প্রতীকী ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
প্রায়ই শিল্পী থেকে শুরু করে নাটকের কলাকুশলীদের মধ্যে শুটিংয়ের সময়
নিয়ে নানা অভিযোগ শোনা যায়। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে শুটিং। এতে বিপাকে পড়েন
শিল্পীরা। মধ্যরাতে নানা প্রতিকূলতা মাথায় নিয়ে ফিরতে হয় বাসায়। শুধু তাই নয়, পারিশ্রমিক
জটিলতাও রয়েছে। নাটকের বাজেটের বড় একটি অংশ প্রধান শিল্পীরা নিয়ে যান।
এ কারণে চরিত্রাভিনেতাদের ভাগ্যে জোটে সামান্য। এ ছাড়া নাটক এখন দুই
তিন চরিত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে যাওয়ায় কাজও পাচ্ছেন না সেসব শিল্পী। তাতে করে পরিবার
নিয়ে কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করতে হচ্ছে তাদের।
এসব অভিযোগের সমাধানে ফেডারেশন অব টেলিভিশন প্রফেশনালস অরগানাইজেশন
(এফটিপিও) নীতিমালাও প্রণয়ন করে। এর মধ্যে ছিল, নাটকের শুটিং শুরু করতে হবে সকাল ১০টায়।
আর শেষ করতে হবে রাত ১১টার মধ্যে। নির্দিষ্ট সময়ের পর শুটিং করার প্রয়োজন হলে প্রতি
ঘণ্টার জন্য অতিরিক্ত সম্মানি দিতে হবে।
অতিরিক্ত সম্মানির আওতায় থাকবেন অভিনয়শিল্পী, চিত্রগ্রাহক, রূপসজ্জাকর,
ক্যামেরাম্যান, লাইট হাউজ, শুটিং হাউজ, লাইটম্যান, প্রোডাকশন ম্যানেজার, প্রোডাকশন
বয়, মাইক্রোবাসের মালিক ও চালক। প্রযোজক, নাট্যকার, পরিচালক এবং শিল্পী-কলাকুশলীদের
চুক্তিপত্র স্বাক্ষরের মাধ্যমে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে অনুষ্ঠান নির্মাণ করার বিষয়েও
জোর দেয় সংগঠনটি। কিন্তু এর কোনোটারই বাস্তব প্রতিফলন ঘটেনি কোনোকালে। সবই চলে ‘ম্যানেজ’
প্রক্রিয়ায়। যে নির্মাতা ও প্রযোজক শিল্পীদের যত ম্যানেজ করতে পারবেন, তারা ততই অনিয়মে
শামিল হচ্ছেন।
এদিকে এসব অনিয়মের কারণেই নতুন করে তৈরি হয়েছে আরেক জটিলতা। রাজধানীর
উত্তরাকে বলা হয় শুটিংনগরী। এখানে প্রায় ডজনখানেক শুটিং হাউজ রয়েছে। এর মধ্যে উত্তরার
৪ নাম্বার সেক্টরেই রয়েছে লাবণী-৪, লাবণী-৫ ও আপন ঘর-২ নামে তিনটি শুটিং হাউজ।
সম্প্রতি এ এলাকায় শুটিংয়ের কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশনা দেয় উত্তরা কল্যাণ
সমিতি সেক্টর-৪। শুটিংয়ে জনসমাগম ও বাসিন্দাদের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরে ২০ জুলাই হাউজ
মালিকদের বাড়ি ভাড়া না দেওয়ার আহ্বান জানায় সমিতি। এ নিয়ে মিডিয়া পাড়ায় বেশ ক্ষোভের
সৃষ্টি হয়। শিল্পী-নির্মাতা থেকে শুরু করে নাটকসংশ্লিষ্ট কেউই এটি মানতে পারেননি। হুট
করেই এসব হাউজে শুটিং বন্ধ হয়ে গেলে অনেক ধারাবাহিক নাটকের কন্টিনিউটিও নষ্ট হবে ভেবে
দুশ্চিন্তাও প্রকাশ করেছেন অনেকে। কেন হঠাৎ করে এমন নিষেধাজ্ঞা?
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মূলত লাবনী শুটিং হাউজের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র
করেই এমন নিষেধাজ্ঞা আসে। হাউজটির মালিক আসলাম হোসেন বলেন, ‘কিছুদিন আগে একজন পরিচালক
রাতের বেলা মশাল নিয়ে একটি মিছিলের দৃশ্য শুট করছিলেন। রাতের বেলায় মশাল জ্বালানোর
ঘটনাটি দেখে আশপাশের মানুষ কিছুটা আতঙ্কিত ও বিস্মিত হয়। তারা বুঝতে পারেনি এটি শুটিং।
কেউ কেউ ভিডিও করে সেটি কল্যাণ সমিতিকে জানায়। সে ঘটনার পর সমিতি থেকে শুটিং হাউজ মালিকদের
ডাকা হয়। পরে তারা চিঠি দিয়ে জানায়, রাস্তায় দিনে হোক বা রাতে শুটিং করা যাবে না।’
এদিকে উত্তরার হাউজগুলোতে গভীর রাত পর্যন্ত শুটিং হয়, এমন অভিযোগ বিভিন্ন
সময় উঠেছে। শুটিংয়ের সময়সীমা মানা হয় না কেন? এ প্রশ্নে আসলাম বলেন, ‘আমরা ৯টা পর্যন্ত
সময়সীমা বেঁধে দিয়েছি। কিন্তু নাটকের কাজ শেষ করতে সময় লেগে যায়। যারা কম বাজেটে কাজ
করেন, তারা এক বা দুই দিনের জন্য সময় নেন, এতে করে ৯টার মধ্যে শুট শেষ করা সম্ভব হয়
না। তখন ২-৩টা পর্যন্ত গড়ায় শুটিং।’
নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি নিয়ে নাটকের বিভিন্ন সংগঠন তাৎক্ষণিক ক্ষোভ প্রকাশ
করেন। পরে বিষয়টি নিয়ে তারা সমাধানে বসেন এবং শর্তসাপেক্ষে শুটিং কার্যক্রমের নিষেধাজ্ঞা
তুলেও নেয় কল্যাণ সমিতি। বৈঠক শেষে সমিতি কর্তৃপক্ষ প্রধান ও শুটিংসংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর
নেতারা এ শর্ত মেনে নিয়ে দ্রুত নিয়মনীতি প্রণয়নের কথা জানান। এর আগেও শুটিংসংক্রান্ত
নিয়মনীতি করে দেওয়া হয়েছিল নির্মাতাদের। একাধিকবার এসব নির্দেশনা দেওয়া হলেও গুরুত্ব
দেননি শুটিংসংশ্লিষ্টরা। তবে এবার নির্মাতা-অভিনয়শিল্পীরা নির্দেশনা মেনে চলবেন বলে
আশা করছেন সংগঠনের নেতারা।
শুটিং হাউজ মালিক সংগঠনের উপদেষ্টা ও ‘আপন ঘর’ শুটিং হাউজের মালিক খলিলুর
রহমান বলেন, ‘আবাসিক এলাকায় কাজ করতে গেলে স্বাভাবিকভাবেই কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
সেদিকেও আমাদের সবার দৃষ্টি থাকবে।’
