উচ্চ আদালতের রায়
২৭তম বিসিএসের ৬৭৩ জনকে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আদালতের রায়ে প্রথম পর্যায়ে বঞ্চিত ২৭তম বিসিএসে উত্তীর্ণ ৬৭৩ জনকে সিভিল সার্ভিসের বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সুপারিশে তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
নিয়োগপ্রাপ্তদের আগামী ১ জানুয়ারির মধ্যে ক্যাডার নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয় ও বিভাগের নির্ধারিত কার্যালয়ে যোগদানের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। ক্যাডার নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে পরবর্তী কোনো নির্দেশনা না পেলে ওই তারিখেই তিনি যোগদান করবেন। নির্ধারিত তারিখে যোগদান না করলে তিনি চাকরিতে যোগদান করতে সম্মত নন বলে ধরে নেওয়া হবে এবং নিয়োগপত্র বাতিল হয়ে যাবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
নিয়োগের শর্তে বলা হয়, নিয়োগপ্রাপ্তদের লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র অথবা সরকার নির্ধারিত প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে। বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ শেষে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে সরকার যেভাবে স্থির করবে সেভাবে পেশাগত ও বিশেষ ধরনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবেন। ২ বছর শিক্ষানবিশ হিসাবে কাজ করতে হবে। প্রয়োজনে সরকার এ শিক্ষানবিশকাল অনূর্ধ্ব দুই বছর বৃদ্ধি করতে পারবে।
শিক্ষানবিশকালে যদি কোনো প্রার্থী চাকরিতে বহাল থাকার অনুপযুক্ত হয়, সে ক্ষেত্রে কোনো কারণ দর্শানো এবং পিএসসির সঙ্গে পরামর্শ ছাড়াই চাকরি থেকে অপসারণ করা হবে। প্রশিক্ষণ সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন, বিভাগীয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এবং শিক্ষানবিশকাল সন্তোষজনকভাবে শেষ হলে চাকরিতে স্থায়ী করা হবে।
একটি অঙ্গীকারনামা দাখিল করে তাকে প্রশিক্ষণে যেতে হবে। নিয়োগপ্রাপ্তদের একজন জামানতদারসহ ৩০০ টাকা নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে এ মর্মে একটি বন্ড সম্পাদন করতে হবে যে, যদি শিক্ষানবিশকালে অথবা শিক্ষানবিশকাল উত্তীর্ণ হওয়ার ৩ বছরের মধ্যে চাকরি থেকে ইস্তফা দেন, তবে প্রশিক্ষণকালে তাকে প্রদত্ত বেতন-ভাতা, প্রশিক্ষণ উপলক্ষ্যে উত্তোলিত অগ্রিম/ভ্রমণভাতা/অন্যান্য ভাতাদি এবং তার প্রশিক্ষণের জন্য ব্যয়িত সমুদয় অর্থ ফেরত দিতে তিনি বাধ্য থাকবেন।
শর্তে আরও বলা হয়, চাকরি থেকে ইস্তফা দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার তা গ্রহণের আগেই যদি কর্তব্যকাজে অনুপস্থিত থাকেন, তবে তার কাছে সরকারের পাওনাদি আইন ও বিধান অনুসারে আদায় করা হবে। সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।
নিয়োগপ্রাপ্তদের জ্যেষ্ঠতা অক্ষুণ্ন রাখতে ব্যাচের নিয়োগপ্রাপ্তদের প্রথম যে তারিখে নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল, সেই তারিখ থেকে ভূতাপেক্ষভাবে এ নিয়োগ আদেশ কার্যকর হবে। এতে আরও বলা হয়, ব্যাচের প্রার্থীদের প্রথম যোগদানের তারিখ থেকে তাদের ধারণাগত জ্যেষ্ঠতা বজায় থাকবে। তবে এর ফলে তারা কোনো ধরনের বকেয়া আর্থিক সুবিধাদি পাবেন না।
উল্লেখ্য, বিগত বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট সরকারের শেষ সময়ে ২৭তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষায় ৩৫৬৭ জন উত্তীর্ণ হন। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে সেই মৌখিক পরীক্ষার ফল বাতিল করে। ওই বছরের জুলাই মাসে দ্বিতীয়বার মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে দ্বিতীয় সেই মৌখিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়। তাতে উত্তীর্ণ ৩ হাজার ২২৯ জনকে চাকরিতে নিয়োগ দেওয়া হয়।
প্রথম মৌখিক পরীক্ষার ফল বাতিলের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উত্তীর্ণ প্রার্থীরা উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করেন। কিন্তু ২০০৮ সালের ৩ জুলাই হাইকোর্ট প্রথম মৌখিক পরীক্ষার ফল বাতিলের সিদ্ধান্ত বৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়। সেই রায়ের বিরুদ্ধে রিট আবেদনকারীদের ২৫ জন আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করেন। অন্যদিকে ২০৫ জন আবেদনকারীর আরেক রিট আবেদনে হাইকোর্টের আরেকটি বেঞ্চ ২০০৯ সালের ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষা অবৈধ ঘোষণা করে। এর বিরুদ্ধে সরকার তিনটি লিভ টু আপিল করে।
২০১০ সালের ১১ জুলাই তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিমের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ছয় বিচারকের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ২৭তম বিসিএসের প্রথম মৌখিক পরীক্ষা বাতিল বৈধ ঘোষণার হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে। একইসঙ্গে দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষা অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে সরকারের করা লিভ টু আপিল কিছু পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে দেয়।
ওই রায়ের পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে ১ হাজার ১৩৭ জনের পক্ষে ১৪০ জন আলাদা আবেদন করেন ২০২৪ সালে। শুনানি নিয়ে গত বছর ৭ নভেম্বর আপিল বিভাগ তাদের আপিল করার অনুমতি দেয়। শুনানি শেষে যাদের ফল বাতিল করা হয়েছিল, তাদের ৯০ দিনের মধ্যে নিয়োগ দেওয়া নির্দেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত।
