Logo
Logo
×

জাতীয়

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে কারা প্রার্থী বা ভোটার হতে পারবেন না

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:১৬ পিএম

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে কারা প্রার্থী বা ভোটার হতে পারবেন না

গণঅভ্যুত্থানের প্রায় দেড় বছর পর আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশন সব রাজনৈতিক দল ও আগ্রহী প্রার্থীদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

গত দেড় দশকে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনগুলো নিয়ে বিতর্ক থাকায় সরকার পরিবর্তনের পর এই নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গন ও সাধারণ ভোটারদের মধ্যে বাড়তি আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। তবে সংবিধান ও নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, সব নাগরিক যেমন প্রার্থী হতে পারবেন না, তেমনি সবার ভোটাধিকারও থাকবে না।

প্রার্থী হওয়ার মৌলিক শর্ত

সংবিধান অনুযায়ী, সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে এবং বয়স কমপক্ষে ২৫ বছর পূর্ণ হতে হবে। তবে শুধু বয়স ও নাগরিকত্ব থাকলেই প্রার্থী হওয়া যায় না—এক্ষেত্রে বেশ কিছু আইনগত বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

কোন কোন ক্ষেত্রে প্রার্থী হওয়া যাবে না

সংবিধান ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও), ১৯৭২ অনুযায়ী—

  • কেউ যদি সরকারি লাভজনক পদে কর্মরত থাকেন, তবে তিনি সংসদ সদস্য পদে প্রার্থী হতে পারবেন না।
  • দুর্নীতির অভিযোগে সরকারি চাকরি থেকে বরখাস্ত, অপসারিত বা বাধ্যতামূলক অবসরপ্রাপ্ত হলে এবং সে ঘটনার পাঁচ বছর না পেরোলে প্রার্থিতা গ্রহণযোগ্য হবে না।
  • সামরিক বা সরকারি চাকরি থেকে অবসর বা পদত্যাগের পর তিন বছর পূর্ণ না হলে নির্বাচনে অংশ নেওয়া যাবে না।
  • সরকার বা সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্তদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য।
  • সরকারের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক থাকলেও সংসদ সদস্য পদে প্রার্থী হওয়া যাবে না।
  • বিদেশি রাষ্ট্র বা সংস্থার অনুদানে পরিচালিত কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পদে কর্মরত ব্যক্তি কিংবা ওই পদ ছাড়ার পর তিন বছর না পার হলে তিনি প্রার্থী হতে অযোগ্য হবেন।
  • ব্যাংক ঋণখেলাপি, ঋণের জামিনদার বা বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, টেলিফোনসহ সরকারি সেবা বিল বকেয়া থাকলেও প্রার্থী হওয়া যাবে না।

নতুন সংশোধনীতে যুক্ত হওয়া বিধিনিষেধ

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আরপিও সংশোধনের মাধ্যমে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্যতার তালিকায় নতুন কিছু শর্ত যুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—

  • আদালত ঘোষিত পলাতক বা ফেরারি আসামি কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
  • সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বা গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকলেও প্রার্থী হওয়া যাবে না।
  • এছাড়া, চলতি নির্বাচনে সরকারি দায়িত্বে থাকা কেউ পদে বহাল থেকে প্রার্থী হতে পারবেন না বলে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে।

ভোটাধিকার কারা হারাবেন

নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত চূড়ান্ত ভোটার তালিকা অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ভোটার সংখ্যা প্রায় ১২ কোটি ৭৭ লাখ। ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী এবং ভোটার তালিকাভুক্ত সবাই ভোট দিতে পারবেন। এমনকি কারাগারে থাকা বন্দিরাও নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন।

তবে ভোটার তালিকা আইন অনুযায়ী, কিছু ক্ষেত্রে ভোটাধিকার বাতিল হতে পারে—

  • উপযুক্ত আদালত যদি কাউকে মানসিকভাবে অপ্রকৃতিস্থ ঘোষণা করে
  • দেউলিয়া ঘোষণার পর দায়মুক্তি না পেলে
  • স্বেচ্ছায় অন্য দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ বা বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করলে

এছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ যাবে এবং তিনি ভোট দেওয়া বা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যোগ্য থাকবেন না। 

দ্বৈত নাগরিকদের ক্ষেত্রে নিয়ম

এই নির্বাচনে প্রথমবারের মতো প্রবাসী বাংলাদেশিরা পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকা সত্ত্বেও কেউ যদি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বজায় রাখেন এবং ভোটার তালিকাভুক্ত থাকেন, তবে তিনি ভোট দিতে পারবেন।

তবে আইন অনুযায়ী, দ্বৈত নাগরিকরা সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। অতীতে এই কারণেই একাধিক প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করেছিল নির্বাচন কমিশন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, নাগরিকত্ব, আদালতের রায় ও আইনি অবস্থানের ভিত্তিতেই ভোটাধিকার ও প্রার্থিতা নির্ধারিত হয়। ফলে যেসব নাগরিক এসব শর্ত পূরণ করবেন না, তারা একদিকে যেমন ভোট দিতে পারবেন না, তেমনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগও হারাবেন।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম