বীর মুক্তিযোদ্ধা আক্কাছের প্রত্যাশা
ভবিষ্যৎ সরকার স্বাধীনতা বিরোধীদের প্রশ্রয় দেবে না
গৌরবময় মহান মুক্তিযুদ্ধ
আসাদুজ্জামান ফারুক, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ)
প্রকাশ: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফখরুল আলম আক্কাছ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ভৈরবের বীর মুক্তিযোদ্ধা ফখরুল আলম আক্কাছ বলেছেন, ভবিষ্যতের নির্বাচিত সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখবে এবং স্বাধীনতা বিরোধীদের প্রশ্রয় দেবে না-এই প্রত্যাশা করেন তিনি। ১৯৭১ সালে হাজি আসমত কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। একাত্তরের ২৫ মার্চ গভীর রাতে পাকসেনারা এ দেশে গণহত্যা শুরু করে। এর প্রতিবাদে তিনি ভৈরব শহরে ছাত্রদের নিয়ে সভা ও মিছিল করেন। তখনকার টগবগে যুবক এই ছাত্রনেতা কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে ৩০ মার্চ ভৈরব থেকে ভারতের আগরতলায় চলে যান। মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং শুরু না হওয়ায় দুদিন পর বন্ধুদের নিয়ে ভৈরবে ফিরে আসেন।
১৪ এপ্রিল পাকসেনারা ভৈরব শহর দখল করে নেয়। এদিন পানাউল্লার চর নামক স্থানে খেয়াঘাটে ৩-৪শ নিরীহ মানুষকে গুলি করে হত্যা করে পাকবাহিনী। সেই সঙ্গে তাদের গুলিতে কয়েকশ মানুষ আহত হন। ফখরুল আলম আক্কাছ এদিন নারকীয় হত্যাকাণ্ডের আধা ঘণ্টা আগে নৌকায় নদী পার হয়ে তৎকালীন রায়পুরা থানার সররাবাদ গ্রামে তার বোনের বাড়িতে আশ্রয় নেন। মে মাসের শেষদিকে ট্রেনিং নিতে তিনি পুনরায় ভারতে চলে যান।
আক্কাছ জানান, ভারতের দেরাদুন এলাকায় দেড় মাস ট্রেনিং শেষে গ্রুপ কমান্ডার ভৈরবের ছাত্রনেতা ফয়সাল আলমের নেতৃত্বে তিনিসহ একদল মুক্তিযোদ্ধা ভারত থেকে অস্ত্র ও হাতবোমাসহ এ দেশে প্রবেশ করে। যুগান্তরকে তিনি বলেন, ভারত থেকে অস্ত্রশস্ত্র কাঁধে নিয়ে রাতের বেলায় ভৈরব আসার পথে প্রথমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নন্দনপুর এলাকায় পৌঁছালে পাক বাহিনীর সদস্যরা বৃষ্টির মতো গুলি ছুড়তে থাকে। তারা পালটা গুলি ছুড়ে পালাতে সক্ষম হলেও ভৈরবের বীর মুক্তিযোদ্ধা আশুরঞ্জন দেব পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এ সময় পাক সেনারা তাকে ধরে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। যা পরে জানা যায়। ২৮ জুন ভৈরবের কুখ্যাত রাজাকার মোমতাজ পাগলাকে মুক্তিযোদ্ধারা গ্রেনেড হামলায় হত্যা করে। এই হত্যার অভিযানে নেতৃত্ব দেন তিনি। অপারেশন করেছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহন, আতিক ও নুরু মিয়া। তিনি বলেন, যুদ্ধ চলাকালে একাধিক অপারেশন করেছেন তিনি। কয়েকজন পাক সেনাকে হত্যা করেছেন বলে দাবি করেন তিনি। ভৈরবে অবস্থানরত হানাদার বাহিনী ১৯ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করে। এদিন আক্কাস অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সঙ্গে ভৈরব শহরে প্রবেশ করেন। বিজয়ের আনন্দে নারী-পুরুষ, ছাত্র-জনতা সেদিন মিছিল করেন।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তিনি সরকারের অন্যায়-অপরাধের প্রতিবাদ করেন। ভৈরবের সন্তান ও আওয়ামী লীগ নেতা জিল্লুর রহমান মন্ত্রী হলে তার দলের নানা অপকর্মের প্রতিবাদ করেন তিনি। ১৯৯৮ সালে তিনি ভৈরব পৌরসভার চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়ে বিজয়ী হন। পরে আরও দুই মেয়াদে নির্বাচিত হয়ে ২০১২ সাল পর্যন্ত তিনি মেয়রের দায়িত্ব পালন করে ভৈরব শহরের ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন।
ফখরুল আলম আক্কাছ বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত তিনি অবহেলিত নেতা ছিলেন। তিনি বলেন, এক সময় ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও পরে আওয়ামী লীগের নেতা হলেও ফ্যাসিবাদের রাজনীতি আমি পছন্দ করতাম না। তিনবারের পৌর চেয়ারম্যান ও মেয়র হয়েও তিনি কোনো দিন দুর্নীতি করেননি বলে জানান।
তিনি বলেন, যুদ্ধের সময় প্রতি রাতে মনে হতো পরদিন বেঁচে থাকব কিনা। সব মুক্তিযোদ্ধা এমনটি মনে করেই যুদ্ধ করেছেন। কিছু পাওয়ার প্রত্যাশায় মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করেননি। বিগত ১৫ বছর শেখ হাসিনা তার আত্মীয়স্বজনসহ দলের নেতাকর্মীদের দুর্নীতি-লুটপাট থেকে বিরত রাখতে পারেননি, যা ছিল দুঃখজনক। যে কারণে গণ-অভ্যুত্থানে হাসিনাকে পালাতে হলো। তিনি বলেন, আমরা একটি গণতান্ত্রিক দেশ চেয়েছিলাম। বিগত সরকার বিরোধী দলকে নির্যাতন করেছে, মামলা-জেল-জুলুম দিয়েছে, যা ছিল ভুল। ভবিষ্যৎ সরকার কোনো স্বাধীনতাবিরোধীকে প্রশ্রয় দেবে না-এই দাবি তার।
