছবি

আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সচল রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকার জোগান দেওয়া বন্ধ করার শর্ত আরোপ করেছে। বুধবার সফররত আইএমএফ মিশনের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে তারা এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেছে।

আইএমএফ আরও বলেছে, দুর্বল ব্যাংককে টাকার জোগান দিয়ে সচল রাখলে ব্যাংক খাতের প্রতিযোগিতায় ব্যাঘাত ঘটে। এতে ব্যাংকগুলোর বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। পাশাপাশি এ খাতের সমস্যাগুলো প্রলেপের আড়ালে চাপা পড়ে যায়। যা এখন দেখা দিচ্ছে বিষফোঁড়া হয়ে।

টাকা ছাপিয়ে দুর্বল ব্যাংককে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় ধার দিয়ে সচল রাখার ঘটনাকে বিরল বলে অভিহিত করেছে আইএমএফ।

এছাড়াও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন, দুর্বল পাঁচ ব্যাংক একীভূতকরণের অগ্রগতি, ব্যাংক রেজ্যুলেশন অধ্যাদেশ, আগামী জানুয়ারি থেকে চালু হতে যাওয়া ঝুঁকিভিত্তিক সুপারভিশন ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলেছে। মিশনটি বুধবার অর্থমন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও একাধিক বৈঠক করেছে। ওইসব বৈঠকে বাজেট ব্যবস্থাপনাসহ সরকারের আর্থিক পরিস্থিতি ও সার্বিক অর্থনীতি নিয়ে বিভিন্ন তথ্য জানতে চেয়েছে আইএমএফ।

বাংলাদেশকে দেওয়া আইএমএফের ৫৫০ কোটি ডলারের ঋণের ষষ্ঠ কিস্তির অর্থ ছাড়ের শর্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে বুধবার সরকারের সংস্থাটির একটি মিশন ঢাকায় এসেছে। প্রথম দিনেই তারা বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থমন্ত্রণালয়ের সিরিজ বৈঠক করেছে। মিশনটি আগামী ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকায় অবস্থান করে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করবে।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকে সকালে অনুষ্ঠিত বৈঠকে নেতৃত্ব দেন ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার। এ সময় অন্যান্য ডেপুটি গভর্নর, নির্বাহী পরিচালক ও অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে আইএমএফের পক্ষ থেকে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সচল রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ধার দেওয়ার প্রবণতা বন্ধ করতে বলা হয়। বিগত সরকারের সময়ে ব্যাংক খাতে নজিরবিহীন লুটপাটের কারণে কয়েকটি ব্যাংক অতিমাত্রায় দুর্বল হয়ে পড়ে। ওইসব ব্যাংককে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় ধার দিয়ে সচল রাখা হয়। তারপরও ব্যাংকগুলো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। আইএমএফ এ ধরনের ঘটনাকে বিরল বলে অভিহিত করেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কোনো ব্যাংকের টাকা নিতে হলে তাদের কেনা সরকারি বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনুমোদিত বিল বা বন্ড বন্ধক দিয়ে নিতে হবে। কিন্তু দুর্বল ব্যাংকগুলোর এ ধরনের কোনো বিল বা বন্ড ছিল না। তারপরও কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদেরকে বিশেষ বিবেচনায় ধার দিয়েছে। এমনকি ছাপানো টাকায়ও ধার দেওয়া হয়েছে। এসব ধারের ফলে ব্যাংকগুলো সংকট মোকাবিলার কৌশল রপ্ত করতে পারেনি। পাশাপাশি নিজেদের দুর্বলতা মোকাবিলা করে দক্ষতা অর্জন করতে পারেনি। যা ব্যাংকগুলোর জন্য একটি বড় দুর্বল পয়েন্ট হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, দুর্বল ব্যাংকগুলোকে আগে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে টাকার জোগান দেওয়া হয়েছে। এখন দেওয়া হচ্ছে না। পাঁচ ব্যাংক একীভূতকরণের ক্ষেত্রে সরকার থেকে অর্থের জোগান দেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো অর্থের জোগান দিচ্ছে না। তবে আগামীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে হয়তো কিছু খাতে নীতি সহায়তায় ছাড় দিতে হবে। ব্যাংকের ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনায়ই কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ খাতে ছাড় দিতে পারে।

দুপুরের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আরও দুটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওইসব বৈঠকে ব্যাংক খাতের আগামীতে যাতে আর কোনো সংকটে না পড়তে হয় সে বিষয়ে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে এসব বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে। জবাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে।

এদিকে আইএমএফ আগেই জানিয়ে দিয়েছে চলতি বছরের শেষ দিকে অর্থাৎ আগামী ডিসেম্বরে ঋণের ষষ্ঠ কিস্তির অর্থ ছাড় করার কথা ছিল। সেটি তারা আপাতত ছাড় করবে না। কারণ আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচিত সরকার এলে তাদের সঙ্গে কথা বলেই ঋণের কিস্তির অর্থ ছাড়ের সিদ্ধান্ত নেবে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম