ভোটগ্রহণ ঘিরে ইসির বিশেষ পরিপত্র
৫ দিন বিশেষ টহল সেনাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
গণভোট ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের আগে ও পরে মিলিয়ে পাঁচদিন সেনাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ‘বিশেষ মোতায়েন’ হিসাবে মাঠে থাকবেন। তারা ভোটগ্রহণের তিনদিন আগ থেকে পরের দিন পর্যন্ত নিয়োজিত থাকবেন।
আর আনসারবাহিনী মোতায়েন থাকবে ছয়দিন। ওই সময় বাদে তফসিল ঘোষণার পর থেকে ভোটগ্রহণের পর সাতদিন পর্যন্ত স্বাভাবিক মোতায়েন হিসাবে মাঠে থাকবেন তারা। কেন্দ্রভিত্তিক স্থায়ীভাবেও মোতায়েন থাকবেন। এছাড়া ভোটের শেষ পর্যন্ত মোবাইল টহল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সও কাজ করবে। এসব বিষয় উল্লেখ করে বৃহস্পতিবার আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিশেষ পরিপত্র জারি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে লিড মন্ত্রণালয় হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
পরিপত্রে বলা হয়, ১২ ফেব্রুয়ারি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট হবে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার পূর্বশর্ত হিসাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট বাহিনীগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আর সশস্ত্র বাহিনী ইতোমধ্যে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তায় মোতায়েন আছে এবং নির্বাচনের সময়ও মোতায়েন থাকবে।
সশস্ত্র বাহিনীকে দেওয়া ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিষয়ে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ, বাহিনী ও সংস্থার প্রধান ও প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে একাধিক মতবিনিময় সভা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় মাঠপর্যায়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এ দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পরিপত্রে সার্বিক আইনশৃঙ্খলার পরিবেশ শান্তিপূর্ণ ও স্বাভাবিক রাখা, সব দল ও প্রার্থীর বিধি অনুযায়ী নির্বিঘ্ন কার্যক্রম নিশ্চিত করা এবং ভোটাররা যেন নিঃশঙ্কচিত্তে ও স্বস্তির সঙ্গে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে ভোটকেন্দ্র, নিয়ন্ত্রণকেন্দ্রসহ সংশ্লিষ্ট স্থাপনা ও অফিসের নিরাপত্তা জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচনি সামগ্রী ও ব্যালট (পোস্টাল ব্যালটসহ) পরিবহণ ও সংরক্ষণে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, গুজব ও অপতথ্যের বিস্তার রোধ এবং জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ, গোত্র-নির্বিশেষে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথাও পরিপত্রে বলা হয়েছে। পাশাপাশি পঙ্গু, আহত, বয়স্ক, অসুস্থ ও অন্তঃসত্ত্বা ভোটারদের জন্য সহনীয় চলাচল ও ভোটদানের পরিবেশ নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ইলেকটোরাল ইনকোয়ারি ও অ্যাডজুডিকেশন কমিটি, বিচারিক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সার্ভিল্যান্স, মনিটরিং, আইনশৃঙ্খলা কমিটিসহ মাঠপর্যায়ে কর্মরত সব কমিটি ও কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় সহায়তা ও নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
পরিপত্রে বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাপনায় নির্বাচন কমিশনে স্থাপিত সমন্বয় সেল নিয়মিত যোগাযোগ ও সমন্বয় বজায় রাখবে। আচরণবিধি অনুযায়ী নির্বাচন-পূর্ব ও নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় লিড মন্ত্রণালয় হিসাবে পরিকল্পনা প্রণয়ন, সমন্বয় ও তদারকি করবে। একই সঙ্গে বাহিনীগুলোর চেইন অব কমান্ড অক্ষুণ্ন রেখে আন্তঃবাহিনী সমন্বয় নিশ্চিত করা হবে।
এতে আরও বলা হয়, সংবেদনশীলতা, ভৌগোলিক অবস্থান ও নিরাপত্তাঝুঁকি বিবেচনায় কেন্দ্রগুলোয় বিভিন্ন বাহিনীর সমন্বয়ে কার্যকর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হবে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার রোধ এবং নির্বাচনে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী যে কোনো কর্মকাণ্ড ও সন্ত্রাসী তৎপরতা প্রতিরোধে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হবে। ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে বিশেষ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সম্ভাব্যতা অনুযায়ী কেন্দ্রগুলোয় সিসিটিভি কাভারেজ নিশ্চিত করতে হবে। মাঠে ব্যবহৃত আইপি এনাবলড বডি ক্যামেরার লাইভ ফিড নির্বাচন কমিশনের সমন্বয় সেলে প্রদর্শনের ব্যবস্থাও রাখতে হবে।
এছাড়া নির্বাচন কমিশন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ, বিটিআরসি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত আইনশৃঙ্খলা ও অপতথ্য মনিটরিং সেল তফসিল ঘোষণার দিন থেকে ভোটের পরবর্তী দুইদিন কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার নিরাপত্তা : রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত চিঠি স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছে পাঠানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ১১ ডিসেম্বর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়সূচি জারি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্নের লক্ষ্যে রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়গুলোর নির্বাচন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ নথি, নির্বাচনি মালামাল, যন্ত্রপাতি সংরক্ষিত রয়েছে। নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় ওই অফিসগুলোয় সংরক্ষিত গুরুত্বপূর্ণ নথি, নির্বাচনি মালামালের সুরক্ষাসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক মর্মে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত দিয়েছে।
