ভারতে ২২ এনআইডিধারী ব্রাজিলিয়ান মডেল নন, একজন হেয়ারড্রেসার
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:১২ পিএম
ব্রাজিলের বাসিন্দা নাম লারিসা নেরি। ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ভারতের কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর সাম্প্রতিক অভিযোগের পর ‘ব্রাজিলিয়ান মডেল’ নামে যার ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, তিনি আসলে এক হেয়ারড্রেসার—মডেল নন। আট বছর আগে তোলা সেই ছবিটি ব্যবহার করে ভারতে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তুলেছেন রাহুল গান্ধী।
ব্রাজিলের বাসিন্দা ওই নারীর নাম লারিসা নেরি। একটি ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, বন্ধুরা, আমার পুরোনো একটা ছবি ব্যবহার করা হচ্ছে। আমি তখন ১৮ বা ২০ বছরের মতো ছিলাম। জানি না এটা কী, নির্বাচন না ভোট সংক্রান্ত কিছু… আর সেটা ভারতে! ওরা আমাকে ভারতীয় হিসেবে দেখিয়ে মানুষ ঠকাচ্ছে! কী পাগলামি এটা! আমরা আসলে কোন দুনিয়ায় বাস করছি?
লারিসা আরও জানান, ছবিটি ভাইরাল হওয়ার পর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, একজন সাংবাদিক আমাকে ফোন করেছিলেন—সেলুনে কাজ, পেশা এসব নিয়ে জানতে চেয়েছিলেন। আমি উত্তর দিইনি। তারপর তিনি ইনস্টাগ্রামে কল করেন। এখন আবার শহরের অন্য প্রান্তের এক বন্ধু আমার ছবিটা পাঠিয়ে বলছে, তুমি তো ভারতে বিখ্যাত হয়ে গেছো! বিশ্বাসই হচ্ছে না।
তার ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে লারিসা লিখেছেন, ওয়াও, অবিশ্বাস্য! আমি এখন ভারতে রহস্যময় ব্রাজিলিয়ান মডেল হিসেবে বিখ্যাত!
তদন্তে জানা গেছে, ছবিটি স্টক ফটোগ্রাফি ওয়েবসাইট আনস্প্ল্যাশ ও পেক্সেলস থেকে বিনামূল্যে ডাউনলোড করা যায়। ছবিটির শিরোনাম ছিল ‘woman wearing blue denim jacket’। ছবিটির আলোকচিত্রী মাতেউস ফেরেরো, যিনি ব্রাজিলের বেলো হরিজন্তে শহরের বাসিন্দা। এই দুটি সাইট থেকে ছবিটি ইতিমধ্যে ৪ লাখেরও বেশি বার ডাউনলোড হয়েছে।
ব্রাজিলের সংবাদ সংস্থা আওস ফটোস জানিয়েছে, লারিসা নেরি মডেল নন; তিনি একজন হেয়ারড্রেসার। বন্ধুর অনুরোধে ছবিটির জন্য পোজ দিয়েছিলেন, এবং আলোকচিত্রী ফেরেরো তার অনুমতিতেই সেটি অনলাইনে প্রকাশ করেন। এরপর থেকেই ছবিটি নানা সংবাদমাধ্যমে প্রতীকী ছবি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
ফেরেরো জানান, ছবিটি ভাইরাল হওয়ার পর লাখো মানুষ তার সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্টে হানা দেয়, যার ফলে তিনি নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলতে বাধ্য হন। তিনি বলেন, অনেকে ভেবেছে আমি ওই মেয়েটিই। হ্যাকাররা আমার একাউন্টে ঢুকে নানা রকম মন্তব্য করতে থাকে। মানুষ বুঝতেই পারেনি এটা একটা ফ্রি ফটো।
ঘটনার সূত্রপাত রাহুল গান্ধীর এক সংবাদ সম্মেলনে। সেখানে তিনি অভিযোগ করেন, হরিয়ানা রাজ্যের রাই আসন থেকে একই নারীর ছবি ২২টি ভোটার আইডিতে ব্যবহৃত হয়েছে।
রাহুল গান্ধী বলেন, এই নারী ১০টি বুথে ভোট দিয়েছেন, তার নাম সীতা, সুইটি, সরস্বতী, রেশমি, বিমলা ইত্যাদি হিসেবে রয়েছে। এটা কেন্দ্রীয়ভাবে করা হয়েছে, বুথ পর্যায়ে নয়। নির্বাচন কমিশন চাইলে এক সেকেন্ডেই ডুপ্লিকেট ভোটার মুছে দিতে পারে, কিন্তু তারা তা করছে না—কারণ তারা বিজেপিকে সাহায্য করছে।
তিনি আরও বলেন, আমি ভারতের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও নির্বাচন কমিশনকে প্রশ্ন করছি এবং আমাদের কাছে শতভাগ প্রমাণ রয়েছে যে পরিকল্পিতভাবে কংগ্রেসের জয় পরাজয়ে পরিণত করা হয়েছে।
এদিকে নির্বাচন কমিশনের এক সূত্র জানায়, কংগ্রেসের ভোটগ্রহণ এজেন্টরা ভোটের দিনে এমন অনিয়মের বিষয়ে আপত্তি তুলেছিল কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
অন্যদিকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু রাহুল গান্ধীর অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, তিনি সবসময় ভুয়া ইস্যু তৈরি করেন। এখন ভোট হচ্ছে বিহারে, অথচ গল্প বলছেন হরিয়ানা নিয়ে। বিহারে আর কিছু না পেয়ে এখন দৃষ্টি সরিয়ে নিচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, সার্ভে ও এক্সিট পোলের ফলাফল সবসময় বাস্তব ভোটের সঙ্গে মিলে যায় না। এটা নতুন কিছু নয়। আমরা কখনও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তুলিনি।


