Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

তাখতে সোলায়মান

ইরানের ৩ হাজার বছরের রহস্যময় ঐতিহাসিক নিদর্শন

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৪৯ এএম

ইরানের ৩ হাজার বছরের রহস্যময় ঐতিহাসিক নিদর্শন

ইরানের পশ্চিম আজারবাইজানের দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত তাখতে সোলায়মান। ছবি: মেহের নিউজ

ইরানের পশ্চিম আজারবাইজানের দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত তাখতে সোলায়মান—৩ হাজার বছরেরও বেশি পুরনো এক প্রত্ননিদর্শন, যার বহু রহস্য আজও উন্মোচিত হয়নি। প্রাচীন পারস্যের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসে অমূল্য এই স্থাপনা একসময় ছিল সাসানিদ যুগের জরথ্রুস্ট্রী উপাসনার অন্যতম কেন্দ্র।

ইউনেস্কো তালিকাভুক্ত প্রত্নস্থল

২০০৩ সালে তাখতে সোলায়মানকে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সাসানিদ যুগের অগ্নিমন্দির, দুর্গ এবং স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন সংরক্ষণের স্বীকৃতি হিসাবে এ তালিকাভুক্তি এর সাংস্কৃতিক গুরুত্বকে আরও দৃঢ় করেছে।

প্রাচীন মন্দিরসমূহ: আজারগোশাস্প ও আনাহিতা 

প্রাচীন এ স্থানটিকে কখনো জোরোস্টারের জন্মস্থান বলে মনে করা হতো। শিক্ষাকেন্দ্র ও উপাসনাস্থল হিসাবে ব্যবহৃত এ অঞ্চল ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দে বাইজেন্টাইন সম্রাট হেরাক্লিয়াসের আক্রমণে ধ্বংস হয়। 

এ এলাকার প্রধান স্থাপনাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো আজারগোশাস্প অগ্নিমন্দির—জরথ্রুস্ট্রী ধর্মীয় আগুনের উপাসনাকে কেন্দ্র করে নির্মিত এই মন্দিরে রয়েছে কেন্দ্রীয় প্রাঙ্গণ ও পারিপার্শ্বিক কক্ষসমূহ। দেয়ালে খোদাই করা রয়েছে জরথ্রুস্ট্রী পুরাণের নানা দৃশ্য। 

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হলো আনাহিতা মন্দির, যা পার্থিয়ান যুগে পানির ও উর্বরতার দেবী আনাহিতার উদ্দেশে নির্মিত। এর দেয়ালে সংরক্ষিত ফ্রেস্কোচিত্রে উঠে এসেছে প্রাচীন পারস্য ইতিহাস ও পুরাণের চিত্রায়ণ।

রহস্যময় ‘দৈত্য কারাগার’

স্থাপনার প্রায় তিন কিলোমিটার পশ্চিমে রয়েছে শঙ্কু আকৃতির এক পর্বত—‘দৈত্য কারাগার’ যা ‘প্রিজন অব সোলোমন’ নামে পরিচিত। প্রাচীন আগ্নেয়গিরির ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়ায় গঠিত এ পাহাড়ের ভেতরে রয়েছে গভীর গর্ত, যাকে ঘিরে প্রচলিত আছে নানান শ্রুতিকথা। 

স্থানীয়দের বিশ্বাস, রাজা সোলায়মান অবাধ্য এক দানবকে এ গর্তে বন্দি করেছিলেন। পাহাড়ের চূড়ায় সারুজ মর্টার দিয়ে নির্মিত একটি স্থাপনা রয়েছে, যেখানে প্রবেশ করলে প্রাণহানির আশঙ্কা আছে বলে মনে করেন অনেকে। সাসানিদ যুগে এ স্থানটি বলিপ্রদান ও প্রার্থনার স্থানও ছিল বলে ঐতিহাসিক সূত্রে জানা যায়। 

হাজার বছরের খনিজ স্তর জমে এই পাহাড়ের সৃষ্টি। গর্তের নিচে একসময় ছিল লবণ ও সালফারে ভরা হ্রদ, যা শুকিয়ে গর্তের বর্তমান রূপ নিয়েছে। বর্তমানে এটি পর্যটক ও পর্বতারোহীদের কাছে এক আকর্ষণীয় ভূতাত্ত্বিক বিস্ময়।

ভাসমান দ্বীপের রহস্য

তাখতে সোলায়মান থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে আরেকটি বিস্ময়—‘ভাসমান দ্বীপ’-সমৃদ্ধ একটি হ্রদ। প্রায় ১১২ মিটার গভীর এই হ্রদে খনিজসমৃদ্ধ পানির উপর ভাসমান দ্বীপটি তৈরি হয়েছে ঘন উদ্ভিদগুচ্ছ ও আঞ্চলিক লতাগুল্ম দিয়ে। সারা বছরই দ্বীপটি সবুজ থাকে এবং বাতাসের সঙ্গে ধীরে ধীরে স্থান পরিবর্তন করে।

প্রাকৃতিক এই ঘটনাটি যেমন বৈজ্ঞানিক কৌতূহলের বিষয়, তেমনি স্থানীয় লোককথাতেও এর উল্লেখ রয়েছে। যদিও সোলায়মানের আংটি বা গুপ্তধনের গল্পগুলো লোকবিশ্বাসের অংশ, হ্রদের ভাসমান দ্বীপটি বাস্তব এবং বহু পর্যটক তার দেখা পেয়েছেন।

ইরানের অনন্য ঐতিহ্য

তাখতে সোলায়মান শুধু প্রত্নতাত্ত্বিক নয়, প্রাকৃতিক ও লোককথার মিশেলে এটি ইরানের অন্যতম আকর্ষণীয় ঐতিহ্যস্থল। প্রাচীন পারস্যের ধর্মীয়, স্থাপত্যিক ও ভূতাত্ত্বিক ইতিহাসের এক অসাধারণ উদাহরণ হিসেবে আজও এটি গবেষক ও ভ্রমণপিপাসুদের মুগ্ধ করে চলছে।

সূত্র: মেহের নিউজ এজেন্সি

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম